কিছুদিন পরেই যে পরীক্ষার মুখে পড়বেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, সেটি তিনি সহজেই পাস করে যাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। চলতি মাসেই তার সরকারের ওপর আস্থা ভোটের আয়োজন কতে যাচ্ছে কানাডীয় পার্লামেন্ট। যদিও ট্রুডোর লিবারেল পার্টি সেখানে সংখ্যালঘু এবং আর্থিক কেলেঙ্কারিতে তার অবস্থান কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছে, তারপরও বামপন্থী নিউ ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এনডিপি) এ নেতাকেই সমর্থন দিচ্ছে।
করোনাকালীন মন্দার মধ্যে পরিবার ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে পর্যাপ্ত সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেয়ায় ট্রুডোর বিপক্ষে যাচ্ছে না কানাডীয় পার্লামেন্টের চতুর্থ বৃহত্তম রাজনৈতিক দলটি। তবে, এর পরেই কঠিন সময় আসতে চলেছে ক্ষমতাসীনদের সামনে।
গত ২৩ আগস্ট প্রবীণ বিষয়ক মন্ত্রী ও বিমানবাহিনীর সাবেক হেলিকপ্টার নেভিগেটর এরিন ও’টুলকে নতুন নেতা হিসেবে বেছে নিয়েছে কনজারভেটিভ পার্টি। তিনি কানাডীয় পার্লামেন্টে বিরোধীদের পক্ষে নতুন শক্তি জোগাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কানাডার ১০ জন প্রাদেশিক প্রধানের মধ্যে সাতজনই কনজারভেটিভ সদস্য বা তাদের অনুসারী। অগ্রাধিকার ব্যয় ও প্রাদেশিক সরকারের ওপর কেন্দ্রীয় সরকারের প্রভাবের মতো বেশ কিছু ইস্যুতে তারা ট্রুডোর ওপর বিরাগভাজন। এনডিপি’ও কানাডীয় প্রধামন্ত্রীর কাছ থেকে বাড়তি সুবিধা দাবি করতে পারে। এ অবস্থায় ২০২১ সালের বসন্তেই (মার্চ থেকে জুন) আগাম নির্বাচন দিতে পারেন জাস্টিন ট্রুডো।
মহামারির তাণ্ডবের মধ্যে হয়তো খুব বেশি বিরোধিতায় পড়বে না ট্রুডো সরকার। গত ৩০ সেপ্টেম্বর দেশটির পার্লামেন্টে সর্বসম্মতিক্রমে শ্রমিকদের আর্থিক সহায়তা বিল পাস হয়েছে। বিরোধী নেতা ও’টুল ক্রমবর্ধমান আর্থিক ঘাটতির বিষয়ে সতর্ক করলেও তাৎক্ষণিক সহায়তা বন্ধের কথা বলেননি।
কানাডার পার্লামেন্টারি বাজেট অফিস (পিবিও) আশা করছে, চলতি বছর দেশটিতে আর্থিক ঘাটতি ৩৩০ বিলিয়ন কানাডীয় ডলারে পৌঁছাতে পারে, যা তাদের জিডিপির প্রায় ১৫ শতাংশ। এছাড়া সরকারি দেনার পরিমাণ বাড়তে পারে ১৭ শতাংশ পর্যন্ত।
তবে মূল যুদ্ধটা হবে আর্থিক সহায়তার বাইরে অন্য ইস্যুগুলো নিয়ে। ট্রুডো প্রধানত নীতিগতভাবে প্রাদেশিক প্রধানদের বিরোধিতার মুখে পড়বেন বলে মনে করেন মন্ট্রিল-ভিত্তিক থিংক ট্যাংক ইনস্টিটিউট ফর রিসার্চ অন পাবলিক পলিসির প্রেসিডেন্ট গ্রাহাম ফক্স।
জাস্টিন ট্রুডো শিশুসেবা, চাকরি প্রশিক্ষণের মতো যেসব প্রস্তাবনা দিয়েছেন সেগুলো মূলত প্রাদেশিক সরকারের দায়িত্ব। প্রদেশগুলো কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা আশা করে, প্রভাব বিস্তার নয়। তবে ট্রুডো সরকারের বক্তব্যে এসব দাবিকে অনেকটাই অবহেলা করা হয়েছে।
কানাডার বর্তমান সরকার ২০৫০ সালের মধ্যে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে আলবার্তার কনজারভেটিভ নেতা জ্যাসন কেনি অভিযোগ করেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার তেল-গ্যাস শিল্পের সহায়তায় খুব কম কাজ করছে।
গ্রাহাম ফক্স সতর্ক করে বলেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার প্রাদেশিক প্রধানদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ না করলে এই পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।
কানাডায় সংখ্যালঘু সরকারের আয়ুষ্কাল থাকে সাধারণত দুই বছর। ট্রুডো সরকারের এক বছর প্রায় শেষ হতে চলেছে। মহামারির কারণে এর মেয়াদ শেষ হওয়ার প্রক্রিয়া অনেকটাই ধীর গিয়েছিল। তবে গত গ্রীষ্মে সেটি আবারও স্বাভাবিক গতিতে ফিরেছে, সঙ্গে এসেছে ট্রুডো পরিবার ও তৎকালীন অর্থমন্ত্রী বিল মনরোর বিরুদ্ধে অনৈতিক আর্থিক সুবিধা নেয়ার অভিযোগ। দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেলে এসব বিতর্কের পালে নতুন হাওয়া লাগতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।