জুমবাংলা ডেস্ক : চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) ওষুধ রপ্তানি থেকে ২ কোটি ৭৫ লাখ ৯০ হাজার ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৫ শতাংশ কম। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম এসেছে ১৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় করোনাভাইরাস নিরোধক ওষুধ রপ্তানি না হওয়ায় সম্ভাবনাময় ওষুধ খাতের রপ্তানি নিম্নমুখী হয়েছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ওষুধ খাত থেকে ৩ কোটি ২৬ লাখ ডলার আয়ের লক্ষ্য ধরেছিল সরকার। গত অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে আয় হয়েছিল ৩ কোটি ৬৯ লাখ ৯০ হাজার ডলার। কিন্তু আয় হয়েছে ২ কোটি ৭৫ লাখ ৯০ হাজার ডলার।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যে দেখা যায়, প্রতি বছরই ওষুধ রপ্তানি থেকে আয় বেড়েছে। তবে ২০১৫ সালে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) জন্য ২০৩২ সাল পর্যন্ত ওষুধের মেধাস্বত্বে ছাড় (মেধাস্বত্ব অধিকার-ট্রিপস) দেয়ার পর থেকে এখাতের রপ্তানির পালে বাড়তি হাওয়া লাগে। এরপর করোনা চিকিৎসার ওষুধ রপ্তানি করে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেছে ওষুধ খাত।
তবে বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির মহাসচিব ও হাডসন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম শফিউজ্জামান বলেছেন, ‘করোনার ওষুধ রপ্তানি করে গত অর্থবছরে ভালো আয় করেছিলাম আমরা। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় এই ওষুধ রপ্তানি হচ্ছে না। তাই আয় কিছুটা নিম্নমুখী হয়েছে। অন্য কোনো কারণ নেই। বিভিন্ন দেশে আমাদের ওষুধের চাহিদা বাড়ছে। করোনার ওষুধ রপ্তানি না হলেও আমাদের রপ্তানি বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকবে।’
ওষুধশিল্প-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাভাইরাস মহামারিতে দেশের বিভিন্ন শিল্প খাত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লেও ওষুধশিল্পে তার কোনো প্রভাব পড়েনি। উল্টো করোনা এখাতে আশীর্বাদই বয়ে এনেছিল বলা যায়। অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা বাড়ার পাশাপাশি রপ্তানি আয় বাড়ছিল সমানতালে। রপ্তানি পণ্যের তালিকায় কোভিড-১৯ চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের অন্তর্ভুক্তি, গুণগত মানের উন্নয়ন ও সরকারের নীতিসহায়তার কারণে সুবাতাস বইছিল এখাতে।
তারা জানান, ২০২০-২১ অর্থবছরে কেবল কোভিড-১৯ চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ রপ্তানি থেকেই আয় হয়েছিল প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে তা আরও বেড়ে ৫০০ কোটি টাকার মতো দাঁড়ায়।
বাংলাদেশ মূলত ম্যালেরিয়া, যক্ষ্মা, ক্যানসার, কুষ্ঠরোগ, অ্যান্টি-হেপাটিক, পেনিসিলিন, স্ট্রেপটোমাইসিন, কিডনি ডায়ালাইসিস, হোমিওপ্যাথিক, বায়োকেমিক্যাল, আয়ুর্বেদিক ও হাইড্রোসিলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ওষুধ রপ্তানি করে থাকে।
২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর থেকে এই তালিকায় করোনাভাইরাস প্রতিরোধক ওষুধ যুক্ত হয়, ফলে এ শিল্পে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ আরও বেড়ে যায়। গত ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত তা অব্যাহত ছিল। কিন্তু বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি স্বাভাবিক হয়ে আসায় করোনাভাইরাস প্রতিরোধক ওষুধ আর এখন রপ্তানি হচ্ছে না।
বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির মহাসচিব ও হাডসন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম শফিউজ্জামান বলেন, ‘করোনার ওষুধ রপ্তানি করে গত অর্থবছরে ভালো আয় করেছিলাম আমরা। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় এই ওষুধ রপ্তানি হচ্ছে না। তাই আয় কিছুটা নিম্নমুখী হয়েছে। অন্য কোনো কারণ নেই। বিভিন্ন দেশে আমাদের ওষুধের চাহিদা বাড়ছে। করোনার ওষুধ রপ্তানি না হলেও আমাদের রপ্তানি বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের ওষুধশিল্পের অগ্রগতি এখন গর্ব করার মতো। বাংলাদেশ শুধু নিজেদের ওষুধ নিজেরাই উৎপাদন করে না বরং বিশ্বের শতাধিক দেশে ওষুধ রপ্তানি করে। অথচ স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে আমরা ৭০ শতাংশ ওষুধ বিদেশ থেকে আমদানি করতাম। এখন দেশের চাহিদার ৯৮ শতাংশ পূরণ করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ মানসম্মত ওষুধ রপ্তানি করছে।’
শফিউজ্জামান বলেন, ‘আমাদের ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্প অল্প সময়ের মধ্যে করোনাভাইরাস নিরোধক ওষুধের জেনেরিক সংস্করণ উৎপাদন করে সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে। ফলে ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যান্টি-ভাইরাল ড্রাগ রেমডেসিভির ও ফ্যাভিপিরাভির রপ্তানি বাড়াতে অবদান রেখেছিল। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় এখন এ ওষুধ থেকে রপ্তানি আয় কম আসছে। তবে এর মধ্য দিয়ে বিশ্ব অঙ্গনে আমাদের ভাবমূর্তি বেড়েছে। এর ফলে ভবিষ্যতে আমাদের রপ্তানি আরও বাড়বে।’
সরকারের নীতিসহায়তার প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো উচ্চপর্যায়ের নিয়ন্ত্রিত বাজারে তিন মাসের মধ্যে প্রবেশ করতে পেরেছে, যেখানে প্রবেশ করতে স্বাভাবিক অবস্থায় অন্তত দুই বছর সময় লাগত।’
ওষুধশিল্প-সংশ্লিষ্টরা জানান, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ থেকে রেমডেসিভির ও ফ্যাভিপিরাভিরের জেনেরিক সংস্করণটি আমদানি করছে।
বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির তথ্য অনুযায়ী, দেশের মোট চাহিদার ৯৭ শতাংশের বেশি ওষুধ স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হচ্ছে। এর পাশাপাশি ৪৩টি কোম্পানির বিভিন্ন প্রকারের ওষুধ ও ওষুধের কাঁচামাল যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের প্রায় ১৫৩টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে।
ঔষধ শিল্প সমিতির তথ্য অনুযায়ী, ওষুধ রপ্তানি আয়ের ২০ শতাংশই দখল করে আছে বেক্সিমকো। দ্বিতীয় অবস্থানে ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস। এছাড়া স্কয়ার, এসকেএফ, বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস, একমি ল্যাবরেটরিজসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ওষুধ রপ্তানি করে থাকে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।