জুমবাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে জনসমাগম এড়িয়ে চলা সহ স্বাস্থ্য সম্পর্কিত নানা নির্দেশনা প্রতিদিন দেয়া হচ্ছে। কিন্তু সেগুলো সবাই মানছে কিনা – তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকে।
রাজধানীসহ সারাদেশেই গণপরিবহন-বাজারসহ যে সব জায়গায় জনসমাগম হয়, সেখানে কোনো পরিবর্তনের খবর নেই।
ঢাকায় বাসে নিয়মিত চলাচল করেন, তাদের অনেকে বলছেন, গণপরিবহনে মানুষের ভিড়ে কোনো নির্দেশনা মানার সুযোগ নেই।
গণপরিবহনে চলাচলের সময় বা জনসমাগমের জায়গাগুলোতে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত কোনো নির্দেশনা বাস্তবায়নেরও উদ্যোগও দেখছেন না তারা।
জেলা উপজেলায় সরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনাভাইরাসের জন্য শয্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু অভিযোগ উঠেছে চিকিৎসার পর্যাপ্ত উপকরণ না থাকার।
ঢাকার রাস্তায় সবসময়ই দেখা যায়, গাদাগাদি করে যাত্রী ওঠানো হচ্ছে বাসগুলোতে। একটি বাসে ৩০ বা ৪০টি আসন যাই থাকুক না কেন, তার থেকে অনেক বেশি যাত্রী নেয়া হয় দাঁড়িয়ে যাওয়ার জন্য।
করোনাভাইরাস নিয়ে উদ্বেগের মাঝেও একই চিত্র চোখ পড়ছে।
রাজধানীসহ সারাদেশেই গণপরিবহন-বাজারসহ যে সব জায়গায় জনসমাগম হয়, সেখানে সতর্ক থাকার সুযোগ নেই বলে অনেকে বলছেন।
একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত জাকিয়া ইয়াসমিন বাসে চলাচল করেন, তিনি বলছিলেন, কখনও কখনও যাত্রীদের দু-চারজনকে মাস্ক পরে থাকতে দেখা যায়। কিন্তু বাসের ভেতরে যেখানে মানুষে ঠাসাঠাসি অবস্থা, সেখানে কারও সতর্ক থাকার সুযোগ আছে কিনা – সেই প্রশ্ন তাকে তাড়া করে।
“অনেক ভিড় বাসে। আসলে হাঁচি কাশি-এগুলো আমাদের বাঙালীদের অভ্যাসতো খুব একটা ভাল না। এগুলো ওপেনলিই মানুষ আগে থেকে যা করে, সেভাবেই এখনও বাসে সব চলছে। নতুন করে কোনো পরিবর্তন আসেনি।”
“কোনো নির্দেশনা যদি দেয়া থাকে যে আপনি বাসে কিভাবে দাঁড়াবেন বা হাত রাখবেন। কতটা দূরত্ব বজায় রাখবেন — এসব কিছুই লেখা নাই বা বলার জন্য কেউ নাই। কেউই সতর্ক না। প্রত্যেকেই এমন আচরণ করছে যেন নাথিং হ্যাপেনড।”
সরকারি কর্মকর্তারা উল্লেখ করছেন, জনবহুল বা ঘনবসতির এই দেশে গণপরিবহনের মতো প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা বেশ কঠিন। এর জন্য তারা বিকল্প ব্যবস্থা না থাকার কথা তুলে ধরেন।
সরকারের পক্ষ থেকে সভা-সমাবেশ এবং এমনকি সামাজিক অনুষ্ঠানও না করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এরইমাঝে ঢাকায় বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট ম্যাচ চলছে, স্টেডিয়ামে কিন্তু দর্শক রাখা হচ্ছে।
যদিও অনেকে অভিযোগ করছেন, কর্তৃপক্ষ দর্শক সীমিত সংখ্যায় রাখার কথা বলে দায় সারছে।
উত্তরের কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারি থেকে একটি বেসরকারি কলেজের একজন শিক্ষক আঞ্জুমান আরা বেগম বলছিলেন, তাদেরকে শিক্ষার্থীদের মাঝে জনসমাগম এড়িয়ে চলা সহ সতর্কতামূলক ব্যবস্থাগুলোর কথা তুলে ধরতে বলা হয়েছে। সেটা করতে গিয়ে তারা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রশ্নের মুখে পড়ছেন।
“আমরা ক্লাস নিতে গিয়ে ছাত্রদের যেমন বলেছি যে, তোমরা দুইশো ছাত্র আছো, দুই পরিবার থেকে তোমরা এসেছো। তোমরা তোমাদের পরিবারের গিয়ে যদি সতর্ক থাকার ব্যবস্থাগুলোর কথা জানাও। যেমন হাত ধোয়ার ব্যাপারটা বা নিজেকে সতর্ক রাখা।”
“তারপরে তারা একটু ভয়ও পাচ্ছে, এই যে জনসমাগম এড়াতে বলা হলো, কিন্তু আমরা তো অনেক ছেলে মেয়ে একসাথে হচ্ছি – এটার কি হবে?”
