আন্তর্জাতিক ডেস্ক: অক্সফামের একটি প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে, নভেল করোনাভাইরাসের কারণে প্রতিদিন যত মানুষ মারা যাচ্ছে, তার চেয়ে বেশি মানুষ এ মহামারীর কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে অনাহারে মারা যেতে পারে। খবর সিএনএনের।
অক্সফাম ধারণা করছে, চলতি বছরের শেষ নাগাদ প্রতিদিন প্রায় ১২ হাজার মানুষ করোনাসংশ্লিষ্ট ক্ষুধার কারণে মারা যেতে পারে।
এদিকে জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির উপাত্ত বলছে, কভিড-১৯ রোগে একদিনে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে গত ১৭ এপ্রিল—৮ হাজার ৮৯০ জনের। অর্থাৎ ভাইরাসটির কারণে যত না মানুষ মারা যাচ্ছে, ক্ষুধার কারণে তার চেয়ে বেশি মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নভেল করোনাভাইরাস বৈশ্বিক অর্থনীতিকে খাদের কিনারে নিয়ে এসেছে। অর্থনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ। ব্যবসা-বাণিজ্যে চলছে চরম মন্দা ভাব। ব্যয় সংকোচনে কোম্পানিগুলো কর্মী ছাঁটাইয়ের পথ ধরেছে। কর্মসংস্থান হারিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছে কোটি কোটি মানুষ। বিশেষ করে নিম্নবিত্ত শ্রমজীবীরা তাদের সামান্য সঞ্চয়টুকু খুইয়ে মৌলিক চাহিদা পূরণের সক্ষমতা হারিয়েছেন। এ অবস্থায় বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষকে ক্ষুধার সঙ্গে লড়তে হবে বলে আশঙ্কা করছে অক্সফাম।
এক বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটির অন্তর্বর্তীকালীন নির্বাহী পরিচালক চেমা ভেরা বলেছেন, ‘বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষ আগে থেকেই যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তন ও অসমতার কারণে সৃষ্ট বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে লড়ছে। করোনা মহামারী এ লড়াইয়ে বাড়তি সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি খাদ্যশৃঙ্খলকে ভেঙে দিয়েছে। লাখ লাখ খাদ্য উৎপাদক ও কর্মীকে প্রায় নিঃস্ব করে দিয়েছে।’
মহামারীর কারণে কীভাবে খাদ্যনিরাপত্তা হুমকিতে পড়েছে, তাও ব্যাখ্যা করেছে অক্সফাম। চলমান অর্থনৈতিক অচলাবস্থায় কর্মসংস্থান ও রেমিট্যান্সে ধস নেমেছে। ফলে আয় হারানো মানুষগুলোকে এখন দুমুঠো খাবার জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এছাড়া অনেক মানুষ রয়েছেন, যারা অনানুষ্ঠানিক অর্থনৈতিক কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত। তাদের আয়ও এখন বন্ধ। উপরন্তু, তাদের অনেকে পর্যাপ্ত সামাজিক সহায়তাও পাচ্ছেন না।মহামারীর কারণে বিশ্বজুড়ে সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। খাদ্য উৎপাদকদেরও বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মোকাবেলা করতে হচ্ছে। লকডাউনসংশ্লিষ্ট ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাও সংকট বাড়াচ্ছে। এর কারণে কেবল কর্মীরাই বিপাকে পড়ছেন, তা নয়। বরং মানবিক সহায়তা সামগ্রী সরবরাহও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সব মিলিয়ে ভয়ংকর সংকটের মুখে রয়েছে খাদ্যনিরাপত্তা ব্যবস্থা।
কোলা, ইউনিলিভার, জেনারেল মিলসসহ খাদ্য ও পানীয় শিল্পের জায়ান্ট কোম্পানিগুলোর প্রসঙ্গ টেনে অক্সফাম বলেছে, ‘এই দুঃসময়েও শীর্ষ কোম্পানিগুলো মুনাফা করে যাচ্ছে।
শীর্ষ আট খাদ্য ও পানীয় কোম্পানি গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত তাদের শেয়ারহোল্ডারদের ১ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের বেশি লভ্যাংশ দিয়েছে। অথচ জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বকে ক্ষুধার কবল থেকে বাঁচাতে এর ১০ শতাংশ অর্থ প্রয়োজন।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) উপাত্ত তুলে ধরে অক্সফাম জানিয়েছে, গত বছর বিশ্বজুড়ে ৮২ কোটি ১০ লাখ মানুষ খাদ্যনিরাপত্তার অভাবে ভুগেছে।তাদের মধ্যে ১৪ কোটি ৯০ লাখ মানুষকে চরম মাত্রার ক্ষুধার সঙ্গে লড়তে হয়েছে।
চলতি বছরের পূর্বাভাসের বিষয়ে সংগঠনটি জানিয়েছে, ২০২০ সালে করোনা মহামারীর কারণে চরম মাত্রায় ক্ষুধার মধ্যে থাকা মানুষের সংখ্যা ২৭ কোটিতে উঠে যেতে পারে, যা গত বছরের চেয়ে ৮০ শতাংশ বেশি।
অক্সফাম চরম মাত্রার ক্ষুধার সংকটে থাকা ১০টি হটস্পট চিহ্নিত করেছে। এসব দেশের পরিস্থিতি আগে থেকেই বেশ সঙ্গিন। মহামারী তা আরো খারাপের দিকে নিয়ে গেছে। হটস্পটগুলো হলো ইয়েমেন, কঙ্গো রিপাবলিক, আফগানিস্তান, ভেনিজুয়েলা, আফ্রিকার পশ্চিমাঞ্চল, ইথিওপিয়া, সুদান, দক্ষিণ সুদান, সিরিয়া ও হাইতি।তবে ক্ষুধার সংকট যে কেবল এসব দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে, তা নয়।
অক্সফাম সতর্ক করে বলেছে, ব্রাজিল, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো মধ্যম আয়ের দেশগুলোর ওপরও এর আঁচ পড়বে। এদের মধ্যে ব্রাজিল ও ভারত এখন করোনা সংক্রমণে বিশ্বে যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।