রাজধানীর র্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন হোটেলে গত ১২ জুলাই অনুষ্ঠিত হয়েছে সাসটেইনাবিলিটি সামিট ২০২৫। আকিজ বশির গ্রুপের পরিবেশনায় এবং এসএমসি এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড-এর সঞ্চালনায় আয়োজিত এই সামিটের ২য় সংস্করণ এটি।
দিনব্যাপী এই সম্মেলনে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়িক প্রতিনিধি, নীতিনির্ধারক, জলবায়ু ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ ও সামাজিক উদ্যোক্তারা অংশ নিয়ে দেশের ব্যবসায়িক খাত এবং উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে টেকসই উন্নয়ন নিয়ে অগ্রগামী আলোচনায় যুক্ত হন এবং পারস্পরিক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন।
তিনটি কি নোট সেশন, ৩টি প্যানেল আলোচনা, ২টি ইনসাইট সেশন ও একটি কেস স্টাডির সমন্বয়ে সাজানো এই আয়োজনে প্রাধান্য পায় দেশের অভ্যন্তরে পরিচালিত ব্র্যান্ড ও বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গুলো কিভাবে যথাযথ পরিকল্পনা ও নীতিগত কৌশলের অবলম্বন করে জাতিসংঘের এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ভূমিক রাখতে সক্ষম হয় তার রুপরেখা প্রণয়নে।
সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের গ্রুপ সিইও এবং নির্বাহী সম্পাদক সাজিদ মাহবুব বলেন, “টেকসইতা এখন আর কোনো বিকল্প নয়—এটাই ভবিষ্যতমুখী ব্যবসার ভিত্তি। সাসটেইনাবিলিটি সামিটের এই ২য় আসরের মাধ্যমে আমরা এমন একটি শক্তিশালী সংলাপ তৈরি করতে চাই, যা নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের একত্রিত করে কার্যকর উদ্যোগে অনুপ্রাণিত করবে, উদ্ভাবনকে উৎসাহ দেবে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জনে সম্মিলিত যাত্রাকে ত্বরান্বিত করবে। এখনই আমাদের সচেতন ও জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার সময়।”
এই বছরের সামিটে কি নোট বক্তব্য প্রদান করেন শেহজাদ মুনিম, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ডিরেক্টর, লিন্ডে বাংলাদেশ লিমিটেড; প্রফেসর ড. মোহাম্মদ নুরুন্নবী, ইউনেসকো চেয়ার – এডুকেশন ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট, গ্রীন স্কিলস অ্যান্ড ক্লাইমেট অ্যাকশনস; ফাউন্ডিং প্রেসিডেন্ট এন্ড সিইও – গ্লোবাল, অক্সফোর্ড ইমপ্যাক্ট গ্রুপ; এবং রজার লেভারমোর, সিনিয়র স্ট্র্যাটেজি অ্যাডভাইজর, প্রেসিডেন্ট এন্ড স্কুল অব ম্যানেজমেন্ট, এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি।
অন্যান্য আলোচনা গুলোতে উপস্থিত ছিলেন আহসান খান চৌধুরী, চেয়ারম্যান এন্ড সিইও, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ; সাব্বির হাসান নাসির, ম্যানেজিং ডিরেক্টর, এসিআই লজিস্টিকস লিমিটেড (স্বপ্ন); সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, ম্যানেজিং ডিরেক্টর এন্ড সিইও, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি; সায়েফ নাসির, ম্যানেজিং ডিরেক্টর, সোশ্যাল মার্কেটিং এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড; দেবাশীষ রায়, ডিরেক্টর – অ্যাডভাইজরি এন্ড পার্টনারশিপস, বাংলাদেশ ইমপ্যাক্ট ইনভেস্টমেন্ট এক্সচেঞ্জ (আইআইএক্স); তাসনীম তায়েব, হেড অব এনভায়রনমেন্টাল কমপ্লায়েন্স এন্ড সাসটেইনেবিলিটি, সাউথ এশিয়া, কোটস; দীপেশ নাগ, ম্যানেজিং ডিরেক্টর, গ্রামীণ ডানোন ফুডস লিমিটেড; সুনীল আইজ্যাক, কান্ট্রি ম্যানেজিং ডিরেক্টর, ইডটকো বাংলাদেশ কো. লিমিটেড; ড. এ. কে. এনামুল হক, ডিরেক্টর জেনারেল, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস) সহ আরো বিশেষজ্ঞ পেশাজীবীরা।
