বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য এপ্রিল মাসের বেতনের অপেক্ষা অবশেষে শেষ হতে চলেছে। দীর্ঘদিনের জটিলতা, বিলম্ব এবং ‘অ্যানালগ’ পদ্ধতির ভোগান্তির অবসান ঘটিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্প্রতি জানিয়েছে, এপ্রিল মাসের বেতনের জন্য জিও (গভর্নমেন্ট অর্ডার) ইতোমধ্যে জারি হয়েছে।
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন: জিও জারির সর্বশেষ আপডেট
গত ২০ মে মঙ্গলবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (বাজেট) লিউজা-উল-জান্নাহ জানান, এপ্রিল মাসের বেতনের জিও ১৯ মে সোমবার জারি করা হয়েছে। রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এই কাজের জন্য সক্রিয় ছিলেন। বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য সরকারি অংশের বেতন বরাদ্দের এই প্রক্রিয়া প্রতিবারই জিও জারির মাধ্যমে শুরু হয়, যা পরে অর্থ বিভাগ, হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের অফিস (AG অফিস) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন পায়।
Table of Contents
প্রসঙ্গত, সরকারি কর্মচারীরা ইএফটির (EFT) মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বেতন পান, কিন্তু এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা এখনো রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মাধ্যমে পুরাতন ‘অ্যানালগ’ পদ্ধতিতে বেতন গ্রহণ করেন। এই ব্যবস্থায় নানা ধাপে ভোগান্তি তৈরি হয়, যেমন বিলম্বিত অনুমোদন, ব্যাংকে অর্থ স্থানান্তরের বিলম্ব ইত্যাদি।
কবে বেতন তুলতে পারবেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা?
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, ‘জিও জারির পর অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের অফিস এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন পেতে দুই দিন সময় লাগে। এরপর সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে অর্থ পাঠানো হয়। সে হিসেবে বৃহস্পতিবারের মধ্যে বেতন তোলার সুযোগ থাকবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘যদি কোনো কারণে বৃহস্পতিবারের মধ্যে টাকা ছাড় না হয়, তাহলে সপ্তাহের শুরুতেই তা পৌঁছাবে।’
উল্লেখযোগ্য যে, গত অক্টোবর থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ধাপে ধাপে ইএফটির মাধ্যমে বেতন প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে। প্রথম ধাপে ২০৯ জন, এরপর জানুয়ারিতে ১ লাখ ৮৯ হাজার, ফেব্রুয়ারি-মার্চে প্রায় ১.৬ লাখের মতো শিক্ষক এই নতুন ব্যবস্থায় বেতন পেয়েছেন। কিন্তু এখনো বড় একটি অংশ ‘অ্যানালগ’ ব্যবস্থার আওতায় রয়েছেন।
ইএফটি বাস্তবায়নের পথে ধীরগতি
বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে গত ৫ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঘোষণা দেয়, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা ইএফটির মাধ্যমে দেওয়া হবে। এর ফলে শিক্ষক-কর্মচারীরা সহজে, দ্রুত এবং কোনো ভোগান্তি ছাড়াই তাদের প্রাপ্য বেতন পেতে পারবেন। তবে বাস্তবে এই রূপান্তরের গতি বেশ ধীর, যার ফলে এখনো হাজার হাজার শিক্ষক-কর্মচারী ভোগান্তিতে রয়েছেন।
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা ও দিকনির্দেশনা
শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) জানিয়েছে, তারা শিগগিরই সকল এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য ইএফটি বাধ্যতামূলক করার পরিকল্পনা করছে। এজন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর সাথে বৈঠকও হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, ২০২৫ সালের মধ্যে শতভাগ শিক্ষক ইএফটির আওতায় চলে আসবেন।
বেতনের বিলম্বে ভোগান্তি: শিক্ষক সমাজের প্রতিক্রিয়া
বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন এবং ব্যক্তি শিক্ষকরা জানিয়েছেন, প্রতি মাসেই বেতন পেতে বিলম্ব হওয়ায় তাঁদের দৈনন্দিন জীবনযাপন ব্যাহত হচ্ছে। অনেকেই ঋণ নিয়ে চলতে বাধ্য হচ্ছেন। তাই তাঁরা চাইছেন, ইএফটি বাস্তবায়নের কাজ আরও দ্রুত এবং সমন্বিত হোক।
ডিরেক্টরেট অফ সেকেন্ডারি অ্যান্ড হায়ার এডুকেশন সূত্র অনুযায়ী, বর্তমানে ২.৫ লাখেরও বেশি শিক্ষক-কর্মচারী এমপিওভুক্ত। তাঁদের সবার জন্য একটি একক এবং আধুনিক বেতন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা সময়ের দাবি।
সাপ্তাহিক ছুটি ও ব্যাংক কার্যক্রম বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের বেতন আগামী বৃহস্পতিবার অথবা এর আগেই হাতে পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
FAQs
- এপ্রিল মাসের বেতন কবে পাওয়া যাবে?
জিও জারির পর ২ দিনের মধ্যে টাকা ব্যাংকে পাঠানো হয়, অর্থাৎ বৃহস্পতিবারের মধ্যে বেতন পাওয়া সম্ভব। - ইএফটি ব্যবস্থায় কতজন শিক্ষক বেতন পেয়েছেন?
প্রথম ধাপে ২০৯ জন, পরে জানুয়ারিতে ১.৮৯ লাখ এবং ফেব্রুয়ারি-মার্চে আরও ১.৬ লাখ শিক্ষক এই সুবিধা পেয়েছেন। - ইএফটি সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন কবে হবে?
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৫ সালের মধ্যে শতভাগ এমপিওভুক্ত শিক্ষক ইএফটির আওতাভুক্ত হবেন। - অ্যানালগ পদ্ধতিতে বেতন নিতে কী সমস্যা হয়?
দেরিতে অর্থ ছাড়, ব্যাংকে ভোগান্তি এবং অনিশ্চয়তা এই ব্যবস্থার বড় সমস্যাগুলো। - ইএফটির সুবিধা কী?
বেতন-ভাতা দ্রুত, সহজে এবং নির্ভরযোগ্যভাবে শিক্ষকদের একাউন্টে পৌঁছে যায়। - কোথায় আরও তথ্য পাওয়া যাবে?
এখানে ক্লিক করুন শিক্ষাবিষয়ক আরও খবর পড়তে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।