স্পোর্টস ডেস্ক : খেলোয়াড় হিসেবে খেলার সময় তাঁর নিরাপত্তায় কোনো কমতি রাখা হবে না। কিন্তু অক্টোবরে দেশের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ খেলে টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানাতে চাওয়া সাকিব আল হাসানের আরেকটি দাবি নিয়েই যত বিপত্তি।
ওই সিরিজ খেলার পর তাঁকে নিরাপদে দেশের বাইরে যেতে দেওয়ার যে চাহিদাপত্র দিয়েছেন, সেটি পূরণে অপারগতার কথা আগেই জানিয়ে দিয়েছেন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ। এরপর গতকাল যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার বক্তব্যেও সাকিবের দেশের মাঠ থেকে টেস্টকে বিদায় জানানোর সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়নি।
তা না হলেও তরুণ উপদেষ্টা এই অলরাউন্ডারকে একটি ‘পথ’ দেখিয়েছেন ঠিকই। এরই মধ্যে যে পথে হেঁটে মাশরাফি বিন মর্তুজা নিজের অবস্থান পরিষ্কার করতে পেরেছেন বলে মনে করেন আসিফ।
রবিবার বিকেলে শ্রম মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে সাকিবের নিরাপত্তার প্রসঙ্গ তোলা হলে ক্রীড়া উপদেষ্টা মাশরাফির উদাহরণ টেনে সাকিবকে দিয়েছেন এমন পরামর্শই, ‘জনগণের কোনো ক্ষোভ থাকলে সেটি তো আমাকেই কথা দিয়ে কমাতে হবে। রাজনৈতিক জায়গা থেকে উনার (সাকিব) বিষয়টি ওনারই পরিষ্কার করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। এরই মধ্যে সে বিষয়টি নিয়ে মাশরাফি বিন মর্তুজাও কথা বলেছেন।’
তবে খেলোয়াড় সাকিবের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো সংশয় রাখতে চাননি আসিফ। একই সঙ্গে বারবার তারকা ক্রিকেটারের রাজনৈতিক পরিচয়ও মনে করিয়ে দিতে ভোলেননি, ‘এখন খেলোয়াড় হিসেবে আমাদের একজন খেলোয়াড়কে যতটুকু নিরাপত্তা দেওয়া দরকার, দেওয়ার দায়িত্ব, সেটি দেশে এলে আমরা দেব। কিন্তু উনার রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ থাকলে সেই রাজনৈতিক বিষয়টি পরিষ্কার করা উচিত।
খেলোয়াড় সাকিব নন, রাজনীতিক সাকিবকে নিয়ে সাধারণ মানুষ ভিন্ন মানসিকতা লালন করে বলেও মনে করেন উপদেষ্টা, ‘এখানে সাকিব আল হাসানের পরিচয় দুটো। এটি আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। একটি পরিচয় খেলোয়াড়ের, আরেকটি রাজনৈতিক পরিচয়। উনি আওয়ামী লীগের প্যানেল থেকে এমপি নির্বাচন করেছিলেন। মানুষের মধ্যে এই দুটো নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে।
জনমনে ক্ষোভ থাকলে সেটি প্রশমনে সাকিবকেই উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দেওয়া আসিফ তারকা ক্রিকেটারের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের পথে বাধাটা তুলে ধরেছেন এভাবে, ‘আমার নিরাপত্তায় পাঁচজন পুলিশ কনস্টেবল ও একজন গানম্যান থাকে। আমার ওপরে যদি দেশের ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে ১০ কোটির ক্ষোভ থাকে, তাহলে এই পাঁচ-ছয়জন কি আমাকে নিরাপত্তা দিতে পারবে? আমারও সে ক্ষেত্রে নিরাপদ থাকার সুযোগ নেই।’ এ ক্ষেত্রে কথায় কথায় এসে গেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও, ‘জনগণের পক্ষ থেকে যদি নিরাপত্তার ঝুঁকি থাকে, সেটার নিশ্চয়তা কেউ কাউকে দিতে পারবে না। শেখ হাসিনাকেও দেওয়া যায়নি। তাঁকে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে।’
কানপুর টেস্ট শুরুর আগের দিন নিজের অবসর পরিকল্পনা জানানো সাকিব নিরাপত্তার বিষয়ে বল বিসিবির কোর্টেই ঠেলে দিয়েছিলেন। তবে সেদিন সন্ধ্যায় পরিচালনা পর্ষদের সভাশেষে সভাপতি ফারুকের বক্তব্যে সেটি ‘নো ম্যানস ল্যান্ড’-এ গিয়ে পড়লেও ক্রীড়া উপদেষ্টা তা আবার ফেরত পাঠালেন সাকিবের কোর্টে। জনরোষের মুখে থাকা এই ক্রিকেটারকে এখন ক্ষোভ প্রশমনের উদ্যোগ নিতে হবে নিজেকেই। সে উদ্যোগ নিলে তাঁর দেশে ফেরার পথ খুলতেও পারে। তাঁর গুরু এবং বিসিবি পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিম সেই সম্ভাবনা মাথায় রাখছেনও, ‘আমিও চাই ওর মতো একজন ক্রিকেটার দেশের মাটিতে খেলা শেষ করুক। ক্রিকেট সংস্কৃতির ব্যাপার আছে এর সঙ্গে। দুর্ভাগ্যবশত সেই সম্ভাবনা এই মুহূর্তে দেখছি না। যদিও আমি সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছি না।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।