রঞ্জু খন্দকার, মিরপুর থেকে : শুক্রবার সকাল সাড়ে দশটা। সবে দোকান খুলছেন নান্নু মার্কেটের দোকানিরা। কেউ দোকানের শাটার তুলছেন কেউবা সামনের রাস্তায় পানি ছিটাচ্ছিলেন। এরই মধ্যে একজন ক্রেতা হাজির। একটা শার্ট কিনলেন তিনি। দাম– চার শ টাকা।
ওই ক্রেতা বললেন, নান্নু মার্কেটে কম দামে ভালো পোশাক পাওয়া যায়। এমন শুনে তিনি এসেছেন। এসে শোনা কথা বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে। শার্টটির মান ভালোই মনে হচ্ছে।
কথা শেষ হতে না হতে আরও কয়েকজন ক্রেতা ওই বিপণিবিতানে ঢুকলেন। এটি রাজধানীর মিরপুর ১১ নম্বরের পল্লবী এ ব্লক এলাকায় অবস্থিত।
নান্নু মার্কেটে কম দামে ভালো পোশাক পাওয়া যায়– এমন খবর এখন রাজধানী পেরিয়ে ছড়িয়েছে দেশজুড়েই। ঢাকার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা তো এখানে আসছেনই, নানা জেলার ক্রেতারাও ঢুঁ মারছেন এই বিপণিতে।
শুক্রবারেই এই বিপণিকেন্দ্রে কথা হয় ক্রেতা আসমাউল হুসনার সঙ্গে। তিনি স্বামীর সঙ্গে এসেছিলেন গাইবান্ধা থেকে। তাঁর স্বামী একটি গ্যাবার্ডিন প্যান্ট কিনলেন আট শ টাকায়, আরেকটি পাজামা সাড়ে তিন শতে।
আসমাউল জানান, তাঁরা গাইবান্ধা থেকে কাজে এসেছেন। কাজ শেষে আজ বাড়ি ফিরবেন। এর আগে কেনাকাটার জন্য এখানে এসেছেন। এই মার্কেটের সুনাম গাইবান্ধায় বসেই জেনেছেন। সে জন্যই আসা।
আসমাউলের স্বামীর সঙ্গেও কথা হলো। তিনি বলেন, তাঁরা আগে ঢাকায়ই থাকতেন। বছর চারেক হলো গ্রামে গেছেন। মাঝেমধ্যে কাজে ঢাকায় এলে বিভিন্ন বিপণিকেন্দ্রে কেনাকাটা করেন। এবার ঢাকার এক বন্ধু তাঁকে এই মার্কেটে কেনাকাটা করার পরামর্শ দেন। এখানে এসে মনে হচ্ছে, এখানকার পোশাক দামেও সাশ্রয়ী, মানেও ভালো।
রাজধানীর আগারগাঁও এলাকার বাসিন্দা সৈয়দ বাকের বলেন, তিনিও এই মার্কেটে দুটো গ্যাবার্ডিন প্যান্ট ১২শ টাকায় কিনেছেন। প্যান্টগুলো ভালো।
কয়েকজন দোকানদার জানান, এখানকার দোকানভাড়া তুলনামূলক কম। বেশির ভাগ দোকানে টিনের ছাউনি। তাই একই মানের পোশাক রাজধানীর অন্য শপিং মলের তুলনায় তাঁরা কম দামে বিক্রি করতে পারেন।
তা ছাড়া অনেক সময় সামান্য কিছু ত্রুটির কারণে বিদেশে রপ্তানিযোগ্য পোশাকের ক্রয়াদেশ বাতিল হয়ে যায়। সেগুলো তাঁরা স্টক লটের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কিনে আনেন। ভালো মানের তৈরি পোশাকও কারখানা থেকে সরাসরি এখানে আসে। তাই এখানে কম দামে বিক্রি করা যায় বলে জানান দোকানিরা।
নান্নু মার্কেট ঘুরে দেখা গেল, এখানে শিশু থেকে সব বয়সী নারী-পুরুষের জন্য পোশাকের পাশাপাশি ইলেকট্রনিকস, অ্যাকসেসরিজ, স্টেশনারি পণ্য এবং খেলার সামগ্রীসহ গৃহস্থালির পণ্য পাওয়া যায়।
তবে পল্লবীর ডি ব্লক এলাকার বাসিন্দা নুরুন্নাহার পিংকি সতর্ক করে বলেন, নান্নু মার্কেটে নানা মানের জিনিসপত্রই বিক্রি হয়। কোনো কোনো দোকানি দাম বেশিও হাঁকান। তাই ভালো পোশাক বাছাই করে দরদাম করে কিনতে হয়। পোশাক বাছাই ও দরদাম করতে জানলে নান্নু মার্কেট আসলেই দামে কম, মানে ভালো।
আশপাশের বাসিন্দা ও দোকানিরা জানান, ১৯৯৮ সালের দিকে এই জায়গায় কেউ কেউ অস্থায়ী দোকান বসাতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে এটি স্থায়ী মার্কেটে রূপ নেয়। তৎকালীন ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুর রউফ ওরফে নান্নু এটি নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর নামে এটি ‘নান্নু মার্কেট’ নামে পরিচিতি পায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।