সাইয়েদা আক্তার, বিবিসি বাংলা : বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের উর্ধ্বমুখী মাত্রার মধ্যে সাধারণ ছুটি শেষে টানা ৬৬ দিন পরে আজ রোববার সরকারি-বেসরকারি অফিস খুলে দেয়া হয়েছে। রেল ও নৌ চলাচল শুরু হয়েছে, সোমবার থেকে চালু হবে বাস এবং বিমান সেবা।
এদিকে, আজ থেকেই দেশের দুইটি পুঁজি বাজারে লেনদেন শুরু হয়েছে, এবং উভয় পুঁজি বাজারেই শেয়ারের মূল্য সূচকের ঊর্ধ্বগতি ছিল বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে কাজে ফেরা কর্মীদের জন্য প্রতিষ্ঠানে কতটা সুরক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে?
‘কর্মীদের জন্য প্রতিষ্ঠানে সুরক্ষার ব্যবস্থা কতটা’
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে রবিবার কাজে যোগ দিয়েছেন, এমন কর্মীদের বড় অংশটি দ্বিধা আর শঙ্কা নিয়ে যোগ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন অনেকে। যদিও অনেক প্রতিষ্ঠানেই কর্মীদের সুরক্ষার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
তবে সে ব্যবস্থায় সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। ঢাকায় একটি সরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা রাবেয়া নাজনীন বিবিসিকে বলছিলেন, অফিসে প্রবেশের মুখে কর্মীদের জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা করেছে কর্তৃপক্ষ। তবে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীর ব্যবস্থা নিজেদেরই করতে হয়েছে
“আমাদের ব্রাঞ্চে ঢোকার মুখে ব্লিচিং পাউডার দিয়ে ভেজানো পাপোষ রাখা হয়েছে কর্মী ও গ্রাহকদের জুতো জীবাণুমুক্ত করার জন্য। এছাড়া হাত স্যানিটাইজ করার জন্য গেটে হ্যান্ড স্যানটাইজার ও স্যাভলন রাখা আছে। কিন্তু ভেতরে কর্মীদের মুখে মাস্ক এবং গ্লাভসের ব্যবস্থা আমরা নিজেরাই করে নিয়েছি, সেটা অফিস দেয়নি।”
তিনি জানিয়েছেন, এর বাইরে ব্যাংক কর্মীদের বসার জায়গা এবং গ্রাহকের সঙ্গে লেনদেনের ব্যবস্থা আগের মতই আছে। “টেবিল-চেয়ার আর কম্পিউটার আগের মতই আছে, কিছু সরানো হয়নি। এছাড়া আমাদের ব্রাঞ্চে দুইটা টয়লেট ব্যবহার করেন ৩০ জনের মত কর্মী।”
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বাংলাদেশে টানা ৬৬ দিনের সরকারি ছুটির পর যেদিন বেশিরভাগ অফিস খুলেছে, সেদিনই অর্থাৎ আজই বাংলাদেশে কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়ে সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন আড়াই হাজারের বেশি মানুষ। তবে গত সপ্তাহে সরকার জানিয়ে দেয়, অর্থনৈতিক কার্যক্রম চালু করার জন্য ৩০শে মে’র পর থেকে সাধারণ ছুটি আর বাড়ানো হবে না। একই সঙ্গে সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণ-পরিবহন চালুর ব্যাপারেও সম্মতি দেয় সরকার।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কী পরিস্থিতি
ঢাকার বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার বেশিরভাগই এখনো কর্মীদের বাড়ি থেকে কাজ করার ব্যবস্থা চালু রেখেছে। বহুজাতিক অনেক প্রতিষ্ঠানও আজ অফিস শুরু করেনি। তবে, যারা কাজ শুরু করেছেন, তাদের অনেকই কর্মীদের বসার ব্যবস্থা পুনর্বিন্যাসসহ নানা ধরণের ব্যবস্থা নিয়েছে।
রপ্তানিমুখী আসবাবপত্র প্রতিষ্ঠান হাতিলের একজন কর্মকর্তা মার্জিয়া মিজান মুন্নী বলছিলেন, তাদের অফিসে কর্মীদের বসার ডেস্ক তিন-ফুট দূরত্বে বসানো হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটিতে আড়াইশোর মত কর্মী কাজ করেন।
