জুমবাংলা ডেস্ক : পথচারীদের ব্যস্ত সড়ক পার হওয়ার নিরাপদ মাধ্যম ফুটওভার ব্রিজ। রাজধানীতে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে এসব ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হলেও সঠিক তদারকির অভাবে অনেকটা ব্যবহার অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। পথচারীদের সুবিধার্থে চলন্ত সিঁড়ি যুক্ত করলেও সেগুলো বেশির ভাগ সময়ই থাকে নষ্ট। পাশাপাশি ফুটওভার ব্রিজগুলোতে ভবঘুরে আর মাদকসেবীদের আড্ডায় ঝুঁকিতে থাকেন পারাপারকারীরাও। এমনকি বনানীতে নষ্ট স্কেলেটরের যন্ত্রাংশ পর্যন্ত খুলে নিয়ে যাচ্ছে টোকাই-হকাররা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু নির্মাণ করে শেষ। কিন্তু সঠিক ব্যবস্থাপনার দিকে কোনো নজর নেই কর্তৃপক্ষের। রক্ষণাবেক্ষণের নামে লাখ লাখ টাকা খরচ হলেও আদৌ কোনো সুফল মিলছে না।
২০১৪ সালে রাজধানীর বনানী সৈনিক ক্লাবসংলগ্ন স্থানে প্রথম স্থাপন করা হয় চলন্ত সিঁড়ির সুবিধা সংবলিত ফুটওভার ব্রিজ। তখন কেইস (ক্লিন এয়ার অ্যান্ড সাসটেইনেবল এনভায়রনমেন্ট প্রজেক্ট) প্রকল্পের আওতায় এ স্কেলেটর স্থাপন করে পরে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
নির্মাণের সময় বলা হয়েছিল, প্রতিদিন সিঁড়ি দুটি চলবে কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা। থাকবে জেনারেটরের ব্যবস্থাও। কিন্তু তেমন একটা সুফল পায়নি নগরবাসী। ব্রিজটির সিঁড়ি দুটি অধিকাংশ সময়ই থাকে অচল। দীর্ঘদিন পরিষ্কার না করায় জমে আছে ময়লা আবর্জনা। বর্তমানে দীর্ঘদিন এটি বন্ধ থাকায় সেখানের দামি যন্ত্রাংশ খুলে নিয়ে যাচ্ছে টোকাইরা। এতে ক্ষতি হচ্ছে রাষ্ট্রীয় সম্পদের। সিটি করপোরেশনের তদারকির অভাবে এটি ঘটছে বলে মনে করছেন এখানকার পথচারীরা।
একজন পথচারী বলেন, একবার স্কেলেটর নষ্ট হলে সেটি মেরামত সাধারণত সহজে করা হয় না। আর সেই সুযোগে টোকাইরাও অনেক মালামাল নিয়ে যায়। আসলে বয়স্ক মানুষ এত উঁচু সিঁড়ি বেয়ে উঠতে পারেন না, এজন্য স্কেলেটর খুবই দরকার। কিন্তু সেটির সুফল তো কেউ পাচ্ছে না। শুধু এ স্কেলেটর নয়, রাজধানীর বেশির ভাগ ফুটওভার ব্রিজের স্কেলেটরই নষ্ট।
সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ফুটওভার ব্রিজ ঘুরে দেখা যায়, নতুন-পুরাতন সব ফুটওভার ব্রিজের বিভিন্ন কোনায় জমে আছে ময়লা। যে কয়েকটি চলন্ত সিঁড়িযুক্ত ফুটওভার ব্রিজ আছে, সেগুলোর অধিকাংশেই চলন্ত সিঁড়ি অচল। সিঁড়ি জুড়ে ময়লা কাগজ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। চলন্ত সিঁড়ির গায়ে জুড়ে দেওয়া হয়েছে বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক প্রচারণার পোস্টার। দীর্ঘ সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ না করায় ফুটওভার ব্রিজগুলোর এই দশা বলে মনে করেন পথচারীরা।
এদিকে সকালে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সড়ক পরিষ্কার করতে দেখা গেলেও ওপরের ফুটওভার ব্রিজগুলো অপরিচ্ছন্ন রেখে দেওয়া হচ্ছে। জিগ্যেস করলে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা জানান, সড়কের পাশাপাশি ফুটওভার ব্রিজ পরিষ্কার করতে হবে এমন কোনো নির্দেশনা তাদের দেওয়া নেই। তাছাড়া সাধারণ ঝাড়ু ছাড়া ওভারব্রিজ পরিষ্কারের জন্য তেমন বিশেষ কিছু দেওয়া হয় না তাদের।
শামীম হোসেন নামে একজন জানান, একে তো খুব রিস্ক নিয়ে ব্রিজ দিয়ে যাওয়া আসা করি, তার মধ্যে আবার ব্রিজের ওপর দুই পাশে শুয়ে থাকে। এখানে বসেই ওরা নেশা করে। আমাদের যেতে অনেক ডিস্টার্ব করে।’
সিটি করপোরেশনের তথ্য বলছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে রয়েছে ৪৭টি ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে রয়েছে ৩৫টি ফুটওভার ব্রিজ। আর উত্তর সিটির চারটি ফুটওভার ব্রিজে আছে আটটি চলন্ত সিঁড়ি। একেকটি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের ব্যয় হচ্ছে ৫০ লাখ থেকে ৩ কোটি টাকা। আর চলন্ত সিঁড়ি যুক্ত হলে বাজেটে যোগ হয় আরো ১ থেকে দেড় কোটি টাকা। নির্মাণ ব্যয়ে এত বাজেট রাখা হলেও পরে সঠিকভাবে তদারকি করছে না কর্তৃপক্ষ। করা হয় না নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ। যার কারণে অল্পদিনেই সিঁড়িগুলো ক্ষয় হয়ে যায়। সঙ্গে বাড়তি ভোগান্তি যোগ করে সেতুর ওপর ভবঘুরে, মাদকসেবীদের আড্ডা আর ভ্রাম্যমাণ দোকানের পসরা।
বনানী ফুটওভার ব্রিজের নষ্ট স্কেলেটরের যন্ত্রাংশ টোকাইরা নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে উত্তর সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পুর) খন্দকার মাহবুব আলম বলেন, বনানীর বিষয়টি আমি জানি। এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত আপডেট দিতে পারবেন আমাদের নির্বাহী প্রকৌশলী। এ বিষয়ে জানার জন্য উত্তর সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী নাঈম রায়হান খানকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ধরেননি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।