বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন (কপ-২৯) চলছে আজারবাইজানের বাকুতে। গত ১১ নভেম্বর শুরু হয়েছে এ সম্মেলন, চলবে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত। আজারবাইজান একটি তেলরাষ্ট্র। তবু এবারের জলবায়ু সম্মেলনের আয়োজক তারা। রাশিয়ার ভূরাজনীতি ও লবিংয়ের ফলে দেশটি এ সম্মেলন আয়োজনের দায়িত্ব পেয়েছে। এ দেশের অর্থনীতি পুরোপুরি নির্ভর করে জীবাশ্ম জ্বলানি উত্তোলনের ওপর। এমন এক দেশে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন আয়োজনের সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছেন গ্রেটা থুনবার্গসহ সব জলবায়ু কর্মী। সাম্প্রতিক এক বক্তৃতায় গ্রেটা বলেছেন, এটি ‘গ্রিনওয়াশ সম্মেলন’।
ইতিমধ্যেই বিশ্বনেতারা এ সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। আজ (১৪ নভেম্বর) এ সম্মেলনের চতুর্থ দিন। গত তিন দিনের বক্তৃতা শেষে অনেক নেতা দেশে ফিরেও গেছেন। আজকের আয়োজন মূলত জলবায়ু অর্থায়ন নিয়ে। জলবায়ু বিপর্যয় মোকাবেলা এবং জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর সাহায্য প্রয়োজন। এই দেশগুলো যেন জলবায়ু তহবিল থেকে সাহায্য পায়, তা নিশ্চিত করতে প্রতিনিধি দেশগুলো একটি চুক্তির জন্য কাজ করছে।
এই চুক্তি হলে উন্নয়নশীল দেশগুলো একটি কাঠামোর মাধ্যমে সাহায্য পেতে পারে। ২০০৯ সালের জলবায়ু সম্মেলনে চুক্তি হয়েছিল, বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন ডলার সাহায্য দেওয়া হবে। শুধু ২০২২ সালে এই প্রতিশ্রুতি পূরণ করা হয়েছে। অন্যান্য বছর এই সাহায্যের প্রতিশ্রুতি পূরণ করা হয়নি। এদিকে, সেই চুক্তিটি এ বছরই শেষ হয়ে যাচ্ছে।
তহবিলে কে কত টাকা কে দেবে, তা নির্ভর করে কার কাছে টাকা দাবি করা হচ্ছে, তার ওপর। উন্নয়নশীল দেশগুলোর জলবায়ু পরিস্থিতিতে ২ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি প্রয়োজন হতে পারে। তবে এ দেশগুলো ন্যূনতম ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার দাবি করছে।
এবারের আলোচনায় ২০৩৫ সালের মধ্যে বছরে কমপক্ষে ১ ট্রিলিয়ন ডলার তহবিলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অঙ্কটি বিশ্ব অর্থনীতির প্রায় ১ শতাংশ। ২০২১ সাল থেকে জাতিসংঘের জলবায়ু আলোচনার পরামর্শদাতা শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদদের একটি গ্রুপ—ইন্ডিপেন্ডেন্ট হাই-লেভেল এক্সপার্ট গ্রুপ অন ক্লাইমেট ফাইন্যান্সের (আইএইচএলইজি) ২০২২ সালের একটি গবেষণাপত্র থেকে এই চিত্র এসেছে।
প্রতি বছরই জলবায়ু সম্মেলনে আর্থিক আলোচনা নিয়ে প্রচুর উত্তেজনা, আলাপ বা সমালোচনা-পর্যালোচনা থাকে। যেমন এবারে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ঔপনিবেশিক ‘অপরাধের’ জন্য ফ্রান্সের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করার পর ফ্রান্সের পরিবেশমন্ত্রী গতকাল (বুধবার) বাকুগামী ফ্লাইট বাতিল করেছেন। আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলিই তাঁর দলকে আলোচনা রেখে দেশে ফেরার নির্দেশ দিয়েছেন। আর প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বেরিয়ে যাওয়া নিয়ে উদ্বেগ তো রয়েছেই।
বুধবার বারবাডোজের প্রধানমন্ত্রী মিয়া মোটলি বিষয়টি সমাধানের জন্য ট্রাম্পকে মুখোমুখি আলোচনার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র জলবায়ু চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেলে জলবায়ু তহবিলসহ নানান বিষয়ে সঙ্কট তৈরি হতে পারে।
প্রতি বছর জলবায়ু আন্দোলনকর্মীরা সম্মেলনে বিক্ষোভ দেখান। এবারও বিক্ষোভকারীরা সম্মেলনে রয়েছেন। এবারের মূল দাবি, যে ধনী দেশগুলো জীবাশ্ম জ্বালানী পুড়িয়ে এতদিন পৃথিবীকে উত্তপ্ত করেছে, তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কপ-২৯ সম্মেলনের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত বিশাল ফুটবল স্টেডিয়ামের ছাদে ব্যানার লাগানো হয়েছে। সেখানে লেখা, ‘তহবিল বাড়াও’। ধনী দেশগুলো শিল্পবিপ্লবের সময় থেকে এখন পর্যন্ত এত বেশি কার্বন নিঃসরণ করেছে, যার কারণে জলবায়ু সংকট তৈরি হয়েছে।
ফুটবল স্টেডিয়ামে প্রচারণাকারীরা উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলারের জলবায়ু অর্থায়নের আহ্বান জানাচ্ছে। জলবায়ু সংকট তৈরিতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর দায় খুব কম। তাই জলবায়ুর বিধ্বংসী প্রভাব থেকে দেশগুলো রক্ষা পেতে সাহায্যের প্রয়োজন হবে। ক্লাইমেট ফাইন্যান্স গ্রুপ ফর ল্যাটিন আমেরিকা অ্যান্ড দ্য ক্যারিবিয়ানের সান্ড্রা গুজম্যান বলেছেন, ‘আমরা সব উন্নত দেশকে দায়িত্ব নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
তাঁর দাবি, দেশগুলোকে ঋণ নয়, অনুদান দিতে হবে। বেসরকারী খাতের অর্থায়ন নবায়ণযোগ্য জ্বালানী প্রকল্পগুলো চালাতে পারে। তবে তাপপ্রবাহ, বন্যা ও ঝড় থেকে মানুষকে রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সরবরাহ করতে পারে না।
সমস্যা হলো, জলবায়ু অর্থায়নের কোনো সর্বসম্মত সংজ্ঞা নেই। চলমান চুক্তি অনুযায়ী এ বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রক্রিয়া ঠিক কী, তা পরিষ্কার করা নেই চুক্তিতে। দেশগুলো এবারের সম্মেলনে একটি সংজ্ঞায় একমত হতে পারে, আবার নাও পারে। তবে জলবায়ুর জন্য ক্ষতিকারক কিছু প্রকল্প থেকে সরে আসার সম্ভাবনা আছে। সান্ড্রা গুজম্যান বলেছেন, ‘কিছু দেশ বলছে, গ্যাসে বিনিয়োগও জলবায়ু অর্থায়ন, কারণ গ্যাস কয়লার চেয়ে কম নির্গমন করে। কিন্তু গ্যাস আসলে জীবাশ্ম জ্বালানি।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।