আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যে কোনো অস্ত্রবিরতির জন্য একটি সময়সীমায় বেধে দিতে তুর্কিশ প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের দাবিতে ওয়াশিংটন সম্মত হওয়ার পরেই কুর্দিশ নেতৃত্বাধীন অঞ্চলে আকস্মিকভাবে আংকারার অভিযান স্থগিত করা হয়েছে।
তুরস্কের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা শুক্রবার এমন দাবিই করেছেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে এমন তথ্য জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার আংকারায় এরদোগানের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় আলোচনার পর তুরস্কের আন্তঃসীমান্ত হামলায় পাঁচদিনের বিরতি ঘোষণা করেছেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স।
বৈঠকে দুই নেতার মুখে হাসি দেখা যায়নি বললেই চলে। চেহারায়ও ছিল কাঠিন্য। সহানুভূতিহীন মনোভাব।
কিছুটা গাম্ভীর পরিবেশের মধ্য দিয়ে আলোচনা শুরু হলেও দুই পক্ষের কর্মকর্তারা বলেন, বৈঠককে সামনে রেখে আগেই একটি খসড়া চুক্তির তৈরি করা হয়েছে। সিরিয়ার ধ্বংসাত্মক আট বছরের গৃহযুদ্ধের সাম্প্রতিক লড়াই স্থগিত করতে একটি চুক্তিকে সামনে রেখে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা বাধা রয়েই গিয়েছিল।
মূলত দুই লাখ বেসামরিক লোকের বাস্তুচ্যুত হওয়ায় নতুন মানবিক সংকট যাতে তৈরি না হয় এবং কুর্দিশ যোদ্ধাদের কারাগারে আটক আইএস বন্দিদের মুক্ত হয়ে পালিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকেই এই চুক্তিটি করা। আইএস যোদ্ধারা ছাড়া পেলে নতুন করে নিরাপত্তা সংকট তৈরি হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র-তুরস্কের মধ্যে সম্পর্কের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাওয়া এবং রাশিয়া-সিরিয়া নীতি নিয়ে দুই ন্যাটো মিত্রের বিরোধের জেরে আংকারার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ওয়াশিংটন। তুর্কির অর্থনীতিকে মুছে ফেলার হুমকি দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ওই কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, তুরস্কে পেন্সের আলোচনা সহজ কিছু ছিল না, এটা খুবই পরিষ্কার।
এমনকি মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্টের বিমান আংকারায় অবতরণের আগেও সীমান্ত বরাবর ২০ মাইল গভীর পর্যন্ত এলাকা থেকে কুর্দিশ যোদ্ধারা সরে না গেলে পেন্সের আহ্বান সাড়া দিয়ে অস্ত্রবিরতিতে রাজি ছিল না তুরস্ক।
উত্তরপূর্ব তুরস্কে রক্তক্ষয়ী বিদ্রোহে লিপ্ত কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) সঙ্গে যোগসাজশের দায়ে কুর্দিস্থান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেসকে (এসডিএফ) সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
আলোচনায় অনেক ইস্যুতে তাদের মতানৈক্য ছিল বলে জানিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই তুর্কি কর্মকর্তার ভাষ্য, বৈঠকের কেন্দ্রীয় ইস্যু ছিল কোনো অকার্যকর অস্ত্রবিরতি করা যাবে না।
‘বৈঠকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গাটি ছিল হামলা বন্ধে এরদোগান একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা দাবি করেন। এরদোগান বলেন- এটা ২৪ কিংবা ৪৮ ঘণ্টা হতে পারে। তখন পেন্স বলেন, এটা খুবই স্বল্প সময়। তিনি নিজেই এই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না।’
