জুমবাংলা ডেস্ক : স্ত্রী সারাক্ষণ মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। স্বামীর সন্দেহ, স্ত্রী অন্য কারো সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছেন। সেই সন্দেহ থেকেই স্ত্রীর ফেসবুক মেসেঞ্জার চেক করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু স্ত্রী তাতে রাজি হননি। এই নিয়ে কথা-কাটাকাটির জের ধরে শেষ পর্যন্ত স্বামী ডিভোর্সের আবেদন করেছেন নগর সংস্থায়। একইভাবে রাতে দেরি করে বাসায় ফিরলে স্ত্রী তরকারি গরম করে দেন না—এই অভিযোগে স্ত্রীকে ডিভোর্স দিতে চেয়েছেন একজন। এমন ছোটখাটো অভিযোগে বিয়েবিচ্ছেদের আবেদন বাড়ছে সিলেট সিটি করপোরেশনে (সিসিক)।
সিসিক সূত্রে জানা গেছে, সিলেট নগরে চলতি বছর বিয়েবিচ্ছেদের আবেদন আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। ১১ মাসে সংখ্যাটি দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৩৫৫, যা গত তিন বছরের মোট আবেদনের তিন গুণের বেশি। আর গত বছরের তুলনায় আট গুণ বেশি। এর মধ্যে গত জুন মাসে এক দিনে ১৫৭টি বিয়েবিচ্ছেদের আবেদন পড়েছে। আবেদনকারীদের মধ্যে বড় অংশই আবার নারী। এর মধ্যে সর্বশেষ নভেম্বর মাসে পৃথক শুনানি শেষে দুটি বিয়েবিচ্ছেদ কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ২১টি বিয়েবিচ্ছেদ কার্যকর করা হয়েছে।
সিসিকে জমা হওয়া আবেদনগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আবেদনকারীদের বড় অংশই ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সী। উচ্চবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্তদের সংখ্যা বেশি। নিম্নমধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির দম্পতিদের আবেদনের সংখ্যা কম। আবেদনকারীদের মধ্যে ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সী দম্পতিদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, বেশির ভাগই প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে স্বাবলম্বী হতে পারেননি। অন্যদিকে পরিবারও বিয়ে মেনে নেয়নি। সংসার চলছে না। একদিকে আর্থিক টানাপড়েন, অন্যদিকে পরিবারের চাপ। শেষে বাধ্য হয়ে বিয়েবিচ্ছেদকে সমাধান হিসেবে দেখছেন এই বয়সীরা।
আবার ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সী দম্পতিদের বিয়েবিচ্ছেদের কারণ ভিন্ন। তাঁদের ক্ষেত্রে পারিবারিক কলহ, পরস্পরকে সময় না দেওয়া, অবিশ্বাস-সন্দেহ, পরকীয়া, স্বামী বা স্ত্রী প্রবাসে থাকা, স্মার্টফোনের প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি, মাদকাসক্তি, শারীরিক অক্ষমতা, সন্তান না হওয়া, শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার, পরস্পরের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলা ও ব্যক্তিত্বের সংঘাত অন্যতম।
পেশাজীবী দম্পতির ক্ষেত্রেও বিয়েবিচ্ছেদের প্রবণতা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। বেসরকারি মোবাইল সেবাদানকারী একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন এক দম্পতি। আর্থিক সচ্ছলতা এলেও তাঁদের দাম্পত্য জীবনে সুখ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। তাঁরা ডিভোর্স চেয়ে আবেদন করেছেন। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তিত্বের সংঘাত বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। তবে সব ক্ষেত্রে নেপথ্য কারণ একরকম নয়। যেমন—বিয়েবিচ্ছেদের আবেদন করেছেন এক চিকিৎসক দম্পতি। তাঁদের ৯ বছরের একটি সন্তানও রয়েছে। স্বামী অতিরিক্ত মাত্রায় মাদকাসক্ত। নিজের আয়ের পুরোটাই তিনি মাদকের পেছনে ব্যয় করেন। আবার সন্তানকে জিম্মি করে স্ত্রীর কাছ থেকেও প্রায়ই টাকা আদায় করেন। স্বামীকে শুধরানোর নানা চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ায় স্ত্রী শেষ পর্যন্ত বিয়েবিচ্ছেদের পথই বেছে নেন। গত ২৮ অক্টোবর তাঁদের আনুষ্ঠানিক ডিভোর্স হয়েছে।
সিলেটে আশঙ্কাজনক হারে বিয়েবিচ্ছেদের প্রবণতা বাড়ার পেছনে করোনারও প্রভাব রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনায় ঘরবন্দি জীবনে দীর্ঘ সময় ধরে স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে থাকায় একঘেয়েমি থেকে দ্বন্দ্ব, তা থেকে তিক্ততার কারণে বিয়েবিচ্ছেদের প্রবণতা বেড়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে করোনা পরিস্থিতির সরাসরি প্রভাবও দেখা গেছে। সিটি করপোরেশনে করা এক আবেদনে দেখা গেছে, কর্মসূত্রে স্বামী ঝালকাঠি ও স্ত্রী সিলেটে থাকেন। স্বামী কর্মস্থল ঝালকাঠিতে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। তবে সেটা গোপন ছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে তিনি সিলেটে এলে লকডাউনের কারণে আর ফিরে যেতে পারেননি। প্রথম দিকে বিষয়টি চেপে রাখতে পারলেও একপর্যায়ে তা ফাঁস হয়ে যায়। এর জের ধরে স্ত্রী তাঁকে ডিভোর্স দেন।
সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের কাছে প্রচুর সংখ্যায় বিয়েবিচ্ছেদের আবেদন পড়ে। সব সময় আমাদের চেষ্টা থাকে কোনোভাবে হলেও তাঁদের মিলিয়ে দেওয়ার। একটা সম্পর্ক টিকে গেলে এটা বড় একটা সাফল্য। কারণ বিয়েবিচ্ছেদে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সন্তানরা।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।