স্পোর্টস ডেস্ক : ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আসরের নাম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। ইউরোপিয়ান ফুটবলের শীর্ষ ক্লাবগুলোই এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার সুযোগ পায়। বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচে পিএসজির মুখোমুখি হয়েছিল ইসরাইলের ক্লাব ম্যাকাবি হাইফা। লিওনেল মেসির নৈপুণ্যে ম্যাচটিতে ৩-১ গোলে জয় পায় লিগ ওয়ানের চ্যাম্পিয়নরা। তবে অনেকের মনে প্রশ্ন জেগেছে, ভৌগোলিকভাবে এশিয়ার দেশ হয়েও ইসরাইলের ক্লাব ম্যাকাবি হাইফা কীভাবে খেলছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে।
মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে অংশ নিয়ে থাকে ইউরোপের বিভিন্ন লিগের শীর্ষ দলগুলো। এবারের মৌসুমে এ আসরে খেলার সুযোগ পেয়েছে ইসরাইলের ক্লাব ম্যাকাবি হাইফা।
প্রতিযোগিতাটির এবারের মৌসুমে ‘এইচ’ গ্রুপে অংশ নিচ্ছে মধ্যপ্রাচের বিতর্কিত দেশের ক্লাবটি। এ গ্রুপে দলটির সঙ্গী হিসেবে আরও রয়েছে ফরাসি জায়ান্ট পিএসজি, সিরি ‘আ জায়ান্ট য়্যুভেন্তাস ও পর্তুগিজ প্রিমেরা লিগার দল বেনফিকা।
অনেকেই হয়তো জানেন, ভৌগোলিকভাবে এশিয়ায় অবস্থিত হলেও আন্তর্জাতিক ও ক্লাব পর্যায়ের ফুটবলে ইসরাইল ইউরোপিয়ান অঞ্চলের দেশ হিসেবে অংশ নিয়ে থাকে। এশিয়ান দেশ হলেও মূলত উয়েফার সদস্য হিসেবেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগে অংশ নিয়ে থাকে ইসরাইলের ক্লাবগুলো। শুধু ক্লাব পর্যায়েই নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় ইউরোপের হয়েই অংশ নেয় বিতর্কিত দেশটি। তাই নিয়মিতই বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব, ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্বে খেলতে দেখা যায় তাদের।
এশিয়ায় অবস্থিত ইসরাইল মূলত উয়েফার সদস্য রাষ্ট্র হিসেবেই এ প্রতিযোগিতাসমূহে অংশ নিয়ে থাকে। তবে জন্মলগ্নে তারা এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের (এএফসি) অন্তর্ভুক্ত দেশ হিসেবেই ফুটবল খেলত।
ফুটবলে ইসরাইলের ইতিহাস দেশটির জন্মের মতোই জটিল। বিতর্কিতভাবে জন্মের পর ১৯৫৪ সালে এএফসির সদস্য হিসেবে ফুটবল প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে শুরু করে দেশটি। তবে আরব লিগ ইসরাইলকে বয়কট করলে আরব দেশগুলো তাদের বিপক্ষে খেলতে অস্বীকৃতি জানায়।
এর ফলে এমন পরিস্থিতি দাঁড়ায় যে, বলে একটা লাথি না মেরেও কৌশলগতভাবে ১৯৫৮ বিশ্বকাপ ফুটবলে কোয়ালিফাই করে ফেলে ইসরাইল। ফিফা এ অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ওয়েলসের বিপক্ষে প্লে-অফ খেলায় দেশটিকে। সে প্লে-অফে ড্রাগনদের বিপক্ষে হেরে যাওয়ায় সেবার বিশ্বকাপে অংশ নিতে ব্যর্থ হয় তারা।
১৯৬৪ সালে ইসরাইল এএফসি এশিয়ান কাপের আয়োজক দেশ হিসেবে টুর্নামেন্টটি আয়োজন করে এবং সে আসরে চ্যাম্পিয়ন হয় দেশটি। এটিই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিতর্কিত দেশটির একমাত্র সাফল্য, যদিও সে আসরে ১৬টি দেশের মধ্যে ১১টি দেশই অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল।
১৯৭০ সালের বিশ্বকাপে দেশটি অংশ নেয়ার যোগ্যতা অর্জন করে; কিন্তু ইতালি, সুইডেন ও উরুগুয়ের গ্রুপে তলানিতে থেকে আসর শেষ করে তারা।
১৯৭৪ সালে এএফসির প্রতিযোগিতা থেকে ইসরাইলকে বাদ দেয়ার প্রস্তাব উত্থাপন করে মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ কুয়েত। ১৭ সদস্যের মধ্যে ১৩টিই এ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়ায় এশিয়ার ফুটবলে ইসরাইলের দরজা বন্ধ হয়ে যায়।
আশির দশকের শুরু থেকে দেশটি ইউরোপিয়ান টুর্নামেন্টে অংশ নেয়া শুরু করে। ১৯৮২ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে তারা ইউরোপিয়ান অঞ্চলের হয়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। কিন্তু এর পরের দুই আসর ১৯৮৬ ও ১৯৯০-এ তারা ওশেনিয়া অঞ্চলের হয়ে বাছাইপর্ব খেলে।
১৯৯১ সাল থেকে ইসরাইলের ক্লাবগুলো ইউরোপিয়ান ক্লাব কম্পিটিশনে অংশ নিতে শুরু করে। এরপর ১৯৯৪ সালে দেশটি উয়েফার সদস্যপদ লাভ করে।
তখন থেকে নিয়মিতই ইসরাইল ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে এবং দেশটির ক্লাবগুলোও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও ইউরোপা লিগের মতো আসরে খেলছে।
এখন পর্যন্ত সাতটি ইসরাইলি ক্লাব চ্যাম্পিয়ন্স লিগে অংশ নিয়েছে। ম্যাকাবি হাইফা ও ম্যাকাবি তেল আবিব তার মধ্যে অন্যতম।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।