নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণ নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে শিশুসহ আরো ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ তাদের নমুনা সংগ্রহ করে করোনা পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের পরিবারের সদস্যদের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। স্থানীয় প্রতিনিধিরা গতকাল শুক্রবার এসব খবর জানিয়েছেন।
পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে করোনা সংক্রমণের উপসর্গ নিয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। বাঘাইছড়িতে করোনা আইসোলেশনে থাকা ১৮ বছরের এক তরুণকে চট্টগ্রামে নেওয়ার পথে গতকাল ভোরে মৃত্যু হয়। তিনি গত ১৫ এপ্রিল শ্বাসকষ্ট, গলা ব্যথা ও জ্বর নিয়ে বাঘাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে রোগীর বাড়ি ও আশপাশের বাড়ির সব পরিবারকে হোম কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন ইউএনও আহসান হাবিব জিতু।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ইফতেখার আহমেদ জানান, করোনা উপসর্গ পরিলক্ষিত হওয়ায় ওই তরুণকে আইসোলেশনে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে চট্টগ্রামে আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালে রেফার করা হয়। সেখানে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।
এদিকে জেলার রাজস্থলীতে গতকাল ভোরে এক গার্মেন্টকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। উপজেলার বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা ওই ব্যক্তির নাম থুইচাসিং মারমা (২১)। তিনি চট্টগ্রামে একটি গার্মেন্টে কাজ করতেন। ১২ দিন আগে তিনি বাঙ্গালহালিয়ায় আসেন। রাজস্থলীর ইউএনও শেখ ছাদেক জানান, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে প্রতিবেশী সাতটি বাড়ি ও ১০টি দোকানের লোকজনকে কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলা হয়েছে।
কুড়িগ্রামের রাজারহাটে সর্দি-জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে আট মাসের এক শিশু মারা গেছে। এরপর দুটি বাড়ি লকডাউন করেছে পুলিশ। জানা গেছে, উপজেলার ঘড়িয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের পশ্চিম দেবোত্তর পাগলার দরগা গ্রামের হবিবর হোসেনের নাতনি আয়শা খাতুন জ্বর ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে মারা যায়। পরে শিশুটি ও তার নানির নমুনা সংগ্রহ করা হয়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. মাশরুহুল হক জানান, ধারণা করা হচ্ছে, শিশুটির শ্বাসনালিতে খাবার আটকে গিয়েছিল। এরপরও নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গ নিয়ে ঢাকা থেকে নওগাঁয় ফিরে আসা মাহাবুব আলম (৬০) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। গতকাল নিজ বাড়িতে তিনি মারা যান। তিনি শহরের জনকল্যাণ ডি ব্লক পাড়ার মোহাম্মদ আলীর ছেলে।
ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মঞ্জুর-এ-মুর্শেদ জানান, ঢাকার একটি বেসরকারি কম্পানিতে চাকরিরত মাহবুব গত ১৫ এপ্রিল নওগাঁয় আসেন। তিনি ঢাকা থেকেই জ্বর-সর্দি ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। বিষয়টি জানার পর গত বৃহস্পতিবার তাঁর নমুনা সংগ্রহ করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করলেও পরিবার যেতে দেয়নি।
জেলা প্রশাসক মো. হারুন অর রশীদ জানান, এরই মধ্যে পরিবারের সব সদস্যকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।
বরিশালে শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে এক নারীর (৪২) মৃত্যু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে মারা যাওয়া ওই নারীর বাড়ি পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলায়।
হাসপাতালের পরিচালক বাকির হোসেন জানান, ওই নারীকে বৃহস্পতিবার রাতে মেডিসিন ওয়ার্ড থেকে করোনা ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়। একইসঙ্গে তাঁর নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
হবিগঞ্জের মাধবপুরে করোনার উপসর্গ নিয়ে এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে। উপজেলার বহরা ইউনিয়নের আউলিয়াবাদ গ্রামের ওই কিশোরী দুই দিন আগে সর্দি, জ্বর ও কাশি নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়। চিকিৎসকরা তাকে সিলেটে রেফার করলেও স্বজনরা তাকে বাড়িতে নিয়ে যায়। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে বাড়িতেই সে মারা যায়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এ এইচ এম ইশতিয়াক মামুন জানান, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে মরদেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ইউএনও তাশনূভা নাশতারানা জানান, নমুনা পরীক্ষার ফল আসার আগে পর্যন্ত বাড়ির সবাইকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রংপুরের পীরগঞ্জে করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে এক যুবকের (২৯) মৃত্যু হয়েছে। গতকাল ভোরে উপজেলার বড় আলমপুর ইউনিয়নের খষ্টি গ্রামে নিজ বাড়িতে তিনি মারা যান। এ ঘটনায় মারা যাওয়া যুবকের পরিবারের আট সদস্যকে বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। একই সঙ্গে পাশের সাতটি বাড়ি লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।
নরসিংদীর বেলাবতে শ্বাসকষ্ট ও বুকে ব্যথা নিয়ে নান্নু মিয়া (৫০) নামের এক ব্যক্তি গত বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান। তিনি উপজেলার আমলাব গ্রামের মৃত আবদুল খালেকের ছেলে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, ওই ব্যক্তি মাদকাসক্ত ছিলেন। দুই-তিন দিন আগে তিনি হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিয়েছেন। যেহেতু তাঁর শ্বাসকষ্ট ছিল তাই করোনা সন্দেহে গতকাল মরদেহের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ইউএনও শামীমা শরমিন বলেন, নমুনার পরীক্ষার ফল না আসা পর্যন্ত পরিবারের লোকজনকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে একটি বেসরকারি ব্যাংকের পিয়নের (১৮) মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকালে উপজেলার চামটা চামটা এলাকার নিজ বাড়িতে মারা যাওয়া ওই ব্যক্তি ঢাকার গুলশানে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে চাকরি করতেন।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম জানান, দুই-তিন দিন ধরে ওই ব্যক্তি জ্বরে ভুগছিলেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। তার নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার হাতিমারাসংলগ্ন জোড়ার দেউল গ্রামে এক বৃদ্ধ (৭৭) শ্বাসকষ্ট ও জ্বর নিয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান। মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। পরে রাত ১২টার দিকে তাঁর মরদেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
করোনা উপসর্গ নিয়ে গতকাল সন্ধ্যায় কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে এক নারী মারা গেছেন। মোমেনা আকতার (৪৫) নামের ওই নারী রামু উপজেলার গর্জনিয়া গ্রামের বাসিন্দা।
সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মহিউদ্দিন জানান, জ্বর, সর্দি-কাশি ও গলা ব্যথা নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসেন ওই নারী। হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করার একপর্যায়ে তিনি মারা যান। করোনা উপসর্গ থাকায় পরীক্ষার জন্য তার শরীরের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।