জুমবাংলা ডেস্ক : কিশোরগঞ্জ জেলা সদরে সপরিবারে বসবাস করা অসীম কুমার উকিল ২০১৮ সালে নেত্রকোনা-৩ আসনে (কেন্দুয়া-আটপাড়া উপজেলা) আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান। যাঁরা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত তাঁরাই কেবল জানতেন তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা। নির্বাচনী এলাকায় তৃণমূলের মানুষের সঙ্গে তাঁর মেলামেশাও ছিল কম।
ওই নির্বাচনে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন অসীম কুমার উকিল। এমপি হওয়ার পর তার দুর্নীতি, লুটপাট নিয়ে কালের কণ্ঠের করা প্রতিবেদন থেকে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো-
তিনি আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক। তাঁর স্ত্রী অপু উকিল নবম জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
এমপি থাকাকালে দুর্নীতি, লুটপাট করে দুই হাতে টাকা কামিয়েছেন অসীম কুমার উকিল। গুঞ্জন রয়েছে, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বিশেষ সখ্য থাকায় ক্ষমতার দাপটে এলাকার উন্নয়নের চেয়ে নিজের উন্নয়নে ব্যস্ত ছিলেন তিনি।
ছাত্র-জনতার বিপ্লবে সরকার পতনের পর পালিয়ে গিয়ে ভারতে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে অসীমকে সস্ত্রীক আড্ডা দিতেও দেখা গেছে বলে গণমাধ্যমে খবর প্রচারিত হয়েছে।
এমপি থাকাকালে ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর অসীম কুমার উকিল ও তাঁর স্ত্রী অপু উকিলের বিরুদ্ধে সরকারি প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎসহ নানা দুর্নীতির মাধ্যমে দেশে-বিদেশে নামে-বেনামে অবৈধ সম্পদ থাকার অভিযোগ ওঠে। আর এই অভিযোগ করেন নেত্রকোনা জেলা কৃষক লীগের সাবেক সভাপতি কেশব রঞ্জন সরকার। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং দুদক বরাবর করা অভিযোগটি তখন কর্তৃপক্ষ আমলে নেয়নি।
জেলা কৃষক লীগের সাবেক সভাপতির অভিযোগে বলা হয়, অসীম কুমার উকিল দুর্নীতি, লুটপাটের টাকায় ঢাকার উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরের ১৮ নম্বর রোডে দুই ইউনিটের সাততলা বাড়ি, ধানমণ্ডি ১১ নম্বর রোডের ৪০ নম্বর বাড়িতে তিনটি ফ্ল্যাট, পূর্বাচলে ১০ কাঠার প্লটের মালিক হয়েছেন।
এ ছাড়া নেত্রকোনা সদরের কাটলী মৌজায় মূল্যবান জায়গা, কেন্দুয়া পৌরসভার সাউদপাড়ায় রাজকীয় বাড়ি, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন এলাকায় বিলাসবহুল বাড়ি, কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের খড়মপট্টিতে উকিল নিবাস নামেও একটি বাড়ি রয়েছে তাঁর।
অসীমের বদৌলতে তাঁর দুই ছেলে সায়ক উকিলের নামে কানাডায় ও শুদ্ধ উকিলের নামে লন্ডনে বাড়ি রয়েছে। তাঁর ভাই অশেষ কুমারের নামে আছে চট্টগ্রামে শিপিং লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা ও শপিংমল। ভারতের বেঙ্গালুরুতে নামে-বেনামে তাঁদের বিশাল বাড়ি রয়েছে বলেও অভিযোগে জানা যায়।
নির্বাচনী এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এমপি অসীম নিজের ইচ্ছামতো উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে আওয়ামী লীগের দলীয় পদ বণ্টন করতেন। এলাকার ঠিকাদারির সব কাজ পেতেন তাঁর পছন্দের লোকজন। এর মধ্য দিয়ে চলত মোটা অঙ্কের লেনদেন। এলাকায় প্রচার রয়েছে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের নৌকা প্রতীক বরাদ্দ এবং প্রভাব খাটিয়ে প্রার্থীকে জয়ী করাতে কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন তিনি। তবে সুচতুর এই উকিল নির্বাচনী এলাকায় তেমন সম্পদ বাড়াননি।
দেশের বাইরে কোটি কোটি টাকা পাচারের অভিযোগও রয়েছে অসীম কুমার ও তাঁর স্ত্রী অপু উকিলের বিরুদ্ধে। এরই মধ্যে সেই টাকার অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাঁদের গোটা পরিবারের ব্যাংক হিসাবও জব্দ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভাঙচুর ও নাশকতার অভিযোগে অসীম উকিল ও তাঁর স্ত্রী অপু উকিলের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে থানায় কমপক্ষে তিনটি মামলা হয়েছে। তাঁরা পলাতক থাকায় এসব অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য নেওয়া যায়নি।
ফ্যাসিবাদ মুক্তি আন্দোলনের কোনো একক মাস্টারমাইন্ড নেই : জামায়াত আমির
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।