আন্তর্জাতিক ডেস্ক : করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল উহানের ভয়ানক পরিস্থিতি তুলে ধরা সেই সাংবাদিক চেন কুইশিও নিখোঁজ হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার সকাল সাতটা থেকে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। চেন কুইশিওর পরিবার জানায়, তার মোবাইল ফোনে কল ঢুকলেও কোনো জবাব আসছে না।
যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এই চীনা সাংবাদিকের প্রতিবেদনে উহানের লোমহর্ষক ঘটনাবলী উঠে আসে। যেমন, হুইলচেয়ারে মৃত স্বজনের পাশে বসা এক নারী তার পরিবারকে পাগলের মতো ফোন করছেন। রোগীদের এই অসহায় পরিস্থিতি হাসপাতালের অপর্যাপ্ত চিকিৎসা ও সরঞ্জামাদির অভাবের বিষয়টিই বলে দিচ্ছে।
তার উধাওয়ের বিষয়টি এমন এক সময় গণমাধ্যমে চলে এসেছে, যখন করোনাভাইরাস প্রথম শনাক্তকারী চিকিৎসক ডা. লি ওয়েনলিয়াংয়ের মৃত্যু নিয়ে দেশে-বিদেশে নানা রকম আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে।
চেন কুইশিও বড় বড় হাসপাতাল, করোনাভাইরাসে সংক্রমিতদের বাড়ি, মৃতদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ও উহানের আবাসিক এলাকাগুলো পরিদর্শন করে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের তথ্য বের করার চেষ্টা করেন। রোগী ও স্বজনদের সঙ্গে তিনি সরাসরি কথা বলে টুইটার ও ইউটিউবে সেসব ভিডিও পোস্ট করেন। যদিও ভিডিও শেয়ারের এসব সামাজিকমাধ্যম চীনে নিষিদ্ধ, কিন্তু অন্য সফটওয়্যার দিয়ে তা দেখা সম্ভব।
নিখোঁজ হওয়ার আগে ফ্যাং ক্যাং আশ্রয়কেন্দ্র হাসপাতাল পরিদর্শনের কথা ছিল চেন কুইশিওর।
এদিকে তার টুইটার থেকে পোস্ট করা এক ভিডিওতে তার এক বন্ধুকে বলতে দেখা যায়, ‘যখন চেন কুইশিওকে তুলে নেওয়া হয়েছে, তখন তার স্বাস্থ্য ও শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক ছিল। কাজেই ভালোভাবেই তিনি ফিরে আসবেন বলে আমরা অপেক্ষায় রয়েছি। তিনি এখনো পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি।’
চেন কুইশিওকে নিরাপদ অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তার মা একটি ভিডিও পোস্ট করেন। সিএনএনকে তার এক বন্ধু বলেন, ‘তার শারীরিক নিরাপত্তা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। আশঙ্কা হচ্ছে, তিনি যখন নিখোঁজ হয়েছেন, তখন এই ভাইরাস তার শরীরেও সংক্রমিত হতে পারে।’
নির্মাণাধীন হাসপাতালগুলোর অবস্থা সরেজমিনে দেখতে যান এই সাংবাদিক। করোনাভাইরাস নিয়ে উহান প্রশাসনের সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে তিনি সাহসিকতার সঙ্গে প্রশ্ন তোলেন।
আটকের আগে করা পোস্টগুলোয় সাংবাদিক চেন কুইশিও প্রশ্ন রাখেন, ‘স্টেডিয়ামে এক হাজার বেড বসানো সম্ভব, কিন্তু কীভাবে এতগুলো লোক একসঙ্গে খাচ্ছেন? কীভাবে তারা গোসল কিংবা ওয়াশরুমে যাচ্ছেন?’
‘২৪ ঘণ্টাই কি তাদের মাস্ক পরতে হবে? সেখানে কি যথেষ্ট অক্সিজেন আছে, যেখানে একটিমাত্র ভেন্টিলেটর এবং সুনির্দিষ্ট ওষুধ পর্যাপ্ত আসবে?’
তিনি বলেন, ‘এসব সমস্যা আমাকে বেশ কয়েকদিন ধরে বিভ্রান্তিতে ফেলে দিয়েছে। রোগীদের অবস্থাও নাজুক। তাদের পারিবারিক যত্ন দরকার। এখন প্রতিটি পদক্ষেপই কঠিন।’
এর আগে গত ৫ ফেব্রুয়ারি এক মর্মান্তিক ভিডিও পোস্ট করেন চেন কুইশিও। তাতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এক বাবা জানান, তাকে কোয়ারেন্টাইনে নিয়ে আসার পর কীভাবে তার প্রতিবন্ধী ছেলে বাড়িতে না খেয়ে যত্নের অভাবে মারা গেছে।
এছাড়া চলতি মাসে উহান স্কয়ার কেবিন হাসপাতালের সারি সারি বেড ও স্তূপ করে রাখা চিকিৎসা সামগ্রির একটি ভিডিও পোস্ট করেন এই সাংবাদিক।
তিনি বলেন, ‘সংক্রামক রোগটিতে আক্রান্তদের নির্জন এলাকায় রাখা হয়েছে। কিন্তু কীভাবে পরস্পর সংক্রমণ এড়িয়ে চলবেন, সেটা গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া উচিত।’
এদিকে চীনের আরেক সাংবাদিক ফ্যাং বিন একটি ভিডিও প্রকাশ করায় তাকে আটক করা হয়। যে ভিডিওতে যাতে দেখা যায়, বাসভর্তি মরদেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পরে অবশ্য তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এর আগে, পুলিশের হয়রানির শিকার হওয়ার পর ডা. ওয়েনলিয়াং মানুষের নজরে আসেন। সরকারি বিবৃতি অনুযায়ী, জ্ঞান ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হলেও শুক্রবার সকালের দিকে মারা যান ডা. ওয়েনলিয়াং। ৩০ ডিসেম্বর একটি সি ফুড মার্কেট থেকে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর তার বিরুদ্ধে ভুয়া খবর প্রচারের অভিযোগ তোলে চীন কর্তৃপক্ষ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।