জুমবাংলা ডেস্ক : করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে সারা দেশে সকল যাত্রী পরিবহন বন্ধ থাকায় বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রতিদিন ৪-৫ কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে।
করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সরকার ২৪ মার্চ থেকে দেশের সকল যাত্রীবাহী ট্রেন পরিষেবা স্থগিত করে। শুধু মালবাহী ট্রেন পরিষেবা চালু রয়েছে। যাত্রীবাহী ট্রেন পরিষেবা স্থগিত করায় বাংলাদেশ রেলপথকে প্রতিদিন ৪-৫ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। এ হিসেবে ২৪ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় ৫২-৬৫ কোটি রাজস্ব হারিয়েছে রেল। খবর ইউএনবি’র।
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক শামসুজ্জামান ইউএনবিকে বলেন, তারা যাত্রী ও মালামাল পরিবহনের মাধ্যমে গত বছর ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা আয় করেছেন।
তিনি বলেন, ২৪ মার্চ থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রতিদিন গড়ে ৪-৫ কোটি টাকার রাজস্ব লোকসান গুনছে।
ক্ষতির সঠিক চিত্র সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মহাপরিচালক (অপারেশন) এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবে।
তবে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মিয়া জাহানের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। মোবাইলে এসএমএস করে উত্তর জানার চেষ্টা করলেও তিনি সেটিরও উত্তর দেননি।
ইউএনবির সাথে আলাপকালে রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা ২৪ মার্চ থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছি। পরবর্তী সিদ্ধান্ত না দেয়া পর্যন্ত ট্রেন সার্ভিস বন্ধ থাকবে। ‘সরকারের সিদ্ধান্তে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। সরকার যখন সিদ্ধান্ত দেবে তখন আবার ট্রেন চালু করা হবে,’ তিনি বলেন।
মন্ত্রী বলেন, প্রতিদিন ২ লাখ ৭৫ হাজার যাত্রী পরিহন করে রেলওয়ের ৪-৫ কোটি টাকা রাজস্ব আসত। ‘রেল পরিষেবা বন্ধ থাকায় আমরা রাজস্ব হারাচ্ছি,’ তিনি যোগ করেন।
রেলমন্ত্রী বলেন, তারা সব ধরনের চাহিদা পূরণ করে যাত্রীদের থেকে টিকিট বিক্রয় এবং মালবাহী ট্রেন পরিবহন করে যে আয় আসে সেটা দিয়ে কর্মীদের বেতন প্রদান করেন।
তবে, মহামারির সময়ে তারা কোনো লাভের বিষয় চিন্তা করছেন না বলেও জানান তিনি।
সুজন বলেন, ট্রেন বন্ধ থাকলেও মেইটেনেন্স খরচ, কর্মকর্তা কর্মচারীর বেতন দিতে হবে। সেই ব্যয় বাংলাদেশ রেলওয়ে বহন করবে।
তিনি বলেন, সব মিলিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়েতে মোট ৩৬৪টি ট্রেন আছে। মোট জনবল রয়েছে ২৬ হাজার ১৩৫ জন।
তার মধ্যে প্রথম শ্রেণি ৪১৮, দ্বিতীয় শ্রেণি ৭৫২, তৃতীয় শ্রেণি ১৩ হাজার ৬২২ এবং চতুর্থ শ্রেণির ১১ হাজার ৩৪৩ জন ।
রেলমন্ত্রী বলেন, রেল বন্ধ থাকলেও ট্রেন ও স্টেশন রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে যারা আছেন তারা দায়িত্ব পালন করছেন।
‘সকল কর্মকর্তাদের সদর দপ্তরে থাকতে বলা হয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে চলাচলের প্রয়োজন হলে যেন ট্রেন চালানো যায় সে বিষয়ে দায়িত্বশীলদের সব সময় প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে,’ তিনি যোগ করেন।
মন্ত্রী করোনাভাইরাস রোধে সকল স্টেশনগুলোতে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো এবং নিজে ও স্টাফদেরকে সচেতন থাকার নির্দেশ দেন।
এ বিষয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোফাজ্জেল হোসেন ইউএনবিকে বলেন, ট্রেন বন্ধ থাকায় আমরা অবশ্যই রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। তবে এখন আমরা জাতীয় স্বার্থকেই গুরুত্ব দিচ্ছি।
করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে সরকারের পদক্ষেপ
২৩ মার্চ বাংলাদেশ সরকার ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ১০ দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে এবং পরে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়। রবিবার সাধারণ ছুটি ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়িয়ে নতুন প্রজ্ঞাপন দেয় সরকার।
এছাড়াও, সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শপিংমল এবং মার্কেটসহ গণপরিবহন, ট্রেন, লঞ্চ এবং বিমান পরিষেবা বন্ধ রয়েছে।
রবিবার পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত কাউকেই রাজধানী থেকে বাইরে যেতে এবং প্রবেশ করতে দেয়া হবে না।
রবিবার চারটি নতুন প্রণোদনা প্যাকেজের ঘোষণা দিয়েছে সরকার।
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশের অর্থনীতির ওপর সম্ভাব্য প্রভাব ও তা থেকে উত্তোরণে ৬৭ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার চারটি নতুন প্রণোদনা প্যাকেজের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন/ভাতা পরিশোধে ৫ হাজার কোটি টাকার একটি আপৎকালীন প্রণোদনা প্যাকেজসহ মোট আর্থিক সহায়তা প্যাকেজের পরিমাণ হলো ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি
রবিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত অনলাইন ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ১৮ জন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে এবং একজনের মৃত্যু হয়েছে।
এনিয়ে দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ৮৮ জনে দাঁড়িয়েছে এবং মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৯ জনে।
বৈশ্বিক অবস্থা
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে রবিবার পর্যন্ত বিশ্বে প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৪ হাজার ৭১৬ জনে।
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের সর্বশেষ পরিসংখ্যান জানার অন্যতম ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, নভেল করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন বিশ্বের ১২ লাখ ১ হাজার ৯৩৩ জন। এদের মধ্যে বর্তমানে ৮ লাখ ৯০ হাজার ৫৮৩ জন চিকিৎসাধীন এবং ৪২ হাজার ২৯০ জন (৫ শতাংশ) আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছেন।
এ পর্যন্ত করোনাভাইরাস আক্রান্তদের মধ্যে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৩৪ জন (৭৯ শতাংশ) সুস্থ হয়ে উঠেছেন এবং ৬৪ হাজার ৭১৬ জন (২১ শতাংশ) রোগী মারা গেছেন।
গত বছরের ডিসেম্বরের চীন থেকে উৎপত্তি হওয়া প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২০৬টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।