শেহজাদ মুনিম তাঁর কী-নোট বক্তৃতায় বলেন, “টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জন এখন কেবল একটি বিকল্প নয়—এটি টিকে থাকার শর্ত। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমাদের দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার এবং আন্তঃখাত সহযোগিতা প্রয়োজন। পরিবেশ, সামাজিক দায়বদ্ধতা ও সুশাসন (ইএসজি) কোনো দাতব্য কাজ নয়—এটি ব্যবসা ও শাসন ব্যবস্থার মূল চালিকাশক্তি হওয়া উচিত, যদি আমরা সত্যিই ২০৩০ সালের লক্ষ্যমাত্রাগুলো পূরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকি। অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য, কিন্তু পরিবেশগত সূচকগুলো বর্তমানে চরম ঝুঁকির মুখে। উদাহরণস্বরূপ, পানি সংরক্ষণ কৌশল মিথেন গ্যাস নির্গমন হ্রাসে সহায়তা করতে পারে এবং কার্বন ট্রেডিংয়ের সম্ভাবনাময় বাজারে প্রবেশের পথ খুলে দিতে পারে। রাজশাহীর মতো শহর দেখিয়েছে, কীভাবে স্থানীয় পরিকল্পনা ও নাগরিক সম্পৃক্ততা মিলিয়ে পরিবেশগত স্বাস্থ্য উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করা যায়। তাই এখনই সময় এসডিজি বাস্তবায়নকে রাজনৈতিক অঙ্গীকারপত্রের সঙ্গে সুস্পষ্টভাবে যুক্ত করার, যেন দীর্ঘমেয়াদি নীতি নির্ধারণ ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়।”
একটি প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা হিসেবে টেকসই চর্চার প্রসার এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা অর্জনে টেকসইতার মুখ্য ভূমিকা নিয়ে সংলাপ গুলোতে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়। এছাড়াও বিশেষভাবে গুরুত্ব পায় উৎপাদন খাতে ইএসজির বাস্তবায়নে তথ্য ও উপাত্তের ব্যবহার, টেকসই জাতি গঠনে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের প্রয়োজনীয়তা, এবং সবুজ বাংলাদেশ বিনির্মানে রূপান্তর ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার মতো বিষয় গুলো।
সামিটের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যতিক্রমী একটি সেশনে দেশের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ এক প্যানেল আলোচনা। সাসটেইনেবল ব্র্যান্ড ইনিশিয়েটিভ-এর প্রজেক্ট লিড জান্নাতুল ফেরদৌসীর সঞ্চালনায় এই তরুণরা টেকসই উন্নয়ন ও ভবিষ্যতের নেতৃত্ব নিয়ে নিজেদের ভাবনা, দৃষ্টিভঙ্গি এবং চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেন।
সাসটেইনাবিলিটি সামিট ২০২৫ আকিজ বশির গ্রুপের পরিবেশনা এবং এসএমসি এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের সঞ্চালনায় আয়োজিত হয়েছে। আয়োজনটির স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার – ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভার্টাইজিং অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ, এশিয়া মার্কেটিং ফেডারেশন ও মার্কেটিং সোসাইটি অব বাংলাদেশ। হসপিটালিটি পার্টনার – র্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন হোটেল ঢাকা; পিআর পার্টনার – ব্যাকপেজ পিআর এবং অফিসিয়াল ক্যারিয়ার পার্টনার – টার্কিশ এয়ারলাইনস। সামিটিটির আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম ও সাসটেইনেবল ব্র্যান্ড ইনিশিয়েটিভ। সাসটেইনাবিলিটি সামিট ২০২৫ বাংলাদেশ ইনোভেশন কনক্লেভের একটি উদ্যোগ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।