স্পোর্টস ডেস্ক : ইংলিশ কাউন্টি ডার্বিশায়ারের নবম বিভাগে গত শনিবার এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে। মিকলওভার ক্রিকেট ক্লাবের সঙ্গে ডার্লি অ্যাবি ক্রিকেট ক্লাবের এক দিনের ম্যাচটিতে আগে ব্যাটিং করে ৩৫ ওভারে ৪ উইকেটে ২৭১ রান করে মিকলওভার। জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে ডার্লি ৪৫ ওভার ব্যাটিং করে ৪ উইকেটে ২১ রান তুললে ম্যাচটি ড্র হয়ে যায়!
মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, এটা তো টেস্ট ম্যাচ না, একদিনের ম্যাচে এত রানে পিছিয়ে থাকলে আবার ড্র হতে পারে কীভাবে? এখানেই চলে আসে ডার্বিশায়ার ক্রিকেটের অদ্ভুত নিয়ম। যেখানে দুদল মিলে একদিনের ম্যাচে ব্যাটিং করতে পারে সর্বোচ্চ ৮০ ওভার। যারা রান তাড়া করবে, তাদের ওভার নির্দিষ্ট না থাকলেও প্রথমে ব্যাটিং করা দল সর্বোচ্চ ৪০ ওভার খেলতে পারবে। বিস্ময়ের এখানেই শেষ নয়, পরে ব্যাট করা দল চাইলে জয়ের চেষ্টা না করে ম্যাচ ড্র করতে পারবে।
আর এ কাজটাই করেছেন ডার্লির ওপেনার ইয়ান বেস্টউইক। পুরো ইনিংস উইকেটে থেকে ১৩৭ বলে খেলে কোনো রানই করেননি। ৪৮ বছর বয়সী এ ব্যাটসম্যানের অদ্ভুত এ ইনিংসের খবর মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে। এরপর রীতিমতো নেটিজেনদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে যান বেস্টউইক। বিভিন্ন দেশ থেকে সামাজিক মাধ্যমে তাঁকে অনুসরণও শুরু করে দিয়েছেন সমর্থকেরা।
যে ম্যাচ নিয়ে এতকিছু হয়ে গেল, সেটি ছিল পয়েন্ট তালিকার তলানির দুই দলের। আর ম্যাচটা ড্র হওয়ায় মিকলওভারের ১৮ পয়েন্টের বিপরীতে ৩ পয়েন্ট পেয়েছে ডার্লি।
দলটির এ তিন পয়েন্ট পাওয়ার পেছনে ব্রেস্টউইকের পাশাপাশি তাঁর সতীর্থদের অবদানও কম নয়। প্রথমে ব্যাটিং করা মিকলওভারের ওপেনার ম্যাক্স থম্পসনের ১২৮ বলে ১৮৬ রানের ঝড়ে ৩৫ ওভারে ২৭০ পেরিয়ে যাওয়ার পরই ইনিংস ঘোষণা করে দলটি।
জিততে হলে বাকি থাকা ৪৫ ওভারে ডার্লির লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৭২ রান। এ লক্ষ্যকে অসম্ভব মনে করে ইনিংসের শুরু থেকেই ড্র করার মনোভাব নিয়ে এগোতে থাকেন বেস্টউইক। ডার্লির আরেক ওপেনার উইলিয়াম কাটিং ১৪ বলে ৮ রান করে আউট হওয়ার পরে রিলে ফিজপ্যাট্রিক (৩ বল) ও ম্যাথিউ ভট্টাচার্য (১৩ বল) রানের খাতা খোলার আগেই ড্রেসিংরুমে ফিরে যান।
৮ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর থমাস বেস্টউইকের সঙ্গে চতুর্থ উইকেট জুটিতে ড্র করার লক্ষ্যে এগোতে থাকেন ইয়ান বেস্টউইক। থমাস ৭১ বলে এক বাউন্ডারিতে ৪ রান করে আউট হলেও আরেকপ্রান্তে ঠুকঠুক চালিয়ে যান ব্রেস্টউইক। এরপর নিকোলাস কাটিং উইকেটে এসে ৪৮ বছর বয়সী ওপেনারকে অনুসরণ করেন। তিনিও ৩৪ বল থেকে ০ রান করে ইনিংসের শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন।
মজার বিষয়, অদ্ভুত এ ম্যাচে মিকলওভারের বোলাররা মেডেন নিয়েছেন ৩৪টি। অন্যদিকে ১৩৭ বল খেলে কোনো রান না নিয়ে আলোচনায় আসা বেস্টউইক অবশ্য ভাগ্যের ছোঁয়াও পেয়েছেন। ম্যাচের ১০ম ওভারে দানিয়েল হিটনের বলে বোল্ড হয়েছিলেন বেস্টউইক। কিন্তু হিটনের বলটি নো হওয়ায় সে যাত্রায় বেঁচে যান বেস্টউইক। নতুন জীবন পেয়ে যা করলেন, তাতে ছাপিয়ে যায় ম্যাচের অন্য সবকিছুই।
এমন অদ্ভুতুড়ে ইনিংস খেলার কারণ হিসেবে বেস্টউইক বিবিসি রেডিও ডার্বিতে বলেছেন, ‘তুলনামূলকভাবে আমাদের দলের খেলোয়াড়রা ছিলেন তরুণ ও অনভিজ্ঞ। তাই ভেবেছিলাম, দেখি শেষ পর্যন্ত উইকেটে টিকে থাকা যায় কি না।’
এ ইনিংসের পর যে বেস্টউইক ভাইরাল হয়েছেন, সেটাও নিজ মুখেই জানিয়েছেন ডার্লি ওপেনার, ‘এটা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে গেছে। অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান, কাতারেও এটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। বিশ্বের সব প্রান্ত থেকে আমি ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাচ্ছি।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।