হাসান মেজর: সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ গতকাল রবিবার ৮৯ বছর বয়সে না ফেরার দেশে চলে গেছেন। তাঁর মৃত্যুতে মুষড়ে পড়েছে দলের নেতাকর্মীরা বিশেষ করে রংপুরের সর্বস্তরের মানুষ। প্রিয় নেতার অন্তিম সমাধি রংপুরে না করে ঢাকার সামরিক কবরস্থানে সমাহিত করার সিদ্ধান্ত জানার পর তাদের কষ্ট রুপ পেয়েছে ক্ষোভে।
এরশাদের শেষ ইচ্ছে অনুয়ায়ী তার অন্তিম সমাধি স্বপ্নের বাড়ি রংপুরের পল্লী নিবাসে করার জোর দাবি উঠছে সর্বমহল থেকে।
গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, রবিবার প্রিয় নেতার অন্তিম যাত্রার খবর শুনে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে রংপুরের নেতাকর্মীরা। তারা দলে দলে ছুটে আসে দলীয় কার্যালয়ে। যাদের কারও কাছে পিতা, কারও কাছে আদর্শিক নেতা আবার কারও কাছে ছিলেন তিনি গীতি কবি।
আমরা জানি, সুদিনে না হলেও দুর্দিনে এরশাদের পাশে ছিলো রংপুরের মানুষ। ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে জেলে অন্তরীণ থাকা অবস্থায় এরশাদ রংপুরের পাঁচটি আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হন। ১৯৯৬ সালের সাধারণ নির্বাচনেও এরশাদ সংসদে পাঁচটি আসনে বিজয়ী হন। দশম এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একদিনের জন্য হলেও নির্বাচনী এলাকা রংপুর সদরে প্রচারণায় অংশ নেননি তিনি। তারপরেও তাঁকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন রংপরের মানুষ। এবার তিনি নির্বাচিত হয়ে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতাও হয়েছিলেন। রংপুরের মানুষের ভালোবাসায় কিংবদন্তী হয়েছেন এরশাদ। তার অন্তিম শয়ন রংপুরে হবে না, মানতে পারছে না এই অঞ্চলের মানুষ।
গতকাল এরশাদের মৃত্যুর খবর রংপুর পৌঁছালে সেন্ট্রাল রোডের জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে জেলা জাতীয় পার্টি। সংবাদ সম্মেলনে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য রংপুর মহানগর সভাপতি ও সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক পিতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ চিরবিদায় নিয়েছেন। আমাদের এতিম করে চলে গেছেন তিনি। কিছু বলার ভাষা নেই। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) স্যারের মরদেহ আসবে রংপুরে। ওই দিন বাদ জোহর তাঁর জানাজা রংপুর কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে অনুষ্ঠিত হবে।’
মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা আরও বলেন, ‘এরশাদ অসুস্থ হওয়ার কিছুদিন আগে দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের সঙ্গে আলাপ হয় তাঁর। এ সময় নিজ বাড়ি পল্লী নিবাসে তাঁর সমাধী তৈরির ইচ্ছা প্রকাশ করে যান। এ জন্য একটি সমাধি কমপ্লেক্স নির্মাণেরও পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি। কিন্তু, হঠাৎ অসুস্থ হওয়ায় সে পরিকল্পনা জনসমক্ষে বলে যেতে পারেননি। এ কারণে, জাতীয় পার্টি রংপুর বিভাগ, জেলা, মহানগরসহ সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনসহ রংপুরবাসীর পক্ষ থেকে জাপা চেয়ারম্যানের দাফন তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী ওই জায়গায় করার দাবি জানাচ্ছি আমরা।’
জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের দাবির প্রতি সমর্থন রয়েছে এখানকার দিনমজুর থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের। ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাকের পার্টিসহ অন্যান্য দলের নেতারাও চাইছেন বিরোধীদলীয় নেতা এরশাদের শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী রংপুরে তাঁকে দাফন করা হোক।
রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ও মেট্রোপলিটন চেম্বারের প্রেসিডেন্ট রেজাউল ইসলাম মিলন গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এরশাদ দেশ বিদেশে একজন আলোচিত রাজনীতিবিদ। তিনি বাংলাদেশের একজন ক্ষমতাধর রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তিনি যেহেতু অসিয়ত করে গেছেন তার সমাধি পল্লী নিবাসে করার জন্য। আমরাও চাই তার সমাধি রংপুরে হোক।’
মিলনের সাথে সহমত পোষন করে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবু তুষার কান্তি মন্ডল বলেন, ‘রংপুরের মানুষ হিসেবে এরশাদের মৃত্যুতে আমরা মর্মাহত। তিনি আমাদের এমপি ছিলেন। তাঁর সমাধি রংপুরে হলে সবাই খুশি হবে।’
রংপুর মহানগর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনিছুর রহমান লাকু গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এরশাদ একজন বর্ণিল রাজনীতিবিদ। তিনি অসিয়ত করে গেছেন, রংপুরের পল্লী নিবাসে যেন তার সমাধি হয়। আমরা বিএনপির সকল স্তরের নেতাকর্মীরাও চাই, এই সাবেক রাষ্ট্রপতিকে সমাহিত করা হোক।’
জাকের পার্টির রংপুর মহানগরের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন শিপন বলেন, ‘এরশাদকে ঘিরে অনেক রাজনীতি হয়েছে। মৃত্যুর পর তারর দাফন নিয়ে মানুষ রাজনীতি দেখতে চায় না। তিনি যেহেতু পল্লী নিবাসে তার সমাধি করার কথা বলেছেন, এর জন্য প্ল্যান তৈরি করেছেন। এটা নিয়ে তো আপত্তি থাকার কথা নয়।’
এরশাদের পারিবারিক নিবাস রংপুর শহরের সেনপাড়ায় স্কাইভিউতে হলেও তিনি নিজে জমি ক্রয় করে রংপুর শহরের দর্শনায় মহাসড়কের পাশে দেড় একর জমির ওপর পল্লী নিবাস নামে তার নিজস্ব আবাসন তৈরি করেন। রংপুরে সফরে আসলে তিনি সেখান থেকেই রাত্রিযাপনসহ সকল রাজনৈতিক, সামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন।
গত বছরের অক্টোবরে পল্লী নিবাসের পুরনো স্থাপনা ভেঙে একটি আধুনিক বাড়ি নির্মাণও শুরু করেন তিনি। বাড়িটির নির্মাণ কাজ প্রায় সমাপ্তির পথে। এই পল্লী নিবাসের পশ্চিম দিকে এরশাদ তার সমাধি কমপ্লেক্স নির্মাণে দলের স্থানীয় নেতাদের অসিয়ত করেছিলেন।
তাই রংপুরের একজন সন্তান হিসাবে আমারও দাবি সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী রংপরের পল্লী নিবাসেই তাঁকে সমাহিত করা হোক।
হাসান মেজর: রংপুর বিভাগ সমিতি, ঢাকা’র যুগ্ম সম্পাদক
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।