আন্তর্জাতিক ডেস্ক : করোনাকালের লকডাউনের মধ্যে জাপানে আত্মহত্যায় নতুন রেকর্ড হয়েছে। দেশটিতে এমনিতেই আত্মহত্যার হার বেশি। কিন্তু এই মহামারীর মধ্যে সেই প্রবণতা অনেকখানি বেড়েছে বলেই সরকারি পরিসংখ্যানে স্পষ্ট হয়েছে। দেখা গেছে, শুধু গত অক্টোবর মাসে যতো মানুষ আত্মহত্যা করেছেন, তা এ পর্যন্ত দেশটিতে করোনায় মারা যাওয়া লোকসংখ্যার বেশি। এর মধ্যে আবার নারীদের সংখ্যা বেশি।
জাপানের ন্যাশনাল পলিসি এজেন্সির দেয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত অক্টোবরে মাসভিত্তিক আত্মহত্যার হার বেড়ে ২ হাজার ১৫৩ জনে দাঁড়িয়েছে। যেখানে শুক্রবার দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জাপানে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২ হাজার ৮৭ জন।
চিকিৎসকরা মনে করছে, করোনাকালের মানসিক চাপ ও অসুস্থতাই এর একমাত্র কারণ।
এই মানসিক অসুস্থতার উৎস কী? চিকিৎসকরা বলছেন, এই করোনাকালে লিঙ্গ, শ্রেণির ভিন্নতায় আলাদা আলাদা রকমের মানসিক চাপ তৈরি হচ্ছে। কারো চাকরি নেই, কেউ স্বামী-সন্তানকে নিয়ে চিন্তিত, কেউ ব্যবসায়িক কারণে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত, কেউ আবার নিজের শরীর স্বাস্থ্য নিয়ে এতটাই চিন্তিত হয়ে পড়ছেন যে তাদের মধ্যে মানসিক অবসাদ দেখা দিচ্ছে। আর সেই অবসাদই ঠেলে দিচ্ছে আত্মত্যার দিকে।
জাপান পৃথিবীর একমাত্র দেশ, যারা নিয়মিত আত্মহত্যার পরিসংখ্যান প্রকাশ করে। যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ২০১৮ সালে শেষ আত্মহত্যার পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে, সেখানে জাপান প্রায় ধারাবাহিকভাবে এই সংখ্যা প্রকাশ করে চলেছে।
সর্বশেষ পরিসংখ্যান দেখা যাচ্ছে, নারীরা বেশি আত্মহত্যা করছেন। এ নিয়ে আলাদা করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কর্তৃপক্ষ। বলা হয়েছে, নারীদের আত্মহত্যার প্রবণতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। আগের থেকে অনেক বেশি সংখ্যায় নারী আত্মহত্যা করছেন।
জাপানে হোটেল, ফুড সার্ভিস ও রিটেল বাণিজ্যে বিপুল সংখ্যক নারী কাজ করেন। সাধারণত সেখানে খণ্ডকালীন কাজ করেন তারা। মহামারীর সময়ে কর্মহীন হয়েছেন অনেকে।
জাপানের কর্মজীবী নারীরা বলছেন, করোনার অজুহাতে অনেকেরই চাকরি গেছে। এক কথায়, জাপান সরকার নারীদের যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে না বলে অভিযোগ করছেন তারা। এছাড়া, যেসব নারী সদ্য সন্তান জন্ম দিয়েছেন তাদের মধ্যেও দুঃশ্চিন্তা বাড়ছে। কারণ ছুটি শেষে কাজ জুটবে কিনা তা নিয়ে তাদের মধ্যে চরম অনিশ্চয়দা বিরাজ করছে। সে কারণে মানসিক অবসাদের পরিমাণ বাড়ছে।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, মহামারীর মধ্যে ২৭ শতাংশ নারীর মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি দেখা দিয়েছে। সেই তুলনায় পুরুষের সংখ্যা অনেকটাই কম, মাত্র ১০ শতাংশ।
এদিকে সমস্যা বাড়ছে শিশু, কিশোরদেরও। যাদের বয়স ২০ বছরের নিচে, তাদের মধ্যে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। সামাজিক জীবন থেকে সরে আসা, স্কুল কলেজ বন্ধ থাকার কারণে শিশু-কিশোরদের জীবনে চাপ বাড়ছে। অনেক সময়ে বাড়িতে হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে শিশুদেরও। সমীক্ষায় দেখা গেছে, অতিমারীর সময় জাপানের শিশুদের ৭৫ শতাংশ মানসিক সমস্যা ও চাপে ভুগছে।
কয়েক দিন আগেই, হানা কিমুরা নামে জাপানের একজন ক্রীড়াবিদ ও রিয়্যালিটি শো স্টার আত্মহত্যা করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় একের পর এক নেতিবাচক বার্তা আসার কারণে তিনি আত্মহত্যা করেন বলে জানা যায়। মহামারীতে প্রভাব পড়েছে বিখ্যাত মানুষদের জীবনেও। সিনেমা, কনসার্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের আয়ে প্রভাব পড়েছে।
এই আত্মহত্যার প্রবণতা কবে কমবে, তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারছেন না জাপানের চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, জাপানে শীত পড়ার সময়েই নতুন করে করোনা সংক্রমণের ভয় রয়েছে। করোনার তৃতীয় ঢেউ জাপানে শুরু হয়ে যেতে পারে। ফলে মহামারীর প্রভাবে ধুঁকতে থাকা জাপানের অর্থনীতি আরো অনেক বড় ধাক্কার সামনে পড়তে পারে। এতে অবসাদ যে বাড়বে, সেটা প্রায় নিশ্চিত।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।