যে সব দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে, সেসব দেশ থেকে যারা বাংলাদেশে আসছেন, তাদের ওপর কর্তৃপক্ষ কতটা নজরদারি রাখতে পারছে, এনিয়ে অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
সপ্তাহ দুয়েক আগে ইতালি থেকে দু’জন প্রবাসী দেশে এসে ঢাকার পাশের একটি জেলায় তারা বাড়িতে যান। তারা জানিয়েছেন, ঢাকায় বিমানবন্দরে তাদের জ্বর পরীক্ষা করে তারা সুস্থ থাকায় তাদের আর কোয়ারেনটিনে থাকা বা অন্য কোনো ব্যবস্থা নিতে বলা হয়নি।
কর্তৃপক্ষ অবশ্য বলেছে, আক্রান্ত দেশগুলো থেকে আসা কেউই নজরদারির বাইরে নেই এবং তাদের অনেককেই কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।
তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: আসাদুল ইসলাম বলছিলেন, বলপ্রয়োগ না করে মানুষকে সচেতন করার মাধ্যমে বিভিন্ন নির্দেশনা বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হচ্ছে।
“আপনি জানেন, ঘনবসতির বাংলাদেশে গণপরিবহনের সমস্যা আছে। আমরা সব মন্ত্রণালয়সহ আন্ত:মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে বিষয়গুলো খেয়াল করতে পরামর্শ দিচ্ছি। জনসমাগম যতটা এড়ানো যায়, সেটাই আমরা বলছি। খুব জরুরি না হলে এগুলো যেনো মানুষ এড়িয়ে যায়।”
“বিভিন্ন বিষয়ে এনফোর্সমেন্ট প্রথম পর্যায়েতো একটু সমস্যা হবেই। তারপরও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।”
এদিকে জেলা উপজেলায় শয্যার ব্যবস্থা করা হলেও চিকিৎসার উপকরণের অভাবের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
যশোর জেলার সিভিল সার্জন শাহিন আহমেদ বলছিলেন, “প্রতিটি উপজেলায় ৫০টি এবং যশোর জেলা শহরে ১০০টি শয্যার ব্যবস্থা করেছি সরকারি হাসপাতালগুলো। মেডিকেল টিমও গঠন করা হয়েছে। এই চিকিৎসায় অক্সিজেনসহ প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো আমাদের আছে।”
“তবে ভেন্টিলেটার, ডায়ালাইসিস বা আইসিইউ-এসব ব্যবস্থা আমাদের নেই। আমরা এজন্য বেসরকারি হাসপাতালগুলোর সাহায্য নেবো।”
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: আসাদুল ইসলাম বলেছেন, “করোনা আক্রান্ত রোগীদের যাদের আইসিইউ বা ভেন্টিলেটার লাগবে, এই সংখ্যা কিন্তু খুবই কম। সেটা একান্ত প্রয়োজন হলে সেই ব্যবস্থাও করা সম্ভব হবে।” সূত্র : বিবিসি বাংলা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।