আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের অপশাসনের মধ্যে দেশের বিজ্ঞাপনের বাজার ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছে। এ পরিস্থিতির জন্য দায়ী বিপণন, যোগাযোগ ও বিজ্ঞাপনী সংস্থা এশিয়াটিক গ্রুপ। শেখ হাসিনার পরিবারের সঙ্গে ভালো যোগাযোগ ছিল বলে তারা জোর করে অনেক প্রতিষ্ঠানের কাজ নিজেদের কাছে নিয়ে নিত।
এভাবে বিজ্ঞাপনের বাজারে একচেটিয়া আধিপত্য বজায় রাখে এশিয়াটিক গ্রুপ। শেখ হাসিনার সময় ইরেশ যাকের রেহেনা পুত্রের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে অবৈধভাবে বিপুল অর্থ ইনকাম করলেও পাঁচ অগাস্টের পর তিনি নিজের রূপ পরিবর্তন করে সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেছেন।
পদ্মা সেতুর মহাপ্রান্তে সমাপনী অনুষ্ঠানের ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব এশিয়াটিক গ্রুপকে দেওয়া হয় যেখানে খরচ ধরা হয় পাঁচ কোটি টাকা। এশিয়াটিক গ্রুপের দায়িত্ব ছিল আসাদুজ্জামান নূর, আলী যাকেরের স্ত্রী সারা যাকের এবং তার পুত্র ইরেশ যাকেরের নিকট।
আসাদুজ্জামান নূরের বিরুদ্ধে চারজন বিএনপি ও জামাতের নেতাকর্মীকে ক্রসফায়ার এর নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। আওয়ামী লীগের সময়ে বিজ্ঞাপন শিল্প এশিয়াটিকের হাতে জিম্মি করার অভিযোগ তুলে দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হয়েছে।
মুজিব চলচ্চিত্রের সম্পূর্ণ প্রচারের দায়িত্ব এশিয়াটিক গ্রুপের কাছেই ছিল। গত ১৬ বছরে প্রতিটি জয় বাংলা কনসার্টের দায়িত্ব তাদের হাতে ছিল। এভাবে আওয়ামী লীগের প্রভাব কাজে লাগিয়ে রেহানা পুত্র ববির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে আধিপত্য করতে থাকেন।
আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে শতাধিক ভারতীয় সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারকে সম্মাননা ও স্বর্ণপদক দেওয়া হয়। তাতে প্রতিটি পদকে বিপুল পরিমাণে সোনা চুরি হয়েছিল বলে অভিযোগ আছে। সে সময় এ নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল। ওই অনুষ্ঠান ও পদক বানানোর কাজটি করেছিল এশিয়াটিক।
শুধু তাই নয়, শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী রিসার্চ উইং-সিআরআইয়ের সঙ্গে যুক্ত আছেন এশিয়াটিকের আরেক মালিক ইরেশ যাকের। গত ১৬ বছর ধরে আওয়ামী লীগ সরকারের বড় বড় ইভেন্টের প্রচারের কাজ একচেটিয়াভাবে করেছে এশিয়াটিক। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দফতরগুলোর বিজ্ঞাপন ও প্রচারের নামে প্রতিষ্ঠানটি বিপুল পরিমাণ টাকা লোপাট করেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
বিজ্ঞাপন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এশিয়াটিক তাদের প্রতিষ্ঠান মাইন্ডশেয়ার, এম-বি-এ, ওয়েভামকার, এম-পাওয়ারের নাম দিয়ে সরকারি বিজ্ঞাপন বাগিয়ে নিত। বিজ্ঞাপন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শ্বেতপত্রে দেওয়া অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০২০ ও ২০২১ সালে মুজিব শতবর্ষ ও স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ বাংলাদেশে এসেছিলেন। সেই অনুষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ কাজ পায় এশিয়াটিক। ওই দুই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয় এশিয়াটিকের কর্তারা।
অভিযোগ আছে, সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ও ইরেশ যাকেরদের এশিয়াটিক গ্রুপ বিভিন্ন নামে বিগত ১৬ বছরে গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক, বিকাশ, মারিকো, রেকিট, কোকাকোলা, ডানো, কোলগেট, পেপসির মতো বড় বড় সব বিদেশি প্রতিষ্ঠানের মিডিয়া বাজেট কুক্ষিগত করে নেয়।
সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদের প্রভাবে ক্রিকেট বোর্ডের হাজার কোটি টাকার মিডিয়া সম্প্রচার সত্ত্বও বাগিয়ে নেয় এশিয়াটিক।
স্থানীয় সরকারের ডেঙ্গু প্রতিরোধে শেখ হাসিনার আহ্বান সম্বলিত একটি বিজ্ঞাপন প্রচারিত হয়েছিল। প্রায় শতকোটি টাকা বাজেটের এই বিজ্ঞাপন শুধুমাত্র সরকার অনুগত টিভি চ্যানেলগুলোতে দেদারসে চালানো হয়। এছাড়াও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ও প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাতের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে সরকারিভাবে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানির মাধ্যমে টিভির রেটিং ডাটাও এশিয়াটিক এককভাবে কুক্ষিগত করে রাখে। রেটিংয়ের অজুহাতে বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেয়ার অভিযোগও আছে।
ইরেশ যাকের আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে ফেসবুকে যেসব ছবি ছিল সব ডিলিট করে দেন। আবার ১৯ জুলাই বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে তিনি যোগ দেন। আওয়ামী লীগের অপশাসনের সময়ে এশিয়াটিকের বাইরে অন্য কেউ কাজ পাবে সেটার সুযোগ তেমন ছিল না। অনেক প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিবর্গের জঘন্য পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। আসাদুজ্জামান নূরের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলো তিনি কল রিসিভ করেননি।
সূত্র: মিরর এশিয়া
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।