করোনাভাইরাস আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। বিভিন্ন দেশে এর সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশেও নতুন করে সতর্কতা আরোপ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এই পরিস্থিতিতে জনসচেতনতা বাড়ানো এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের অংশ হিসেবে তারা ১১ দফা নির্দেশনা দিয়েছে, যা আমাদের সবার অনুসরণ করা জরুরি।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে নির্দেশনাগুলোর তাৎপর্য
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর বুধবার সংবাদ সম্মেলনে জানান, করোনাভাইরাসের কয়েকটি নতুন ‘সাব ভ্যারিয়েন্ট’ চিহ্নিত হয়েছে, যা অন্যান্য দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশেও সংক্রমণ ছড়াতে পারে। এজন্যই এই নির্দেশনাগুলো দেয়া হয়েছে।
Table of Contents
বিশেষ করে আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে দেশে সংক্রমণ বিস্তারের আশঙ্কা থাকায় স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরে বাড়তি নজরদারির কথা বলা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ১১ দফা নির্দেশনা বিশ্লেষণ
১. জনসমাগম এড়িয়ে চলা – জনসমাগমে গেলে অবশ্যই মাস্ক পরিধান করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
২. মাস্ক ব্যবহার – শ্বাসতন্ত্রজনিত রোগ থেকে রক্ষা পেতে মাস্ক ব্যবহার করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
৩. হাঁচি-কাশি শিষ্টাচার – হাঁচি বা কাশির সময় বাহু বা টিস্যু দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে ফেলা জরুরি।
৪. ব্যবহৃত টিস্যুর সঠিক নিষ্পত্তি – ব্যবহৃত টিস্যু ঢাকনাযুক্ত ময়লার ঝুড়িতে ফেলার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
৫. হাত ধোয়ার অভ্যাস – সাবান ও পানি বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড হাত ধোয়া জরুরি।
৬. অপরিষ্কার হাতে মুখ স্পর্শ না করা – চোখ, নাক ও মুখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।
৭. দূরত্ব বজায় রাখা – সংক্রমণ এড়াতে অন্তত ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হয়েছে।
৮. বাড়িতে অবস্থান – সন্দেহজনক রোগীর ক্ষেত্রে জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট থাকলে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বাড়িতে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
৯. রোগীর মাস্ক ব্যবহার – রোগীকে অবশ্যই মাস্ক পরিধানে উৎসাহিত করা হয়েছে।
১০. সেবাদানকারীর সতর্কতা – রোগীর সেবা প্রদানকারীদেরও মাস্ক ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।
১১. প্রয়োজনে স্বাস্থ্যসেবা – প্রয়োজনে কাছাকাছি হাসপাতাল, আইইডিসিআর (০১৪০১-১৯৬২৯৩) অথবা স্বাস্থ্য বাতায়ন (১৬২৬৩)-এ যোগাযোগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
নতুন সাব ভ্যারিয়েন্ট এবং বাংলাদেশের প্রস্তুতি
বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া নতুন ভ্যারিয়েন্টগুলো আরও সংক্রামক এবং দ্রুত ছড়ায়। এর কারণে বাংলাদেশেও সংক্রমণ বাড়তে পারে। সে কারণে সীমান্তে ও বিমানবন্দরে স্ক্রিনিং এবং কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সাব ভ্যারিয়েন্টগুলোতে আক্রান্তদের উপসর্গ তুলনামূলক কম হলেও বয়স্ক এবং রোগপ্রবণ ব্যক্তিদের জন্য তা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
জনসচেতনতা এবং গণমাধ্যমের ভূমিকা
সচেতনতা বাড়াতে গণমাধ্যমের ভূমিকা অনস্বীকার্য। স্বাস্থ্যবিষয়ক সংবাদ কিংবা করোনা সংক্রান্ত আপডেট জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া জরুরি।
জনগণকেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, নিজে সচেতন থাকা এবং আশেপাশের মানুষকে সচেতন করার দায়িত্ব নিতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, নতুন ধরনের করোনাভাইরাস নিয়ে গবেষণা চলমান রয়েছে এবং সিডিসির ভ্যারিয়েন্ট ক্লাসিফিকেশন অনুযায়ী এই ভ্যারিয়েন্টগুলোর প্রতিরোধে টিকা ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করাটাই এখন পর্যন্ত কার্যকর উপায়।
সচেতনতাই প্রতিরোধের চাবিকাঠি
করোনাভাইরাস থেকে নিজেদের রক্ষার একমাত্র উপায় সচেতনতা। নিয়ম মেনে চললে সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব। স্কুল, কলেজ, অফিসসহ সব জায়গায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উচিত।
মাস্ক ব্যবহার, হাত ধোয়া, দূরত্ব বজায় রাখা এবং সন্দেহজনক উপসর্গে চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে আমরা অনেকটাই নিরাপদ থাকতে পারি।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলি (FAQs)
করোনাভাইরাসের কোন কোন নতুন সাব ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে?
বর্তমানে বেশ কিছু সাব ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে যেমন XBB, BA.2.86 ইত্যাদি, যেগুলো অধিক সংক্রামক।
জনসমাগমে যাওয়া কি একেবারেই বন্ধ করতে হবে?
যথাসম্ভব এড়িয়ে চলাই উত্তম। তবে যেতে হলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
করোনার উপসর্গ দেখা দিলে কী করা উচিত?
ঘরে অবস্থান করে বিশ্রাম নিতে হবে এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
আইইডিসিআর কী ধরনের সহায়তা করে?
আইইডিসিআর করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নমুনা পরীক্ষা, উপসর্গ বিশ্লেষণ এবং পরামর্শ প্রদান করে।
শিশুদের জন্য আলাদা কোনো সতর্কতা আছে কি?
শিশুদের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসা নেওয়া জরুরি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।