আশীষ চক্রবর্ত্তী, ডয়চে ভেলে: পাকিস্তান চেয়েছিল টি-টোয়েন্টি আর টেস্ট ম্যাচ৷ তখন টি-টোয়েন্টি ছাড়া কিছুতেই সায় দেয়নি বিসিবি৷ সেখান থেকে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে টি-টোয়েন্টি আর টেস্টের ফাঁকে একটা ওয়ানডেও খেলতে চলেছে বাংলাদেশ৷
আগের অবস্থান থেকে একেবারে সরে বিসিবি পূর্ণ সফরে রাজি হয়ে যাওয়ায় সবাই বিস্মিত৷ নানা ধরনের প্রশ্ন উঠছে৷ সব প্রশ্নই যৌক্তিক৷
সবচেয়ে বড় প্রশ্ন- হঠাৎ কেন পাকিস্তানকে একটা ওয়ানডে ম্যাচ ‘বোনাস’ও দেয়া হলো? নিরাপত্তাঝুঁকি কি হঠাৎ শেষ হয়ে গেছে?
অবশ্য নিরাপত্তা নিয়ে বড় গলায় প্রশ্ন তোলার ‘নৈতিক’ অবস্থান আগেই হারিয়ে বসেছিল বাংলাদেশ৷ নারী দল সফর করেছে, বয়সভিত্তিক দলও সফর শেষ করে ফিরেছে নিরাপদে; তারপর এমন প্রশ্নকে কিছুটা আরোপিত, কিছুটা রাজনৈতিক তো পিসিবি বলতেই পারে৷ আকারে-ইঙ্গিতে তা-ই বলছিল তারা৷
নিরাপত্তার ঝুঁকি যে আগের মতো নেই তা সাম্প্রতিক কয়েকটি সিরিজ সফলভাবে আয়োজন করে কিছুটা প্রমাণও করেছে পাকিস্তান৷
তবে এ কথা ঠিক যে, পাকিস্তান এখনো মোটেই জঙ্গিমুক্ত নয়৷ সন্ত্রাসী হামলা এখনো বিশ্বের বেশির ভাগ দেশের তুলনায় অনেক বেশি হয় সেখানে৷
গত ৮ জানুয়ারিই ডন-এর এক প্রতিবেদনে পাকিস্তান ইন্সটিটিউট ফর পিস স্টাডিজ (পিআইপিএস)-এর তথ্য তুলে ধরা হয়েছে৷ পিআইপিএস বলছে, ২০১৯ সালে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলা আগের বছরের তুলনায় শতকরা ১৩ ভাগ কমেছে৷
এটা বড় কোনো স্বস্তির খবর নয়, কারণ, পিআইপিএস পাশাপাশি এ-ও জানিয়েছে, পাকিস্তানে মোট ২২৯টি হামলা হয়েছে ২০১৯ সালে, সেসব হামলা কেড়ে নিয়েছে ৩৫৭ জন মানুষের প্রাণ৷
এই বাস্তবতার মাঝেই অবশ্য কয়েকটি সিরিজ ভালোভাবে শেষ করেছে পিসিবি৷ এমনকি পাকিস্তানে যাদের দল প্রায় সরাসরি সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছিল, সেই শ্রীলঙ্কাও দু-দুবার দল পাঠিয়েছে ২২৯টি হামলার বছরেই৷
সুতরাং আপাতদৃষ্টিতে ক্রিকেটারদের নিরাপত্তা দিতে পাকিস্তান সক্ষম এ কথা মানতে হবে৷
তাছাড়া দুই দেশের ক্রিকেট বোর্ড সফর চূড়ান্ত করার পর তো আর পিছিয়ে আসা যায় না৷ সফর হোক৷ তবে ক্রিকেটারদের নিরাপত্তার বিষয়টা সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাক, এটাই সবার কামনা৷
এবার ফেরা যাক উড়ে এসে জুড়ে বসা ওয়ানডে ম্যাচটির প্রসঙ্গে৷ অনেকেই এই ম্যাচের কোনো মানে খুঁজে পাচ্ছেন না৷
করাচির ওই ম্যাচটি যেন সুস্থ দেহে বড়সড় এক টিউমার৷ টেস্ট ম্যাচের ঠিক আগে আগে একটা মাত্র অনাকাঙ্খিত ওয়ানডেকে এর চেয়ে ভালো আর কী মনে হতে পারে?
কিন্তু বিসিবিকে হঠাৎ একটু ইতিবাচক অর্থে চতুর ভাবতে ইচ্ছে করছে৷ বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন পাকিস্তান সফরের সূচি চূড়ান্ত হওয়ার আগে বলেছিলেন, মাশরাফি চাইলে তাকে এমনভাবে অবসর নেয়ার সুযোগ দেয়া হবে, যে সুযোগ, যে সম্মান অতীতে কেউ পায়নি, ভবিষ্যতেও পাবে না৷ খুব বাড়াবাড়ি মনে হয়েছিল কথাটা৷
তা টি-টোয়েন্টি আর টেস্ট সিরিজের মাঝখানে পাকিস্তান না চাইতেই একটা ওয়ানডে ঢুকিয়েও তো বাড়াবাড়িই করেছে বিসিবি৷ এখন এই ‘অপ্রত্যাশিত’ ম্যাচটিকেও কিন্তু অর্থবহ করে তোলা যায়৷এখানেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাতে পারেন মাশরাফী বিন মোর্তজা৷
বিসিবি কি তা ভেবেছে? ভেবে না থাকলেও ভাবার সুযোগ আছে৷
যে যেমন অবস্থান থেকে যত কথাই বলি না কেন, মাশরাফির তো এমন একটা সুযোগ প্রাপ্য! তাকে এ উপহার দিতেই পারে বাংলাদেশ৷
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।