জুমবাংলা ডেস্ক : মঙ্গলবার দুপুর থেকে মিয়ানমার সীমান্তে ফের বোমা হামলা চালানো হয়েছে। অসংখ্য বোমা বিস্ফোরণের বিকট শব্দে কাঁপছে তুমব্রু সীমান্ত অঞ্চল। পর্যায়ক্রমে ৩ দিন ধরে মিয়ানমার সেনা বাহিনীর এই অভিযান চলছে ৮ কিলোমিটার এলাকায়। রবিবার একটি বিমান ও একটি হেলিকপ্টারে হামলা চালানো হলেও তারা শক্তি সঞ্চার করে মঙ্গলবার দুটি হেলিকপ্টার ও একটি জেট বিমান নিয়ে আরাকান আর্মির উদ্দেশে ওয়ালিদং পাহাড়ে বোমা হামলা করেছে। তিনদিন ধরে মিয়ানমার সেনা ও বিদ্রোহী সদস্যদের (এএ) মধ্যে যুদ্ধ থামছে না দেখে আতঙ্কে রয়েছে সীমান্তে বসবাসকারীরা। ভারি অস্ত্রের মর্টালশেলের আওয়াজে ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তবাসী উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছে।
সূত্র জানায়, সোমবার বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর একটি হেলিকপ্টার অবতরণ করে ঢেকিবনিয়ায়। মঙ্গলবার দুপুরে আরও একটি হেলিকপ্টার ও একটি জেট বিমান এসে এক সঙ্গে বোমা-মর্টারশেল হামলা চালিয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত টানা এক ঘণ্টা বিমান ও হেলিকপ্টারে এ হামলা চালায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী।
জেট বিমান ও হেলিকপ্টার থেকে নিক্ষেপকৃত বোমা বিস্ফোরণে সীমান্ত এলাকা তুমব্রুর আকাশ ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। বিমান ও হেলিকপ্টার চলে যাবার পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত থেমে থেমে ভারি অস্ত্রের গোলাগুলি চলছিল বলে সীমান্তের একাধিক সূত্রে জানা গেছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী ৮ কিমি পাহাড়ের আড়ালে এবং আরাকান আর্মি ওয়ালিদং পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থান করে গুলিবিনিময় করছে।
বিজিবি জনসাধারণের নিরাপত্তার খাতিরে সীমান্তের জিরো পয়েন্টে লোকজন আসা-যাওয়া বন্ধ রেখেছে। সূত্র জানায়, নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তের ওপারে ওয়ালিদং ও কক্যদইঙ্গা পাহাড়ে বিদ্রোহী গ্রুপ আরাকান আর্মির (এএ) ঘাঁটি রয়েছে মর্মে সেনাবাহিনীর কাছে তথ্য রয়েছে। সেখানে তুমব্রু বাইশপাড়ি থেকে বরাবর মিয়ানমারে ৮ কিলোমিটার পর্যন্ত সেনাবাহিনী সড়ক নির্মাণ করেছে।
এই স্থানটিকে মিয়ানমার সরকার ৮ কিমির হিসেবে চিহ্নিত করে থাকে। ওয়ালিদং পাহাড়ের মিয়ানমারের কাঁটাতারের ঘেরার পর সীমান্তের জিরো পয়েন্টে গহীন অরণ্যে আরাকান আর্মির আস্তানা আছে মর্মে সন্দেহ করছে দেশটির সরকারী বাহিনী। এজন্য ওপর থেকে বিমান ও হেলিকপ্টারে দেশটির অভ্যন্তরে ওয়ালিদং ও কক্যদইঙ্গা পাহাড়ে বোমা নিক্ষেপ করে পাহাড় দুটি ধ্বংস করে দিচ্ছে।
ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে সেনাবাহিনীর ৮ কিলোমিটার নামের এলাকায় জেটবিমান এবং হেলিকপ্টারে বোমা-মর্টারশেল হামলা ঘটনায় ধোঁয়ায় কিছু দেখা যাচ্ছিল না। মিয়ানমার থেকে ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের ঠেলে পাঠিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশে। জিরো পয়েন্টে থাকা রোহিঙ্গাদের আরও ভিতরে বা তাদের বাড়ি-ঘরে ফিরিয়ে নেয়ার বাংলাদেশের দাবি উপেক্ষা করে চলেছে মিয়ানমার।
সীমান্ত এলাকায় গুলি চালাতে হলে উভয় দেশের বৈঠকে একমত পোষণ করতে হয়। বাংলাদেশ-মিয়ানমার যৌথ সীমান্ত আইন অনুসারে বর্ডারে এভাবে বোমা হামলা ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরে বোমা নিক্ষেপ করা সীমান্ত আইনবহির্ভূত। মিয়ানমার সীমান্ত আইনকে তোয়াক্কা না করে একগুয়েমি মনোভাব পোষণ করে সীমান্তে বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক আইন প্রয়োগ ও কূটনৈতিক মহলের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করেন এই জনপ্রতিনিধি। এ ঘটনায় সোমবার বেলা ১১টায় বিজিবি কড়া প্রতিবাদ জানিয়ে ও জবাব চেয়ে প্রেরিত চিঠির জবাব দেয়নি মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি)।
এদিকে সীমান্তে বোমা হামলা চলাকালীন জাতীয় ঐক্য সরকার (এনইউজি) এবং বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে সৌহার্দপূর্ণ ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২৯ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টায় জাতীয় ঐক্য সরকার ও বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে কেন্দ্রীয় প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনী ভাষণ দেন এবং রোহিঙ্গাদের প্রতি জাতীয় ঐক্য সরকারের মনোভাব তুলে ধরেন। মানবাধিকার মন্ত্রণালয় এই প্রক্রিয়াগুলো সম্পর্কে একটি বিবৃতি দিয়েছে। ভার্চুয়াল মিটিংয়ে কেন্দ্রীয় প্রধানমন্ত্রী মান উইন খাইং থান বলেছেন, যেসব রোহিঙ্গা প্রতিবেশী দেশে আশ্রয় নিচ্ছে, তাদের নিজেদের সম্মতিতে, মর্যাদার সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদে নিরাপত্তাসহ দেশে ফেরার জন্য জাতীয় ঐক্য সরকার রোহিঙ্গাদের সহায়তা করবে। আমি আবারও প্রতিশ্রুতি দিতে চাই যে আমরা রোহিঙ্গাদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের জন্য উপযুক্ত পরিস্থিতি তৈরি করতে বাংলাদেশ সরকার এবং জাতিসংঘের সঙ্গে কাজ করছি।
এর পাশাপাশি জাতীয় ঐক্য সরকার রোহিঙ্গাদের জন্য ৩টি কাজ করছে এবং সে কাজগুলো হচ্ছে- ন্যায়বিচার ও দায়িত্ববোধ গড়ে তোলা, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের পরিবেশ তৈরি করা এবং আইন ও তার প্রয়োগে সমতা প্রদানের চেষ্টা করা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।