কম্পিউটার শব্দটির সঙ্গে আপনি যে পরিচিত, তা আর আলাদা করে না বললেও চলছে। কিন্তু এই বহুল প্রচলিত শব্দটি এল কোথা থেকে? মানুষ বোঝাতেও এককালে ব্যবহৃত হতো এ শব্দ। চমকে গেলেন? আরও অনেক চমক রয়েছে এ শব্দের ইতিহাসে। আজকাল সবখানেই কম্পিউটার দেখা যায়। এই কম্পিউটার এখন এত বেশি জড়িয়ে গেছে আমাদের জীবনের সঙ্গে যে এর কথা আর আলাদা করে বলা লাগে না। এটি এখন আমাদের জীবনের অংশ। এর শুরুটা হয়েছিল প্রায় ৭০ বছর আগে।
গত ৭০ বছরে, ১৯৬০-এর দশকের পরে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে কম্পিউটার। ১৯৮০ দশকের পরে অফিসের পাশাপাশি কিছু কিছু বাড়িতেও হাজির হয় এ যন্ত্র। এখন তো আপনার গাড়ি, বাড়ি, টিভি, এমনকি মঙ্গলগ্রহে পৌঁছে যাওয়া রোভারেও কম্পিউটার আছে। হাতের মাঝে বয়ে বেড়ানো আজকের স্মার্টফোনকেও কম্পিউটারই বলা যায়। এখনকার যেকোনো প্রযুক্তির পেছনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো না কোনো কম্পিউটার কাজ করছে। এই বহুল প্রচলিত কম্পিউটারের নামটি বা শব্দটি কে আবিষ্কার করেছেন, তা জানতে চান অনেকেই।
অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারি বা অভিধান বলছে, ‘কম্পিউটার’ শব্দের প্রথম পরিচিত ব্যবহার দেখা যায় ১৬১৩ সালে। ইংরেজ লেখক রিচার্ড ব্রেথওয়েটের দ্য ইয়ং ম্যানস গ্লেনিংস নামের একটি বইতে কম্পিউটার শব্দটি ব্যবহার করা হয়। মজার বিষয় হলো, সেই বইতে কম্পিউটার শব্দটি মেশিন বা যন্ত্র বোঝাতে ব্যবহৃত হয়নি। হিউম্যান-কম্পিউটার হিসেবে এটি প্রথম ব্যবহার করা হয়। হিউম্যান-কম্পিউটার মানে যে ব্যক্তি সাধারণ মানুষের চেয়ে দ্রুত গণনা করেন। এই মানুষগুলো গণিতে দক্ষ, অতি দ্রুত হিসেব করতে পারেন। এরা নানারকম কাজ করতেন।
যেমন সে কালে অনেক নারীকে হিউম্যান-কম্পিউটার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হতো। হার্ভার্ড মানমন্দিরে এরকম অনেক নারী হিউম্যান-কম্পিউটার ছিলেন। তখন নারীদের অনেকটা কম বেতন দেওয়া হতো, সে জন্যই তাঁদের এসব কাজে নিয়োগ দেওয়া হতো বেশি। উইকিপিডিয়া অনুসারে, ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত বেশির ভাগ হিউম্যান-কম্পিউটার হিসেবে কাজ করতেন নারীরা।
১৮২২ সালে ডিফারেন্স ইঞ্জিন ও অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিনের মতো প্রাথমিক শ্রেণির মেকানিক্যাল বা যান্ত্রিক কম্পিউটার তৈরি হয়। তখন থেকেই কম্পিউটার শব্দের পরিচিতি হয়ে ওঠে ‘গণনাকারী যন্ত্র’ হিসেবে। ১৯৪৬ সালে এনিয়াক বা ইলেকট্রনিক নিউমেরিক্যাল ইন্টিগ্রেটর অ্যান্ড কম্পিউটারের মতো ডিজিটাল ইলেকট্রনিক কম্পিউটারের উদ্ভাবন হয়। তখন থেকে কম্পিউটার শব্দটি আধুনিক অর্থে ডিজিটাল প্রোগ্রামেবল মেশিন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
