লাইফস্টাইল ডেস্ক : ওজন বাড়ার সাথে সাথে আমাদের দেহে এমন অনেক পরিবর্তন ঘটে যা স্বাভাবিক ওজনের মানুষের মধ্যে দেখা যায় না। সামান্য কিছু ওজন বাড়া তেমন দোষের না হলেও হু হু করে ওজন বেড়ে যাওয়ার মানে হলো আপনার শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রম নষ্ট হওয়ার পথে। স্বাদ নষ্ট হয়ে যাওয়া, বিষণ্ণতা, দীর্ঘমেয়াদী অসুখবিসুখ, শ্বাসকষ্ট, গর্ভধারণ ক্ষমতা নষ্ট হওয়া এবং হৃদরোগ ইত্যাদির সাথে দেহের অতিরিক্ত ওজন সরাসরি সম্পৃক্ত।
ওজন বাড়ার ফলে আপনার দেহে যেসব সমস্যা তৈরি হতে শুরু করে আমরা তার একটি তালিকা করেছি। আসুন জেনে নেই বিস্তারিত।
১. স্বাদ নষ্ট হয়ে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা তৈরি করে
সাধারণত সুস্বাদু খাবার বেশি মাত্রায় খেতে খেতেই ওজন বাড়িয়ে ফেলি আমরা। কিন্তু ওজন বাড়ার পর এর সাথে যোগ হয় স্বাদ নষ্ট হয়ে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা। গবেষণায় দেখা গেছে, স্বাভাবিক মানুষের চেয়ে স্থূল ব্যক্তিদের ২৫% বেশি খাওয়া পড়ে। এর কারণ এই না যে সে আগের অতিরিক্ত খাওয়ার ধারাবাহিকতা রক্ষা করছে, আসলে তার স্বাদ নষ্ট হয়ে গেছে বলে অতিরিক্ত খেতে বাধ্য হচ্ছে।
২. প্রায়ই মাথা ব্যথা হয়
ওজন বেড়ে যাওয়ার পর প্রায়ই আপনার মাথা ব্যথা করবে। আমেরিকান মাইগ্রেন ফাউন্ডেশনের মতে, জটিল মাইগ্রেনের ব্যথায় স্বাভাবিক ওজনের মানুষের চেয়ে অতিরিক্ত ওজনের মানুষের আক্রান্ত হওয়ার চিত্র বেশি দেখা যায়। উল্লেখ্য যে, অতিরিক্ত ওজনের কারণেই যে মাথা ব্যথা হয় বিষয়টি এমন না, কিন্তু মাথা ব্যথার একটি ঝুঁকিপূর্ণ কারণ হলো স্থূলতা।
৩. রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে যায়
সুস্থ কোষ গঠনে কোলেস্টেরলের প্রয়োজন। কিন্তু রক্তে অতিরিক্ত মাত্রায় খারাপ কোলেস্টেরলের উপস্থিতি হৃদরোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ওজন বাড়ার সাথে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ বৃদ্ধির যোগসূত্র রয়েছে এবং রক্তনালীতে এই কোলেস্টেরল জমাট বাধতে দেখা যায়। ফলে রক্তনালী দিয়ে সঠিক মাত্রায় রক্ত প্রবাহিত হতে পারে না এবং হৃৎপিণ্ডে প্রয়োজনীয় পরিমাণ অক্সিজেন সরবরাহ হয় না। এই কারণে মস্তিষ্কও অক্সিজেন থেকে বঞ্চিত হয়, যা হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
৪. বিষণ্ণতা ভর করে থাকে
গবেষকদের মতে বিষণ্ণতার সাথে ওজন বাড়ার গভীর সম্পর্ক রয়েছে। ওজন বাড়লে মানসিক অবস্থারও পরিবর্তন ঘটে এবং মানুষ বিষণ্ণ হতে শুরু করে, বিশেষ করে নারীদের মধ্যে বিষণ্ণতা বেশি দেখা যায়। অন্য আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, স্বাভাবিক ওজনের মানুষের চেয়ে স্থূল ব্যক্তিদের বিষণ্ণতায় ভোগার হার প্রায় ৫৫% বেশি।
৫. গর্ভধারণে সমস্যা তৈরি হয়
