জুমবাংলা ডেস্ক: যশোরের ঝিকরগাছার গঙ্গানন্দপুরে সাঈদের জন্ম ১৯৯১ সালে। মা-বাবার পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিনি তৃতীয়। গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাঁর পড়াশোনা শুরু। শেষে স্নাতকোত্তর হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে। গ্রাম তিনি ভালোবাসেন। গ্রামেই কিছু করতে চেয়েছেন। তাই পড়াশোনা শেষ করে ফিরে এসেছেন গ্রামে। গঙ্গানন্দপুরে। সাঈদ বলছিলেন, ‘হিসাব করে দেখেছি, আমার পড়াশোনার পেছনে সরকার ব্যয় করেছে ১৩ লাখ টাকা। সরকারকে এই টাকা দিয়েছে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। আমি আমার গ্রামের মানুষের জন্য কাজ করে সে ঋণ শোধ করতে চাই।’
সাঈদের কর্মকাণ্ড
সাঈদ কচুরিপানা দিয়ে হস্তশিল্প গড়ছেন। জৈব সার তৈরি করছেন ওই কচুরিপানা দিয়েই। মাছচাষ ও কৃষিকাজ করছেন। দুধ উৎপাদনের জন্য একটি গরুর খামারও তৈরি করেছেন। তাঁর সবজি খামারে বিষমুক্ত সবজি হয়। গঙ্গানন্দপুর সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতিও প্রতিষ্ঠা করেছেন। এর সদস্য এখন ১৩০ জন। সাঈদ গবেষণা ও লেখালেখি করেন নিয়মিত। ১৫০ বছর আগে জন্ম নেওয়া কবিয়াল আমেদ আলী সরদারের গান সংগ্রহ ও সম্পাদনার কাজ করছেন এখন। সাঈদের মাধ্যমেই ২০১৩ সাল থেকে ঝিকরগাছায় নিয়মিতভাবে বইমেলা হচ্ছে।
রবীন্দ্রনাথের কথা মনে রাখেন
কোনো কাজকেই ছোট করে দেখেন না সাঈদ। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘শুধু বড়ো জিনিস কল্পনা করিলেও হইবে না, বড় দান ভিক্ষা করিলেও হইবে না এবং ছোটো মুখে বড় কথা বলিলেও হইবে না, দ্বারের পার্শ্বে নিতান্ত ছোটো কাজ শুরু করিতে হইবে।’ সাঈদ চেয়েছেন মানুষের কষ্ট দূর করতে। তাই ভেবেছেন, কর্মীই হবেন।
কচুরিপানার সঙ্গে যোগ
কপোতাক্ষ নদের ধারে বাড়ি তাঁদের। নদটিকে তিনি উচ্ছল দেখেননি; বরং কচুরিপানায় ভর্তি দেখতেন। ২০১২ সাল থেকে তিনি কচুরিপানা-সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজছিলেন। তিনি পড়াশোনা করে দেখলেন, কচুরিপানা খুবই দ্রুত বংশবিস্তার করে। ১৯২০ সালের দিকে এ দেশে কচুরিপানা একটি বিরাট সমস্যা হিসেবে দেখা দেয়। এ কারণে ব্রিটিশ সরকার জলাভূমি আইন, মিউনিসিপ্যালিটি আইন, স্থানীয় সরকার আইন সংশোধন করে। ১৯৩৬ সালে কচুরিপানা আইনও জারি করা হয়। এ আইনে বাড়ির আশপাশে কচুরিপানা রাখা নিষিদ্ধ করা হয়। কচুরিপানা পরিষ্কার অভিযানে অংশ নেওয়া নাগরিকের দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায়। ১৯৩৭ সালের নির্বাচনে সব দলের নির্বাচনী ইশতেহারে বাংলাকে কচুরিপানার অভিশাপ থেকে মুক্ত করার অঙ্গীকার ছিল। শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে কচুরিপানা পরিষ্কার অভিযান জোরদার করেন। এ ক্ষেত্রে সাঈদ হাফিজ আরো অগ্রসর হতে চাইলেন। একে তিনি ব্যবহার উপযোগী করার কথা ভাবলেন। জৈব সার তৈরির সঙ্গে সঙ্গে কচুরিপানা দিয়ে পণ্য তৈরির কথাও মাথায় এলো তাঁর। তিনি প্রথমে এ থেকে সুতা তৈরি করলেন। তারপর ছত্রাকমুক্ত করার ট্রিটমেন্ট দিলেন। কচুরিপানা মসৃণ ও চ্যাপ্টা করার জন্য নিজেই একটি রোলার মেশিন তৈরি করেছেন। কচুরিপানা থেকে পণ্য তৈরিতে বড় বড় মেশিন লাগে না। রোলারের সঙ্গে লাগে শুধু সুই, কাপড়, কাটার, স্কেল ও আঠা।
কচুরিপানার পণ্য
কচুরিপানা থেকে প্রায় দেড় হাজার পণ্য তৈরি করা সম্ভব। তবে সাঈদ করেন শুধু ৫০ রকমের। এগুলো হচ্ছে লেডিস হ্যান্ড ব্যাগ, মাথার হ্যাট, ঘরে পরার স্যান্ডেল, ফ্রুট বাস্কেট, ডাইনিং টেবিল ম্যাট, পেন হোল্ডার ইত্যাদি। দাম ১০০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে। শোপিস হিসেবে তৈরি করেন চামচ, কাপ-পিরিচ, হাঁড়ি ইত্যাদি। বিদেশেও এগুলোর ভালো চাহিদা রয়েছে। এখন অনলাইন মার্কেট তৈরির কাজে হাত দিয়েছেন। অনন্য উদ্ভাবনার জন্য তিনি ২০১৭ সালে খুলনা বিভাগের শ্রেষ্ঠ তরুণ উদ্ভাবকের পুরস্কার পেয়েছেন। ২০১৮ সালে তিনি ঝিকরগাছা উপজেলার শ্রেষ্ঠ নবীন সমবায়ীর পুরস্কারও পান। এখন পর্যন্ত ১০ জন সুবিধাবঞ্চিত নারীকে কাজ দিয়েছেন। সাঈদ বলেছেন, পর্যাপ্ত বিনিয়োগ হলে দেশের ১০ লাখ বেকারের কর্মসংস্থান হতে পারে এ খাতে। প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যেতে পারে। সূত্র: কালের কন্ঠ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।