আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন চালানোর প্রায় দুই মাসের মাথায় রাশিয়া নতুন পরমাণু বোমা বহনকারী আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে। পশ্চিমের বিশ্লেষকরা একে ‘পেশীশক্তির প্রদর্শন’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। খবর রয়টার্সের।
আজ বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, এই ক্ষেপণাস্ত্র মস্কোর শত্রুদের থমকে দেবে এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে কোনো উদ্যোগ নেওয়ার আগে শত্রুদের দ্বিতীয়বার চিন্তা করতে বাধ্য করবে।
প্রেসিডেন্ট পুতিনকে টেলিভিশনে দেখা যায় যে তিনি সামরিক বাহিনী জানাচ্ছেন, প্রথমবারের মতো বহুল প্রতীক্ষিত ‘সারমাত ক্ষেপণাস্ত্র’র পরীক্ষা সফল হয়েছে। এটি রাশিয়ার প্লেসেতস্ক অঞ্চল থেকে প্রায় ৬ হাজার কিলোমিটার (৩ হাজার ৭০০ মাইল) দূরে কামচাটকা উপদ্বীপে আঘাত হানতে সক্ষম।
দীর্ঘদিন ধরে ‘সারমাত ক্ষেপণাস্ত্র’র উন্নয়ন কর্মসূচি চলছে। তাই এই পরীক্ষা পশ্চিমকে বিস্মিত করেনি। তবে এমন সময় এ পরীক্ষা করা হলো, যখন সেই অঞ্চলে চরম ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া ‘বিশেষ সামরিক অভিযানে’ রাশিয়া এখন পর্যন্ত ১০ হাজারের বেশি সেনা পাঠালেও ইউক্রেনের প্রধান কোনো শহর তারা দখলে নিতে পারেনি।
ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা প্রসঙ্গে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, ‘নতুন ও জটিল এই ক্ষেপণাস্ত্রের রয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায়ের কৌশলগত ও কারিগরি বৈশিষ্ট্য এবং এটি সব ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী ব্যবস্থাকে পরাস্ত করতে সক্ষম। এই মুহূর্তে সারা পৃথিবীতে এর সমতুল্য কিছু (কোনো ক্ষেপণাস্ত্র) নেই এবং দীর্ঘ দিন পর্যন্ত থাকবেও না।’
‘প্রকৃতপক্ষে অনন্য এ অস্ত্র আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর যুদ্ধের সক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করবে। বিশ্বস্ততার সঙ্গে বাহ্যিক হুমকি থেকে রাশিয়াকে সুরক্ষিত করবে এবং যারা ক্ষণিকের উন্মত্ততায় আমাদের দেশকে হুমকি দেওয়ার চেষ্টা করবে, তাদেরকে চিন্তা করতে বাধ্য করবে,’ যোগ করেন ভ্লাদিমির পুতিন।
প্রায় ৮ সপ্তাহ আগে সামরিক অভিযানের ঘোষণার পর পুতিন রুশ পারমাণবিক সক্ষমতার কথা জানিয়ে পশ্চিমকে সতর্ক করে বলেন যে তাদের অভিযানে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করা হলে ‘ইতিহাসে কখনো হয়নি এরকম পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে।’
কিছুদিন পর তিনি রুশ পারমাণবিক বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক অবস্থায় থাকার নির্দেশ দেন।
গত মাসে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘পারমাণবিক সংঘর্ষের সম্ভাবনা এক সময় সুদূর পরাহত মনে হলেও এখন তা বাস্তবতার দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছে।’
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় গতকাল বুধবার জানায়, মস্কো সময় বিকেল ৩টা ১২ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টা ১২ মিনিটে) একটি সাইলো লঞ্চার থেকে ‘সারমাত ক্ষেপণাস্ত্র’ নিক্ষেপ করা হয়।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাস রসকসমস মহাশূন্য সংস্থার প্রধান দিমিত্রি রগোজিনের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, পরীক্ষা শেষে আগামী শরতে রুশ পারমাণবিক বাহিনীর কাছে এই ক্ষেপণাস্ত্রের চালান পাঠানো হবে।
লন্ডনের গবেষণা সংস্থা রুসির কর্মকর্তা জ্যাক ওয়াটলিং রয়টার্সকে বলেন, ‘রাশিয়ার বার্ষিক বিজয় দিবস প্যারেডের ঠিক ৩ সপ্তাহ আগে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার বিষয়টি প্রতীকী কার্যক্রম। এই প্যারেডে সাধারণত রাশিয়া তাদের অত্যাধুনিক অস্ত্রের প্রদর্শনী করে থাকে।’
‘বিজয় দিবসের প্যারেডে রাশিয়া প্রযুক্তিগত অর্জনগুলোর ওপর বিশেষ নজর দিতে চাচ্ছে। বিশেষ করে, এমন এক সময়ে, যখন তাদের প্রযুক্তিগুলো প্রত্যাশা অনুযায়ী ফল দিতে ব্যর্থ হচ্ছে,’ যোগ করেন ওয়াটলিং।
ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের মিলিটারি অ্যারোস্পেস বিষয়ের সিনিয়র ফেলো ডগলাস ব্যারি জানান, সারমাত ক্ষেপণাস্ত্র একই সঙ্গে ১০ বা তার চেয়েও বেশি আসল ও নকল ওয়ারহেড বহন করতে পারে। রাশিয়া চাইলে এ ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে পৃথিবীর ২ মেরুতে আঘাত হানতে পারবে।
‘ফলে, ভূমিতে ও আকাশে থাকা রাডার ও ট্র্যাকিং ব্যবস্থার প্রতি এই ক্ষেপণাস্ত্র বড় হুমকি,’ যোগ করেন ব্যারি।
ইউক্রেন এখন পর্যন্ত প্রবল প্রতিরোধ গড়ে রুশ বাহিনীকে প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমের মিত্ররা রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে দেশটিকে এ যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।