মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, নীলফামারী: করোনাভাইরাসে আক্রমণে সারা বিশ্ব আজ আতঙ্কিত। চীন থেকে গোটা বিশ্বে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত মারা গেছে সাত হাজার ১৭৭ জন। নিজেকে করোনার আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে লাখ লাখ লোক স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টাইনে চলে যাচ্ছেন।
করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে বন্ধ হচ্ছে দোকানপাট ও অফিস। আর বাসা থেকে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছে অনেক প্রতিষ্ঠান।
করোনার সূত্রপাত: এশিয়ার চীন এই করোনা ভাইরাসের উৎস৷ বর্তমানে, সেই ভাইরাস ভয়াবহ আকার ধারণ করে ছড়িয়ে পড়ছে গোটা বিশ্বে। চীনের হুবেই প্রদেশের ৫৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তি গত বছরের ১৭ নভেম্বর কোভিড-১৯ ভাইরাসে প্রথম আক্রান্ত হয়েছিলেন। সেই দিন থেকে প্রতিদিন এক থেকে পাঁচ জন নতুন করে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন । ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হন মোট ৬০ জন।
হুবেই প্রাদেশিক হাসপাতালের চিকিৎসক ঝাং জিশিয়ান চীনের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষকে গত ২৭ ডিসেম্বর জানিয়েছিলেন, নতুন এক করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়েছে। সেদিন পর্যন্ত ১৮০ জনেরও বেশি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ২০১৯ সালের শেষ দিন পর্যন্ত ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৬৬ জন। ২০২০ সালের প্রথম দিন তা বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ৩৮১ জনে।কিন্তু ততদিনেও কোন মৃত্যুর খবর আসে নি।
দেশে দেশে করোনায় মৃত্যুর মিছিল: করোনায় প্রথম মৃত্যুর ঘটনা নিশ্চিত করা হয় গত ৯ জানুয়ারি চীনের উহানে। ফেব্রুয়ারির ১ তারিখ চীনে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যখন হয় ৩০৪ জন,তখন চীনের বাইরে ফিলিপাইনে উহানফেরত ৪৪ বছর বয়সী করোনায় মৃত্যুর প্রথম খবর আসে। এটিই চীনের বাইরে করোনায় প্রথম মৃত্যু। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চীনের প্রশাসনিক অঞ্চল হংকংয়ে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ৩ ফেব্রুয়ারি। ইরানে করোনায় প্রথম মৃত্যুর খবর আসে ১২ ফেব্রুয়ারি। জাপানে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ১৩ ফেব্রুয়ারি।
এশিয়ার গন্ডী পেরিয়ে ইউরোপে প্রথমবারের মতো করোনায় প্রাণহানি ঘটে ১৫ ফেব্রুয়ারি ফ্রান্সে। আমেরিকায় ও অস্ট্রেলিয়ায় প্রথম মৃত্যুর খবর আসে ২৯ ফেব্রুয়ারি। যথাক্রমে ওয়াশিংটন আর পার্থে। লাতিন আমেরিকায় নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণে প্রথম মৃত্যু ঘটে আর্জেন্টিনায় ৭ মার্চ। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের কর্ণাটকে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ১০ মার্চ। বাংলাদেশে ১০ জন করোনায় আক্রান্ত হলেও মৃত্যু নাই। সারা বিশ্বে এরই মধ্যে মারা গেছে ৭,১৭৭ জন।
কোন দেশে কতজন আক্রান্ত: (১৭ মার্চ বাংলাদেশ সময় বিকাল ৩ টা পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী) সারা বিশ্বের মোট ১৬৩ টি দেশে করোনা ছড়িয়ে পড়েছে। তবে আশার খবর এই ১৬৩ টি দেশের মধ্যে ১১৪ টি দেশে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১০০ এর নিচে। ১০০-২০০ এর ঘরে রোগী আছে ১৫ টি দেশে। ২০০-৫০০ এর ঘরে রোগী আছে ১৫ টি দেশে। ৫০০-১০০০ এর ঘরে রোগী আছে ৪ টি দেশে। আর করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে ১৫ টি দেশে। এ পর্যন্ত মোট আক্রান্ত রোগী ১,৮৩,২৫২ জন। এর মধ্যে মারা গেছে ৭,১৭৭ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৭৯,৯০৫ জন। এখনো চিকিৎসা নিচ্ছেন ৯৬,১৭০ জন। এর মধ্যে মৃদু সমস্যায় ৯০,০০৬ জন আর সিরিয়াস সমস্যায় ৬,১৬৪ জন।
করোনায় মৃত্যু ও সুস্থতার হার: মোট ১,৮৩,২৫২ জন করোনা রোগীর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৭৯,৯০৫ জন। সুস্থতার হার ৪৩.৬০%। মোট ১,৮৩,২৫২ জন করোনা রোগীর মধ্যে মারা গেছেন ৭,১৭৭ জন। মৃত্যুর হার ৩.৯১%।
করোনায় নারী-পুরুষে বৈষম্য: নারীর চেয়ে পুরুষের মৃত্যুর হার করোনায় উল্লেখযোগ্য। আক্রান্তের মধ্যে নারীর মৃত্যুর হার যেখানে ১.৭%, সেখানে পুরুষের মৃত্যুর হার ২.৮%। এর অন্যতম কারণ বলা হচ্ছে পুরুষদের ধূমপান আসক্তি। করোনায় বয়স বৈষম্যঃ আশার খবর এখন পর্যন্ত ৯ বছরের নিচের কোন বাচ্চা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে নাই। ৫০ বছরের উপরে আক্রান্ত রোগীর মধ্যে মৃত্যুর হার ২৭.৭%। ১০ থেকে ৫০ বয়স্কদের এই মৃত্যুর হার ০.৮% বিভিন্ন রোগ ও করোনাঃ সুস্থ সবল মানুষ করোনায় আক্রান্ত হলে ভয়ের তেমন কিছু নাই।বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাধারণ ফ্লু এর মতোই ঘরে থেকেই এই রোগ ভালো হয়। তবে আগে থেকেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্তদের জন্য দুঃসংবাদ। আগে থেকেই হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাদের ক্ষেত্রে মৃত্যুর হার১০.৫% আগে থেকে ডায়াবেটিস এ আক্রান্তদের ক্ষেত্রে এই হার ৭.৩% শ্বাসকষ্ট রোগীর ক্ষেত্রে ৬.৩% এবং পূর্ব থেকেই ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যাক্তিরা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ৬%।
তথ্য সূত্রঃ ওয়ার্ল্ডওমিটারস
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।