রাজধানীর কাঁঠালবাগান ঢাল থেকে বাংলামোটর এসে গাড়ির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন এক গৃহিণী। তিনি ফার্মগেট যাবেন দরকারি জিনিস কিনতে। কিন্তু পথে নেমে দেখেন প্রচন্ড যানজট, ঠায় দাঁড়িয়ে আছে সব গাড়ি। তখন তিনি মূল সড়কের পাশেই অপেক্ষাকৃত উঁচু আরেকটি রাস্তায় উঠে পড়েন। সেই রাস্তারই এক পাশ দিয়ে সারিবদ্ধভাবে রাখা চেয়ারের একটিতে বসে পড়েন। এরপর গাড়ি নয় রাস্তাটিই চলতে শুরু করে। পনের মিনিটের মধ্যে তাকে ফার্মগেট পৌঁছে দেয় চলন্ত সড়কটি। এটি কোনো সাইন্স ফিকশন সিনেমার গল্প নয়। রাজধানীতে যানজট নিরসনে বাস্তবে এ ধরনের ‘চলন্ত রাস্তা’ নির্মাণের চিন্তাভাবনা করছে সরকার। ভাবনাটি এসেছে অবশ্য একজন চলচ্চিত্র পরিচালকের মাথা থেকেই। তবে ওই পরিচালকের এই উদ্ভাবনী ভাবনাটি ইতিবাচকভাবে নিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। তারা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে এ বিষয়ে একটি চিঠি দিয়েছে।
চিঠির বিষয়টি হচ্ছে : ঢাকা শহরের যানজট নিরসনে চলচ্চিত্র পরিচালক আবু সাইয়ীদ কর্তৃক উদ্ভাবিত ‘চলন্ত রাস্তা’ নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই প্রসঙ্গে। আর এজন্য গুলশান পার্ককে বাছাই করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন গুলশান পার্কে আবু সাইয়ীদ কর্তৃক উদ্ভাবিত ‘চলন্ত রাস্তা’র পাইলটিং করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর গত ১৮ আগস্ট এই চিঠিটি পাঠান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গভর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিটের পরিচালক (গবেষণা) মোহাম্মদ আলী নেওয়াজ রাসেল।
তিনি বলেন, রাজধানীতে যানজট নিরসনে আমরা বিভিন্ন উদ্ভাবনী ধারণা পর্যালোচনা করে দেখছি। চলচ্চিত্র পরিচালক আবু সাইয়ীদের ‘চলন্ত রাস্তা’র উদ্ভাবনী আইডিয়াটি সেরকম একটি। গুলশান পার্কে এটি যদি সঠিকভাবে কাজ করে, তবে রাজধানীর যেসব এলাকায় যানজট বেশি, সেখানে এ ধরনের ‘চলন্ত রাস্তা’ নির্মাণের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হবে। পরিকল্পনা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এই কর্মকর্তা জানান, মূল সড়কের চেয়ে এটি একটু উঁচু হবে। ফুটপাথ ধরে চলন্ত রাস্তাটি রিকশা বা হাঁটার গতিতে চলতে থাকবে। এর ওপর বসার জন্য আসনও থাকবে। এটি হবে অনেকটা বিমানবন্দরে চলমান এসকেলেটরের মতো যার ওপর দাঁড়ানো বা বসে থাকা মানুষকে কাছাকাছি গন্তব্যে নিয়ে যাবে।
জানা গেছে, চলচ্চিত্র পরিচালক আবু সাইয়ীদ তার এই ‘চলন্ত রাস্তা’র ধারণাটি বিআরটিএ, ডিটিসিএ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিবের কাছে উপস্থাপন করেন। তিনি তার এই উদ্ভাবনী ধারণাটি বাস্তবায়নের জন্য ‘স্টার্টআপ বাংলাদেশ আইডিয়া প্রজেক্ট’ থেকে অনুদান প্রাপ্তির নিশ্চয়তাও পেয়েছেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ‘চলন্ত রাস্তা’র এই ধারণাটি নিয়ে বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে এশাধিক বৈঠক করে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি বিষয়ক) আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে গত ২৭ জুন অনুষ্ঠিত সভায় কোনো পার্ক/বিনোদন কেন্দ্রে ‘চলন্ত রাস্তা’র উদ্ভাবনটি পাইলটিং করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। গুলশান পার্ককে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান হিসেবে নির্বাচন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানিয়েছে, ৫০০ মিটারের এই রাস্তাটি নির্মাণে ব্যয় হতে পারে সাড়ে ৭ কোটি টাকা। জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘চলন্ত রাস্তা’র বিষয়ে আমাদেও কোনো ধারণা নেই। এরপরও রাজধানীর যানজট নিরসনে যে কোনো ধরনের উদ্ভাবনী আইডিয়াকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে এ ধরনের প্রকল্প গ্রহণের আগে আমাদের যে গবেষণা বিভাগ আছে তারা এর সম্ভাব্যতা খতিয়ে দেখবে। বিদেশে এ ধরনের রাস্তা কীভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে অভিজ্ঞতা নেওয়ারও বিষয় আছে। এ ছাড়া পার্ক বা বিনোদন কেন্দ্রে যে ‘চলন্ত রাস্তা’ কাজ করবে, সেটি মূল রাস্তায় বাস্তবায়ন সম্ভব হবে কি-না সেই বিষয়টিও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে হবে।
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।