তুর্কি প্রেসিডেন্ট পিছু হটতে রাজি ছিলেন না। এতে ইস্যুটি দ্বিতীয় পর্যায়ে চলে যায়। বৈঠকের সময়ও বেড়ে যায় এতে।
কর্মকর্তারা বলেন, আলোচনার পরবর্তীতে ১২০ ঘণ্টার সময়সীমায় তারা একমত হন। যখন এই ইস্যুটিতে সমাধান আসে, দ্বিতীয়টি শুরু করেন তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, এক পর্যায়ে এরদোগান প্রশ্ন রাখেন- সীমান্ত থেকে ওয়াইপিজি যোদ্ধাদের প্রত্যাহারে কত সময় লাগবে। তখন আমরা (আমেরিকানরা) আশার আলো দেখতে শুরু করলাম যে তুর্কিরা একটি চুক্তিতে আসতে যাচ্ছে।
ইভ্যানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইসলামের শেকড় থেকে আসা এরদোগানের ছবিতে দুই ব্যক্তির ভেতরে বেমানান কিছু আছে। কিন্তু আলোচনার শুরুতে এরদোগানকে পেন্স বলেন, ট্রাম্প তাকে পছন্দ, সম্মান ও গুরুত্ব দেন।
তুরস্কের ওই কর্মকর্তার ভাষায়, সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশেই তাদের আলোচনা শুরু হয়েছে।
আলোচনার এক পর্যায়ে সপ্তাহব্যাপী সামরিক অভিযানে নিজেদের হতাহতের কথা উল্লেখ করেন তুর্কিরা। পেন্স তাদের বলেন, মার্কিন প্রতিনিধিদের মধ্যে সামরিক বোদ্ধা রয়েছেন। তার নিজের সন্তানও সামরিক পেশায় যুক্ত।
কুর্দিবিরোধী লড়াইয়ে নিহতদের পরিবারের প্রতি শোক ও সহানুভূতি জানান তিনি। বৈঠকে এক তুর্কিশ জেনারেলও উপস্থিত ছিলেন।
এই ব্যক্তিগত সম্পর্ক দুই পক্ষের আপসহীন বক্তব্যের পরেও দুই দেশের সম্পর্কের উত্তেজনা প্রশমনে কিছুটা সহায়ক হয়।
এই চুক্তিতে নির্ভর করেই উত্তর সিরিয়ার উত্তেজনা কমে গেছে। কিন্তু এই সাময়িক অস্ত্রবিরতি এখনো নাজুক অবস্থায় রয়েছে।
শুক্রবার সকালে সিরীয় শহর রাস আল-আইন থেকে গোলাবর্ষণের আওয়াজ শোনা গেছে। তবে মাঝ-সকালে বোমা হামলার সংখ্যা কমে গেছে।
তুরস্কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাওয়া নিরাপদ অঞ্চলটি কত বড় হবে- তা নিয়ে একটা বিভ্রান্তি রয়েছে। এরদোগান বলেন, পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত ৪৪০ কিলোমিটারের বিশাল ভূমি নিয়ে এই নিরাপত্তা অঞ্চল হবে।
সিরিয়া বিষয়ক মার্কিন বিশেষ দূত জেমস জেফ্রি বলেন, চুক্তিতে ছোট্ট একটি এলাকার কথা বলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলোচনার আগে এরদোগানকে পাঠানো ট্রাম্পের একটি চিঠি প্রকাশ করে হোয়াইট হাউস। ৯ অক্টোবরের ওই চিঠিতে উত্তর সিরিয়ায় তুরস্কের অভিযান নিয়ে হুশিয়ারি করা হয়েছে।
এতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, আপনি কঠোর হবেনা এবং বোকাও হবেন না। এছাড়া তুরস্কের অর্থনীতি ধ্বংস করে দেয়ারও হুমকি দেয়া হয়েছে বারবার।
আংকারার আরেক কর্মকর্তা বলেন, এরদোগানের মতো কোনো ব্যক্তির সঙ্গে এমন সুরে কথা বলা এবং তা মেনে নেয়া হবে বলে প্রত্য্যাশা করা সত্যিই আজব ঘটনা।
চিঠিতে যে সুরে কথা বলা হয়েছে, তাতে কিছুটা অবাক হয়েছে আংকারা। এর আগে তুরস্কের কর্মকর্তারা বারবার বলে আসছিলেন, দুই প্রেসিডেন্টের মধ্যে জোরালো বন্ধন রয়েছে।
দ্বিতীয় কর্মকর্তা বলেন, ট্রাম্প চাইলে এরদোগানের সঙ্গে শিগগিরই একটি চুক্তি হতে পারে। কিন্তু তার আগেই ব্যাপক অবদান রাখলেন পেন্স।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।