সাদিকুল সাগর: এ কথা আর বলবার অপেক্ষা রাখেনা যে আমরা এই প্রজন্ম বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এমন পরিস্থিতি আমাদের এই প্রজন্ম দেখেনি কখনোই আগে। করোনার এই মহামারীতে পুরো বিশ্ব আজ নাকাল। উদ্বেগ আর উৎকন্ঠার ভয়ে প্রতিটি দিন যাচ্ছে সবার। উদ্ভুত এই পরিস্থিতি তে বিভিন্ন পেশাজীবি সমাজ বিশেষত ডাক্তার,স্বাস্থ্যকর্মী, নার্স,পুলিশ,বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও ছাত্র সংগঠন বিশেষত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ফ্রন্টলাইন থেকেই নিরলস কাজ করে যাচ্ছে মানুষের জন্য। মানবতার তাগিদে অন্য সকলেও যে যা পারছে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে বিপদগ্রস্থ দের আর্থিক সহযোগিতায়। এ যেন সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে। সবাইকেই জানাই ধন্যবাদ, শ্রদ্ধা আর ভালবাসা। কবি যথার্থই বলেছেন “সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।’
একসাথে আছি, একসাথে বাঁচি, আজো একসাথে থাকবোই। সব বিভেদের রেখা মুছে দিয়ে সাম্যের ছবি আঁকবোই।
আজ আমি বলবো কিছু অকুতোভয় বীরদের কথা যাদের বীরত্ব দেখছি এখনও। জ্বী হ্যাঁ,আমি বলছি বাংলাদেশ পুলিশের কথা। সেই ১৯৭১ সালেও আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে পুলিশ বাহিনীই কিন্তু প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলো। আমার এই ছোট্ট শিক্ষকতার জীবনে ২০১২ সাল থেকে ৩১তম বিসিএস পুলিশ (ক্যাডার) হতে বর্তমানে চলমান ৩৭তম পুলিশ ক্যাডার এএসপি দের ক্লাস নেই আমি হোম অফ পুলিশ খ্যাত বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি সারদাতে। যার সুবাদে আমি অনেক পুলিশ অফিসারের সাথে বেশ কানেক্টেড। সেখানে ক্লাস নেয়ার সময় থেকেই লক্ষ্য করি চৌকস এই অফিসারেরা এক অন্যরকম মানবিক পুলিশ অফিসার হওয়ার দৃপ্ত শপথ নিতেই এসেছে প্রশিক্ষণে। তাদের চোখেমুখে দেখি আমি পুলিশ হবে জনতার এই মন্ত্রে তারা স্বপ্ন লালন করে। বিগত ৮ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি একটুও বাড়িয়ে বলিনি। সোস্যাল মিডিয়া আর অন্য মিডিয়ার মাধ্যমে তাই তো আজও আমিসহ আমরা সবাই দেখছি এই পুলিশ বাহিনীর প্রতিটি সদস্য কতটা উজাড় করে এই মহামারী করোনা যুদ্ধে নিজেদেরকে নিয়োজিত রেখেছেন। নিজের জীবনের মায়া, পরিবারের মায়া সবকিছুকে তোয়াক্কা না করে রাস্তায় নেমেছে কে? পুলিশ।
মধ্যবিত্তের মাঝে গোপনে খাবার দিচ্ছে পুলিশ। বেতনের ২০ কোটি টাকা দিচ্ছে পুলিশ। নিজে কাঁধে বহন করে ত্রান দিচ্ছে পুলিশ। আক্রান্তদের হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। ডাক্তারদের কর্মস্থলে আনা নেয়া করছে পুলিশ। প্রতিদিন পুলিশের গাড়ি বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাড়ে আট হাজার মানুষকে রান্না করা খাবার দিচ্ছে ঢাকা ম্যাট্রপলিটন পুলিশ। কবর খুঁড়ছে পুলিশ, দাফন করছে পুলিশ। এমনকি জানাজাও পড়াচ্ছে পুলিশ। গান গেয়ে বাসায় থাকতে উৎসাহ দিচ্ছে পুলিশ। সারাদিন রাস্তায় পরে থাকা লাশটি উদ্ধার করছে পুলিশ। স্ত্রী-সন্তান থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে রাস্তায় পরে থাকা অসুস্থ বৃদ্ধ ব্যক্তিটির আশ্রয় দিচ্ছে পুলিশ। বাঁশ কাটা থেকে লাশ বহন করা সব কাজ নিজেরাই করে ঝড় বাদলকে উপেক্ষা করে লাশের সৎকার করছে কে? পুলিশ।
কৃষকদের পাশে, দূর্দশাগ্রস্থ হকারদের পাশে, যৌনপল্লিতে থাকা অসহায় মানুষের পাশে, কর্মহীন রিক্সাচালক থেকে ভাসমান বেদে সবার পাশে দাঁড়িয়েছে পুলিশ। এমন পুলিশ ই তো চেয়েছি আমরা। যে পুলিশ হবে মানবতার মন্ত্রে বলিয়ান, যে পুলিশ হবে জনগণের প্রকৃত বন্ধু। আজ জাতি সত্যিই গর্বিত পুলিশের ভুমিকায়। আসুন আমরা সাদা কে সাদা আর কালোকে কালো বলি। যার যা প্রাপ্য তাকে সে সম্মানটুকু দিতে কার্পণ্য না করি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অতি যথার্থই বলেছেন সবচেয়ে বেশি কস্ট করতে হয় পুলিশকেই। ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।
আমার মতে, গোটা বিশ্বে এই করোনা যুদ্ধে সম্মুখ সারীর বীর যোদ্ধা হলো আমাদের এই পুলিশ বাহিনী। আমি আমার বন্ধু তালিকায় থাকা সকল চৌকস পুলিশ অফিসারসহ বাংলাদেশ পুলিশের সকল সদস্যকে অন্তরের অন্তস্তল থেকে জানাই ধন্যবাদ আর কৃতজ্ঞতা। আপনারা আমাদের করেছেন গর্বিত। আপনাদের জন্য শুভকামনা, দোয়া আর ভালবাসা নিরন্তর। এভাবেই এগিয়ে যান দৃঢ় প্রত্যয়ে। মহামারী করোনার এই যুদ্ধ জয় করে ফিরুন সগৌরবে বীরের বেশে। আপনারাই এই যুদ্ধের প্রকৃত বীর। স্যালুট ইউ বাংলাদেশ পুলিশ।
সাদিকুল সাগর: সহকারী অধ্যাপক, আইন বিভাগ,রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।