“একই সঙ্গে নামাজের ঘরেও এক সঙ্গে যাতে বেশি মানুষ না প্রবেশ করে এমন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এজন্য একবারে চারজনের বেশি মানুষ যাতে নামাজ না পড়তে ঢুকে, প্রয়োজনে কনফারেন্স রুমসহ অন্যান্য খালি কামরা ব্যবহারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।”
“এছাড়া হাই-কমোড রয়েছে এমন টয়লেট ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে, সবার মধ্যে আশংকা কমোড-প্যান থেকে জীবাণু ছড়াতে পারে, কারণ অনেক মানুষ ব্যবহার করে সেগুলো।”
অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেই প্রবেশের মুখে হ্যান্ডহেল্ড থার্মোমিটার দিয়ে আগত কর্মী ও গ্রাহকের তাপমাত্রা মেপে ঢোকানো হচ্ছে। সেই সঙ্গে ছোট বা মাঝারি আকৃতির লিফটে একসঙ্গে কতজন উঠবেন—এমন নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে অনেক অফিসে।
কাজে যোগ দিতে আসতেও ভোগান্তি
দুই মাসের বেশি সময় পরে রবিবার সকাল থেকে ঢাকার সড়কগুলোতে ব্যস্ততা কিছুটা বেশি ছিল। যদিও গণ-পরিবহন অর্থাৎ বাস মিনিবাস চালু না হওয়ায় ব্যক্তিগত ব্যবহারের গাড়ি, সরকার ও কোন কোন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পরিবহন, সিএনজি এবং রিক্সাই ছিল অফিস-গামী লোকজনের মূল বাহন। গত কয়েকদিন ধরে ঢাকার মূল প্রবেশ পথগুলোতে রাজধানীমুখী মানুষের ভিড় ছিল লক্ষ্যনীয়। পুলিশ বলছে, আজ সে ভিড় কিছুটা কম ছিল।
এদিকে, রবিবার থেকে কর্মক্ষেত্রে যোগদানের জন্য অনেকেই কয়েকগুণ টাকা পয়সা খরচ করে ঢাকার বাইরে থেকে এসেছেন, সেখানেও মানা হয়নি স্বাস্থ্যবিধি।
জামালপুর থেকে ময়মনসিংহের ভালুকায় এসেছেন কবির হোসেন, তিনি বলছিলেন মাইক্রোবাসে করে তিনগুণ ভাড়া দিয়ে তিনি কর্মস্থলে পৌঁছেছেন।
“এমনিতে জামালপুর থেকে ভালুকা আসতে যদি মাইক্রোবাসে আসি, তাহলে আমার খরচ হয় পাঁচশো টাকার মত। কিন্তু এবার ১৫০০ টাকা খরচ করে আসছি। গাড়িতে পাশাপাশি চারজনও বসে আসছে, সবার মুখে মাস্কও ছিল না।”
স্বাস্থ্যবিধি মানা নিশ্চিতে কী ব্যবস্থা?
পুলিশ বলছে, করোনাভাইরাস মহামারির ব্যাপারটি আরো দীর্ঘায়িত হতে পারে, সেটা ধরে নিয়েই মানুষজনের সুরক্ষার ব্যবস্থা করার বিষয়টি তারা নজরদারি করবে।
পুলিশের মুখপাত্র সোহেল রানা বলছেন, “যেহেতু সাধারণ ছুটি বাড়ানো হয়নি এবং গণ-পরিবহন চালু হচ্ছে ফলে মানুষের চলাচল বেড়ে যাবে, এমন পরিস্থিতিতে ‘ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট’ এবং ‘ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট’ কৌশল নতুন করে ঢেলে সাজানোর কথা ভাবছি আমরা।”
“এছাড়া করোনা নিয়ন্ত্রণের জন্য যেসব কাজ আমরা করছিলাম সেগুলো অব্যাহত থাকবে, অর্থাৎ সরকারের নির্দেশে সামাজিক দূরত্ব মানার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পুলিশ কাজ করবে। কিন্তু সাধারণ মানুষের সহযোগিতা ছাড়া সেটি সফল হবে না।”
এদিকে, সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান খুললেও জরুরি প্রয়োজন ছাড়া এখনো রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না। ব্যাংকের সেবা ঘণ্টাও সীমিত করা হয়েছে।
আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও খোলা হচ্ছে না এখুনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।