ওজন বাড়ার ভয়াবহ পরিণতি স্বীকার করতে হয় মেয়েদের। যেসব মেয়েদের অতিরিক্ত ওজন রয়েছে তাদের মধ্যে সন্তান জন্মদানে অক্ষম হয়ে পড়ার হার অনেক অনেক বেশি। অতিরিক্ত মেদ দেহে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে। যা তাদের ঋতুচক্র এবং ডিম্বাণুর উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ফলাফল হিসাবে অনেকের বন্ধ্যত্ব বরণ করে নিতে হয়।
৬. পেশির ব্যথা বেড়ে যায়
ওজন বাড়লে দেহে ভিটামিন ডি এর অভাব তৈরি হয়। ভিটামিন ডি একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান যা দেহে ক্যালসিয়াম শোষণ ও হাড়ের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এছাড়াও অটোইমিউন ডিজিজ, ক্যান্সার এবং দীর্ঘমেয়াদী ব্যথা ও বিষণ্ণতার সাথে লড়াই করে। যাদের শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাব দেখা দেয় তাদের দেহের বিভিন্ন স্থানে ব্যথা দেখা দিতে শুরু করে। ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট এবং সূর্যালোক থেকে ভিটামিন ডি এর অভাব পূরণের কথা ভাবছেন? কিন্তু এতে অতিরিক্ত ফ্যাটি টিস্যু দেহে মিশে যেতে পারে। তাই ওজন কমানোই একমাত্র পন্থা।
৭. নাক ডাকার পরিমাণ বেড়ে যায়
অনেকের ধারণা শরীরের দৃশ্যমান অংশেই কেবল মেদ জমে। আসলে তা নয়। ওজন বাড়া মানে শরীরের সকল অংশে মেদ সমবন্টন হওয়া। যার ভাগ গলা এবং ঘাড়ের অংশও পেয়ে থাকে। ফলে শ্বাসনালী সরু হয়ে পড়ে। ফলাফল হিসাবে ঘুমের মধ্যে বিকট শব্দে নাক ডাকার সমস্যা দেখা দেয়।
৮. ডিএনএ’র উপর ভাব বিস্তার করে
বিজ্ঞানীরা বলছেন, যদিও আমাদের জিন জীবনব্যাপী পরিবর্তন হয় না, কিন্তু আমাদের জীবনযাত্রায় প্রভাবিত হয়। শরীরের বাড়তি ওজন আমাদের ধারণার বাইরে গিয়ে ডিএনএ’র উপরও প্রভাব বিস্তার করে। এর প্রভাবে মানব দেহে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের জন্ম দেয় এবং এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে বহন করার জিন ম্যাপিং করতে ভূমিকা রাখে।
৯. বারবার প্রস্রাব হয়
ওজন বাড়লে ঘন ঘন টয়লেটে যাওয়া প্রবণতা বেড়ে যায়, এটা অনেকেই খেয়াল করেন না। এটি কিডনি রোগের লক্ষণ যা অতিরিক্ত ওজনের কারণে সৃষ্টি হয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, স্বাভাবিক ওজনের মানুষের চেয়ে কিডনি রোগ এবং কিডনি অকেজো হওয়ার হার স্থূল মানুষের প্রায় ৭গুণ বেশি।
১০. শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা তৈরি হয়
অতিরিক্ত ওজনের ফলে ঘুমের মধ্যে আপনার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে পারে- যা স্লিপ অ্যাপনিয়া নামে পরিচিত। শ্বাসনালীর উপরের দিকে চর্বি জমে বাতাস চলাচলের পথ সরু করে দেয়। ফলে শ্বাসনালী দিয়ে স্বাভাবিক ভাবে বাতাস চলা চল করতে পারে না কিংবা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় এবং মস্তিষ্কে সিগন্যাল যায় যে আপনার দম বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে আপনি মাঝ রাতে ঘুম ভেঙ্গে জেগে ওঠেন এবং আপনার ঘুমও নষ্ট হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।