সায়েদুল ইসলাম, বিবিসি বাংলা: বাংলাদেশের সরকার ঘোষণা করেছে, করোনাভাইরাসের কারণে যারা হজে যাওয়ার জন্যে নিবন্ধন করবেন, তাদের কারো আর্থিক বা মানসিক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু হজ নিয়ে উদ্বেগ কাটেনি বাংলাদেশের হজে যেতে আগ্রহীদের।
বাংলাদেশ থেকে ২০২০ সালে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে হজে যাওয়ার কোটা এক লাখ ৩৭ হাজার থাকলেও, এ পর্যন্ত মাত্র ১৮০০ হজযাত্রী নিবন্ধন করেছেন।
এই পটভূমিতে সংবাদ সম্মেলন করে হজযাত্রীদের আর্থিক বা মানসিক ক্ষতি না হওয়ার নিশ্চয়তা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশের ধর্ম মন্ত্রণালয়।
করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ইতোমধ্যেই দেশি-বিদেশি নাগরিকদের জন্য ওমরাহ হজ স্থগিত করে দিয়েছে সৌদি আরব।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৩০শে জুলাই অর্থাৎ ৯ জিলহজ হজ অনুষ্ঠিত হবে। সেক্ষেত্রে জুন মাস থেকেই হজ ফ্লাইট শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
তবে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের (কোভিডনাইনটিন) বিস্তারের কারণে আশঙ্কা রয়েছে যে, এবারের হজে কড়াকড়ি আরোপ করতে পারে সৌদি আরব। অনেক দেশের নাগরিকদের হজের তালিকার বাইরেও রাখা হতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সরকার কী বলছে
বাংলাদেশের সরকার বলছে, হজের যাওয়ার প্রক্রিয়াটি বেশ দীর্ঘ একটি প্রক্রিয়া। এখানে আগে নাম নিবন্ধন করতে হয়। পরবর্তীতে হজের জন্য সৌদি সরকারের কাছে একটি ফি পাঠাতে হয়।
এরপরে থাকে বিমানের টিকেট ও সৌদি আরবে বাড়ি ভাড়া করা।
বাংলাদেশের ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোঃ আবদুল্লাহ বলছেন, ”আশা করছি হজের সময়ের আগেই বিশ্বব্যাপী এই বিপদ (করোনাভাইরাস) কেটে যাবে।”
যারা হজে যেতে আগ্রহী, কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে দ্বিধায় আছেন, তাদের উদ্দেশ্যে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আবদুল্লাহ বলছেন, ”অনিশ্চয়তার কথা চিন্তা করে কেউ নিবন্ধন করতে বিলম্ব করলে তার হজযাত্রায় সমস্যা হতে পারে। আগে থেকেই যদি হজের প্রস্তুতি গ্রহণ না করেন, তাহলে এ বছর হজে যেতে পারবেন না।”
তিনি বলছেন, এখন সবাই নিবন্ধন শুরু করবেন। তবে পরবর্তীতে যদি কোনরকম সমস্যা দেখা যায়, তখন বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোঃ আবদুল্লাহ বিবিসিকে বলছেন, ”দেখা গেল এখন কেউ নিবন্ধন করলেন না। কিন্তু পরবর্তীতে এই করোনাভাইরাসের সমস্যা কেটে গেল। তখন কেউ হজে যেতে চাইলেও আর সুযোগ থাকবে না।”
”তাই আমরা বলছি, আপনারা নিবন্ধন করেন, প্রস্তুতি নিয়ে রাখেন। পরে যদি সমস্যা দেখা যায়, তখন বাতিল করা যাবে। আমাদের পক্ষ থেকে সবরকম সহযোগিতা করা হবে। হজযাত্রীরা যাতে কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সে ব্যাপারে আমাদের সবরকম সহযোগিতা থাকবে।”
সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, এ বছর বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ৩৭ হাজার ১৯৮জন হজে যেতে পারবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৭ হাজার ১৯৮জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এক লাখ ২০ হাজার জন হজে যাবার সুযোগ পাবেন।
কিন্তু করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক এবং হজ নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে সরকারিভাবে ৯৫৩জন এবং বেসরকারিভাবে ৮৪৮জন এ পর্যন্ত নিবন্ধন করেছেন।
হজে যাওয়ার জন্য নিবন্ধনের শেষ সময় ১৫ই মার্চ।
যে টাকা জমা দেয়া হবে, তা কি ফেরত পাওয়া যাবে?
সরকার ও বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলো বলছে, হজযাত্রীদের যাতে কোনোরকম আর্থিক ক্ষতি না হয়, সেদিকে তারা বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছেন।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, ”আপনারা নিবন্ধনের টাকা জমা দিন, পরে হজে যেতে না পারলে, আপনারা যখন ইচ্ছা করবেন, তখনই টাকা ফেরত দেয়া হবে।”
তিনি বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ”আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি, সৌদি সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। হজযাত্রীরা এখন যে টাকা জমা দেবেন, সেটা এখনি খরচ করা হবে না। আমরা পরিস্থিতি আরো কিছুদিন দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবো।”
হজ এজেন্সিজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ”হজের প্রধান খরচ মূলত সৌদি সরকারের ফি, বিমান টিকেট এবং সৌদি আরবের বাড়িভাড়া। এগুলো করতে হবে এপ্রিলের শেষ নাগাদ, অর্থাৎ সেগুলো করার জন্য আমাদের হাতে আরো অন্তত দুইমাস সময় রয়েছে। ফলে হাজীরা যে টাকা জমা দিয়ে নিবন্ধন করবে, সেটা এখন বাংলাদেশেই থাকছে।”
”এই দুইমাসেই পরিস্থিতি পরিষ্কার হয়ে যাবে যে, হজে যেতে আমাদের কোন সমস্যা হবে কিনা। তখন সেই বুঝে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিতে পারবো।”
”আমরা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, পেমেন্ট পর্যায় শুরু করার আগে আবার হজযাত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের সম্মতি নেয়া হবে। চাইলে সেই পর্যায়েও তারা হজে যাওয়া বাতিল করতে পারবেন। বিমান টিকেট, বাড়িভাড়া এবার আমরা আরো দেরি করে করার কথা ভাবছি, যাতে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত পরিস্থিতি দেখার সুযোগ থাকে।”
এবার হজে যেতে আগ্রহীদের তিন ধরণের প্যাকেজ রেখেছে সরকার। প্রথম প্যাকেজে চার লাখ ২৫ হাজার টাকা, দ্বিতীয় প্যাকেজে তিন লাখ ৬০ হাজার টাকা আর তৃতীয় প্যাকেজে খরচ হবে তিন লাখ ১৫ হাজার টাকা।
যারা হজে যেতে চান, তারা কি বলছেন?
বাংলাদেশের একটি জেলা বরগুনার তাসলিমা খানম স্বামীর সঙ্গে এ বছর হজে যেতে চাইছিলেন। কিন্তু তিনি বলছেন, হজ নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে তিনিও দোটানায় পড়েছেন।
”টাকা জমা তো অনেক আগেই করে ফেলতাম। কিন্তু সবাই বলছে, এ বছর হজে বাংলাদেশিদের নাও নিতে পারে। সেই চিন্তা করে টাকা জমা দেই নি। আল্লাহ চাইলে সামনের বছর যাবো।”
সরকার যে নিশ্চয়তা দিয়েছে, তারপরে কতটা স্বস্তি বোধ করছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ” সরকার গ্যারান্টি দিছে, ভালো। এখন আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে আলাপ করে দেখি, কি করা যায়।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।