জুমবাংলা ডেস্ক: ২০১৩ সালে ওএসডির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি রিট করেছিলেন সাবেক সচিব এম আসাফউদ্দৌলাহ৷ রিটকারির আইনজীবী হিসেবে দীর্ঘ আইনি লড়াই চালিয়েছেন ব্যারিস্টার অনীক৷ তিনি বলছিলেন, রাষ্ট্রের অপচয় বন্ধে তাঁদের এ পদক্ষেপ৷ খবর ডয়েচে ভেলের।
একজন নারী সহকর্মীর সঙ্গে জামালপুরের ডিসি আহমেদ কবীরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর তাঁকে ওএসডি করা হয়েছে৷ তাঁর বিরুদ্ধে একটি তদন্ত কমিটিও করা হয়েছে৷ আহমেদ কবীরকে ওএসডি করার পর প্রশ্ন উঠেছে এটা কি কোন শাস্তি? না-কি শাস্তির প্রাথমিক পদক্ষেপ?
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কর্মকর্তাদের অসদাচরণেওএসডি একটি প্রাথমিক পদক্ষেপ৷ তবে এটি আইনগত কোনো শাস্তি নয়৷ তদন্তের পর অভিযুক্ত হলে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে৷ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিচার না হওয়া একটি খারাপ দৃষ্টান্ত৷ এটি না হলে প্রশাসনের চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়ে৷ আবার কাউকে ওএসডি করে শুধু শুধু বসিয়ে বেতন দেওয়া হলে সেটা রাষ্ট্রের অপচয়৷ এটা করা যাবে না৷”
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সোমবার পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে ৩৫০ জনের মতো কর্মকর্তা ওএসডি আছেন৷ এর মধ্যে ২০০ কর্মকর্তা উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে গেছেন৷ নিয়ম অনুযায়ী বিদেশে যাওয়ার আগে তাদের ওএসডি করা হয়েছে৷ আর প্রায় দেড়শ কর্মকর্তা ওএসডি হয়ে দেশেই আছেন৷ নানা অভিযোগের কারণে কিছু কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছে, আর কিছু কর্মকর্তাকে এমনিতেই ওএসডি করে রাখা হয়েছে৷ তারা বেতন ভাতা, সুযোগ সুবিধা সবই পাচ্ছেন৷ এমনকি পদোন্নতিতেও কোন অসুবিধা নেই৷
কিছু কর্মকর্তাকে ওএসডি করে শুধু শুধু বসিয়ে বেতন দেওয়া হচ্ছে? এটা রাষ্ট্রের অপচয় কি-না? জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আগে রাজনৈতিক বিবেচনায় অনেক ওএসডি করা হতো৷ এখন সেটা আর নেই৷ দেড়শর মতো কর্মকর্তা যারা ওএসডি হয়ে আছেন, তাদের কারো বিরুদ্ধে হয়ত অভিযোগের তদন্ত হচ্ছে? আর কিছু কর্মকর্তাকে ওএসডি করে রাখা হয় রাষ্ট্রের প্রয়োজনেই৷ হঠাৎ কোন সংকট হলে তাদের সেখানে পাঠানো হয়৷ যেমন ধরেন রোহিঙ্গা ইস্যু৷ এখানে হঠাৎ করেই কিছু কর্মকর্তার প্রয়োজন হয়ে পড়ল, তখন সেখানে তাদের পাঠানো হয়৷ ওএসডি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া৷”
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ বছরে প্রশাসনের দুই হাজার ৭৪৮ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারিসহ বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ পাওয়া যায়৷ এসব অভিযোগ তদন্ত করে ৩৬৫ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রাথমিক সত্যতা পায় মন্ত্রণালয়৷ এরপর প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট বিধিমালার আলোকে ৩৬৫ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়৷ এর আগেসহ এ নিয়ে সর্বমোট ৪৪০টি বিভাগীয় মামলার মধ্যে গত ১০ বছরে ৬৭ জন কর্মকর্তাকে গুরুদণ্ড, ১২৬ জন কর্মকর্তাকে লঘুদণ্ড, ২০৩ জন কর্মকর্তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে৷ অবশিষ্ট ৪৪টি বিভাগীয় মামলার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন৷
২০১৩ সালে ওএসডির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন সাবেক সচিব এম আসাফউদ্দৌলাহ৷ তার আইনজীবী ব্যারিস্টার অনিক আর হক বলেন, আদালতের নির্দেশে তখন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে আদালতে ৯ বছরের একটি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়৷ সেখানে দেখা যায়, এই সময়ে ৩ হাজার ৬০৫ জন কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছে৷ তাদের পেছনে রাষ্ট্রের ব্যয় হয়েছে ১৫০ কোটি ৯১ লাখ ৫৮ হাজার ৭ টাকা৷ তিনি বলেন, ১৯৯১ সালের ৩ অক্টোবর মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে সর্বনিম্ন ৪৫ এবং সর্বোচ্চ ১৫০ জনকে ওএসডি করে রাখার বিধান রয়েছে৷ কিন্তু বর্তমানে এর ব্যতিক্রম হচ্ছে৷ তাই ওএসডির বিষয়ে আদালতের কাছ থেকে সিদ্ধান্ত চাওয়া হয়েছে৷ এক সপ্তাহের মধ্যেই আদালত সিদ্ধান্ত দেবেন৷
সর্বোচ্চ ১৫০ জনকে ওএসডি রাখার যে বিধান রয়েছে, সে ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘‘১৯৯১ সালের যে জনবল ছিল, এখন তো অনেক বেড়েছে৷ তবে ওই ধরনের প্রজ্ঞাপন থাকলে সেটা সংশোধন করা হবে৷ এটা বলতে পারি, আগের চেয়ে ওএসডি এখন অনেক কমে গেছে৷ সবাইকে কাজে লাগানো হচ্ছে৷”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।