আন্তর্জাতিক ডেস্ক : একশো তিরিশ কোটিরও বেশি জনসংখ্যার দেশে ভারতে এখনও পর্যন্ত মাত্র শদেড়েক করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঘটনা নিশ্চিত হওয়ার পর বিশেষজ্ঞরা অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, আদৌ কি যথেষ্ঠ পরিমাণে টেস্টিং হচ্ছে?
দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশ যেখানে প্রতি দশ লক্ষ মানুষের মধ্যে সোয়া পাঁচ হাজারের করোনাভাইরাস পরীক্ষা করেছে, সেখানে ভারতে সেই সংখ্যা মাত্র পাঁচের কাছাকাছি। খবর : বিবিসি’র।
এই সমালোচনার মুখে ভারত সরকার অবশ্য দাবি করছে, শুধু টেস্ট করানোর জন্যই কারও করোনাভাইরাস টেস্ট করাতে হবে বলে তারা মনে করে না।
তবে হাতেগোনা সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি নামী বেসরকারি ল্যাবগুলোকেও এই টেস্ট করার অনুমতি দেওয়া হোক, ভারতে সেই দাবিও ক্রমশ জোরালো হচ্ছে।
ভারত সরকারের তথ্য অনুসারেই, তাদের প্রতিদিন অন্তত দশ হাজার করোনাভাইরাস টেস্ট করার মতো সামর্থ্য আছে।
কিন্তু গত আড়াই মাসে গড়ে সারা দেশে রোজ টেস্ট হয়েছে মাত্র সাড়ে সাতশোর মতো।
পরীক্ষার সরঞ্জাম ও ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও টেস্টের হার এত কম কেন, সঙ্গত কারণেই বিশেষজ্ঞরা এখন সে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন।
ব্রুকিংস ইন্ডিয়ার গবেষণা প্রধান শামিকা রাভি বলছেন, “এত সামর্থ্য নিয়েও এত কম টেস্ট করানো একেবারেই অর্থহীন।”
“যে সব দেশ সফলভাবে করোনাভাইরাস মোকাবিলা করেছে, তাদের অভিজ্ঞতা কিন্তু বলছে আর্লি টেস্টিং, অর্থাৎ উপসর্গ কম থাকাকালীন প্রচুর পরীক্ষা করানোই সাফল্যের চাবিকাঠি।”
“ওভাবেই সেখানে কার্ভ ফ্ল্যাটেনড হয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়া তো ট্রেন্ডটাই রিভার্স করতে পেরেছে। কাজেই ভারতের টেস্ট করানোর ক্ষমতা থাকলে সেটা পূর্ণ শক্তিতে ব্যবহার করা উচিত।”
দক্ষিণ কোরিয়া যেখানে প্রতি দশ লক্ষ লোকে সোয়া পাঁচ হাজারের বা বাহরাইন সাড়ে ছ’হাজারের করোনাভাইরাস পরীক্ষা করেছে, ভারতে সেই সংখ্যাটা মাত্র পাঁচ।
তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রকৃত ছবিটা ভারত লুকোতে চায়, সরকার এই অভিযোগ একেবারেই মানতে রাজি নয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব লাভ আগরওয়াল বলছেন, “ভারত এখানে শতকরা একশো ভাগ স্বচ্ছ্বতা নিয়ে কাজ করছে এবং একটা প্রোটোকল মেনে চলছে।”
“আমরা মনে করি না শুধু করোনাভাইরাস টেস্ট করানোর জন্যই যে কারও টেস্ট করাতে হবে – তাতে অযথা আতঙ্ক ছড়াবে, কিন্তু আমরা যাদের প্রয়োজন তাদের অবশ্যই টেস্ট করাবো।”
করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য সারা দেশে ৫২টি সরকারি হাসপাতাল বা মেডিক্যাল ইনস্টিটিউট চিহ্নিত করে দেওয়া হলেও সেখানে চলে গেলেই যে কেউ টেস্ট করাতে পারবেন – বিষয়টা সেরকম নয়।
আগে একটি হটলাইনে ফোন করে আপনাকে আপনার ভ্রমণের ও মেলামেশার ইতিহাস জানাতে হবে, উপসর্গের বিবরণ দিতে হবে – তারপর সব শর্ত মিললে তবেই টেস্টের ছাড়পত্র মিলবে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ শীতল রঙ্গনাথন কিন্তু মনে করছেন, “এই ৫২টি প্রতিষ্ঠান ক্রমবর্ধমান চাহিদার তুলনায় একেবারেই যথেষ্ঠ নয়, ফলে বেসরকারি সংস্থার সাহায্য নিতেই হবে।”
“আর সারা দুনিয়া জুড়ে মাত্র দুটো কোম্পানি – রোশ আর থার্মোফিশার থেকেই সবাই টেস্টিং কিট অর্ডার করছে, এখানে ভারতীয় বায়োটেক সংস্থাগুলোকেও কিন্তু এই লড়াইয়ে দ্রুত সামিল করা উচিত হবে।”
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চের প্রধান ড: বলনাম ভার্গবও জানিয়েছেন, টেস্টিংয়ের পরিধি বাড়ানোর জন্য তারা ইতিমধ্যেই ভারতের উচ্চ মানসম্পন্ন বেসরকারি ল্যাবগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছেন – খুব দ্রুতই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তবে প্রতিটি করোনাভাইরাস টেস্টে আনুমানিক প্রায় বিশ-বাইশ হাজার রুপি বা তিনশো ডলারের মতো খরচ হচ্ছে।
সরকারি হাসপাতালে সেটা নিখরচায় করা হলেও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভর্তুকি দেওয়া হবে কি না তা এখনও স্পষ্ট নয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।