কিন্তু এ শব্দের উৎপত্তি হলো কোথা থেকে? আসলে, শব্দটি এসেছে লাতিন ‘পুটার’ শব্দ থেকে। এর অর্থ ‘চিন্তা করা’ ও ‘ছাঁটাই করা’। ভার্জিলের ‘জর্জিক্স’ কবিতায় ছাঁটাই করা অর্থে পুটার শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। সেই কবিতায় লতাগুল্ম ছাঁটাই করে পরিপাটি করার কথা বলা হয়েছে।
রোমান নাট্যকার পাবলিয়াস টেরেন্স বিখ্যাত এক লাতিন উদ্ধৃতি লিখেছেন। তাঁর লেখা: ল্যাটিনে হিউম্যানি…..নিহিল এলিয়েনাম পুটো। অর্থাৎ ‘আমি একজন মানুষ, আর আমি মনে করি আমার কাছে অন্য কোনো মানুষ বিদেশি নন।’ কম্পিউটার শব্দটির আধুনিক অর্থ হলো হিসেব করা, মাপা ও গণনা করা। প্লিনির ন্যাচারাল হিস্ট্রিতে এশিয়ার প্রশস্ততা সঠিকভাবে গণনা করার অর্থে ‘কম্পিউটার’ শব্দের প্রয়োগ দেখা যায়।
ইতিহাসের কালরেখা ধরে আরেকটু এগিয়ে এলে দেখব, ইংরেজরা কয়েক শতাব্দী ধরে ‘কম্পিউট’ শব্দটি ব্যবহার করে আসছে। ১৬৬০ সালে স্যামুয়েল পেপিসের লেখায় ‘কম্পিউটিং’ শব্দটি দেখা যায়। তাঁর লেখায় দেখা যায়, ৩০টি জাহাজের বেতন গণনা করে ৬ হাজার ৫৩৮ পাউন্ড আসে। তখন এমন ব্যক্তিকে কম্পিউটার বলা হতো, যিনি গণনা করতে পারেন। ১৭৩১ সালে এডিনবার্গ সাপ্তাহিক জার্নাল-এ অল্পবয়সী বিবাহিত নারীদের স্বামীর আয় সম্পর্কে জানতে পরামর্শ দেওয়া হয়। এ সময় তা ‘কম্পিউট’ বা ‘গণনা’ করতে বলা হয় তাঁদের।
১৯৩৯ ও ১৯৪২ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাটানাসফ বেরি কম্পিউটার বানানো হয়। উদ্ভাবক জন অ্যাটানাসফ তাঁর গবেষণাপত্রে যন্ত্র ও গণনা—দুই অর্থেই কম্পিউটার শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। তিনি ‘একটি বিশেষজ্ঞ কম্পিউটার’ হিসেবে সমীকরণের একটি সেট সম্পূর্ণ করতে আট ঘণ্টা সময় নেওয়ার কথা বলেন। দশমিক ও বাইনারি সিস্টেম ব্যবহার করে কম্পিউটারের বিভিন্ন যান্ত্রিক অংশ নিয়েও আলোচনা করেন।
অন্যদিকে, ১৯২২ সালে নিউইয়র্ক টাইমস ‘টার্গেট কম্পিউটার’ ও ‘ব্যাটারি কম্পিউটার’ হিসেবে যুদ্ধের বর্ণনা করে। শত্রু জাহাজে গুলি চালানোর পরিসীমা খুঁজে বের করার জন্য শব্দ দুটি তৈরি করা হয়। কিছু ইন্টারনেট উৎস বলছে, ১৮৬৯ সালে পল মল গেজেটে ‘কম্পিউটার মেকানিক’ শব্দদ্বয়ের ব্যবহার দেখা যায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।