এরা শোভন-রাব্বানীর চেয়েও খারাপ: শেখ হাসিনা

ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে শোভন-রাব্বানীকে অপসারণের নির্দেশ দেয়ার পর যুবলীগের কিছু নেতার কর্মকাণ্ড নিয়েও চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি ছাত্রলীগের সদ্য অব্যাহতি পাওয়া সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে তুলনা করে যুবলীগের কিছু নেতার উদ্দেশে বলেন, ‘এরা আরও খারাপ’। প্রধানমন্ত্রী নিজের জন্মদিন পালনে যুবলীগের উদ্যোগেরও সমালোচনা করেন।

শনিবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় তিনি এমন মন্তব্য করেন।

বৈঠকসূত্র জানায়, যুবলীগ প্রসঙ্গে বৈঠকে আলোচনার সূত্রপাত ঘটান আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির নানক। বৈঠকের এজেন্ডায় উল্লেখ থাকা শেখ হাসিনার জন্মদিন পালনের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি বলেন, দল সাড়ম্বরে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার জন্মদিন উদযাপন করতে চায়। কিন্তু শেখ হাসিনা জন্মদিন পালন নিয়ে অনীহা প্রকাশ করলে নানক যুবলীগের শেখ হাসিনার জন্মদিন পালন উপলক্ষে মাসব্যাপী কর্মসূচির কথা উল্লেখ করেন।

পরে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও এ কথা উল্লেখ করে বলেন, শনিবার যুবলীগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল এবং আলোচনাসভা করেছে। তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা বলেন, চাঁদাবাজির টাকা বৈধ করতে মিলাদ মাহফিল করা হয়েছে। নিজের জন্য এমন মিলাদ মাহফিল তিনি চান না। এর পর যুবলীগ নিয়ে তার কাছে আসা নানা অভিযোগ তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুবলীগের ঢাকা মহানগরের একজন নেতা (ঢাকা মহানগর যুবলীগের একটি অংশের সভাপতি) ক্রসফায়ার থেকে বেঁচে গেছেন। আরেকজন এখন দিনের বেলায় প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে চলেন। সদলবলে অস্ত্র নিয়ে ঘোরেন। এসব বন্ধ করতে হবে। যখন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে, তখন কেউ অস্ত্র নিয়ে বের হয়নি, অস্ত্র উঁচিয়ে প্রতিবাদ করেনি। যখন দলের দুঃসময় ছিল, তখন কেউ অস্ত্র নিয়ে দলের পক্ষে অবস্থান নেয়নি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, টানা তিন বার সরকারে আছি। অনেকের অনেক কিছু হয়েছে। কিন্তু আমার সেই দুর্দিনের কর্মীদের অবস্থা একই আছে। যারা অস্ত্রবাজি করেন, যারা ক্যাডার পোষেন, তারা সাবধান হয়ে যান- এসব বন্ধ করুন।

দলীয় পদ ও সরকারের দায়িত্বশীল পদে আসীন ব্যক্তিদের আত্ম-অহমিকা ও ক্ষমতার জোরে অর্থ ও দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত না হওয়ার জন্য আহ্বান জানান তিনি।

অস্ত্রবাজ-চাঁদাবাজদের হুশিয়ার করে শেখ হাসিনা বলেন, যারা অস্ত্রবাজি করেন, যারা ক্যাডার পোষেণ, তারা সাবধান হয়ে যান- এসব বন্ধ করুন। তা না হলে যেভাবে জঙ্গি দমন করা হয়েছে, একইভাবে তাদেরকেও দমন করা হবে।

এর আগে ছাত্রলীগ থেকে সদ্য অব্যাহতি পাওয়া সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর বিষয়ে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি বলেন, পদ পাওয়ার পর এই দুজন ‘মনস্টার’ (দানব) হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রীর এ মন্তব্যের পর সভায় উপস্থিত আওয়ামী লীগ নেতারা চুপ হয়ে যান। এমন মন্তব্যের পরই শোভন-রাব্বানীকে ছাত্রলীগের শীর্ষ পদ থেকে অপসারণ করা হয়।

শোভন-রাব্বানীর প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি ওদের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বানালাম, কিন্তু ওরা পদ পাওয়ার পর ‘মনস্টার’ হয়ে গেল।’ এর পরই ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি আল নাহিয়ান জয়কে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়ার ঘোষণা দেন তিনি।

প্রসঙ্গত গত ৭ সেপ্টেম্বর দলের সংসদীয় ও স্থানীয় সরকার বোর্ডের সভায় ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের কথা তুলে ধরে ক্ষোভ প্রকাশ করে শেখ হাসিনা তাদের কমিটি ভেঙে দেয়ার কথা বলেন। পরে শোভন-রাব্বানীর গণভবনে ঢোকার স্থায়ী পাসও বাতিল করা হয়। তাদের পক্ষে সুপারিশ করতে গণভবনে গিয়ে ব্যর্থ মনোরথে ফিরে আসেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী তিন নেতা। প্রধানমন্ত্রীর অনড় মনোভাবে শোভন-রাব্বানীর বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। শনিবারের বৈঠকে সেটিই সত্যি হলো।

Previous Article

রানু মণ্ডলের পর এবার ভাইরাল পাগল ভানু মণ্ডলের গান (ভিডিও)

Next Article

সাকিবকে হারিয়ে বিপদে বাংলাদেশ

Write a Comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *