জুমবাংলা ডেস্ক : পরিবারের প্রায় সবাই করোনায় আক্রান্ত। এর মধ্যে শনিবার (৩ জুলাই) রাতে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় স্বামী প্রফুল্ল কর্মকারের। স্বামীর মরদেহ বাড়িতে নিতে চেয়েছিলেন স্ত্রী কল্পনা রানী কর্মকার। কিন্তু বাড়িতে দুই ছেলে, ছেলের বউ ও নাতি করোনায় আক্রান্ত। তাই মরদেহ বাড়িতে নিতে চেয়েও পারেননি তিনি।
শনিবার রাতেই হাসপাতাল থেকে স্বামীর নিথর দেহটি অ্যাম্বুলেন্স যোগে মিরপুর উপজেলার পৌর শ্মশানে নেওয়া হয়। তখন শ্মশানের গেটে তালা ঝুলছিল, হচ্ছিল বৃষ্টিও। অ্যাম্বুলেন্সের লোকজন শ্মশানের পাশে মরদেহ রেখে চলে গেলে বৃষ্টির গতি বেড়ে যায়। তখন কল্পনা রানী কর্মকার স্বামীর মরদেহ সেখান থেকে সরিয়ে নেন পাশের গোপালপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বারান্দায়। সেখানেই সারারাত স্বামীর মরদেহ নিয়ে অপেক্ষা করেন কল্পনা রানী। এ সময় কেউ পাশে পাননি তিনি।
রোববার (৪ জুলাই) সকালে মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিংকন বিশ্বাস বিষয়টি জানতে পেরে মরদেহটি সমাহিত করার ব্যবস্থা করেন। নিহত প্রফুল্ল কর্মকার (৭০) কুষ্টিয়ার মিরপুর পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের হরিতলা এলাকার বাসিন্দা।
নিহতের পরিবার ও স্থানীয়রা বলেন, অ্যাম্বুলেন্সে করে শনিবার রাতে মরদেহটি শ্মশানে নেওয়া হয়। মধ্যরাতে কল্পনা কর্মকার ও তার স্বামীর মরদেহ ছাড়া আর কেউ সেখানে ছিলেন না। তখন বৃষ্টিও হচ্ছিল। এ সময় কল্পনা কর্মকার শ্মশান কমিটির সদস্যদের তার স্বামীর মৃত্যুর বিষয়টি জানান কিন্তু কেউ তাতে সাড়া দেননি। প্রফুল্ল কর্মকারের মৃত্যুর পর স্ত্রী কল্পনা তার পরিবারকে জানিয়েছিলেন। কিন্তু দুই ছেলে, ছেলের বউ ও নাতি করোনায় আক্রান্ত। তাই তারা শ্মশানে আসতে পারেননি।
কল্পনা রানী কর্মকার বলেন, শনিবার রাতে আমার স্বামী মারা যান। কুষ্টিয়া হাসপাতালে তিনি মারা গেলে অ্যাম্বুলেন্সে করে তার মরদেহ শ্মশান ঘাটে নিয়ে আসি। কারণ বাড়িতে সবাই করোনা আক্রান্ত। তাই বাড়িতে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। অ্যাম্বুলেন্সের সবাই আমাকে ও আমার স্বামীর লাশ রেখে চলে যায়। তখন শ্মশানের গেটে তালা দেওয়া ছিল। প্রচণ্ড বৃষ্টি শুরু হলে আমার স্বামীর লাশ নিজে বহন করে স্কুলের বারান্দায় নিয়ে যাই। সেখানে সারারাত একাই কাটিয়েছি। আত্মীয়-স্বজন বা এলাকাবাসী কেউ আমার পাশে দাঁড়ায়নি। পরে সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সাহায্যে আমার স্বামীর মরদেহ সমাহিত করা হয়।
এ বিষয়ে মিরপুর পৌরসভার কাউন্সিলর জাহিদুল ইসলাম জানান, প্রফুল্ল কর্মকারের পরিবারের অন্য সদস্যরা করোনায় আক্রান্ত। তাই তারা মরদেহ সৎকারে আসতে পারেনি। হিন্দু সম্প্রদায়ের কেউও মরদেহটির সৎকারে এগিয়ে আসেনি। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানালে রোববার সকালে সমাহিত করার ব্যবস্থা করতে বলেন। পরে বেলা ১১টার দিকে স্থানীয় কয়েকজন মুসলিম যুবক মরদেহটি মুখাগ্নি করে শ্মশানের পাশে সমাহিত করেন।
মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিংকন বিশ্বাস জানান, বিষয়টি জানার পরপরই পৌর মেয়র ও স্থানীয় কাউন্সিলরকে বিষয়টি অবহিত করা হয়। তারা স্থানীয়দের দিয়ে সমাহিত করার কাজ সম্পন্ন করেছেন।
প্রফুল্ল কর্মকারের বড় ছেলে আনন্দ কর্মকার জানান, তারা সবাই করোনায় আক্রান্ত। তাই শ্মশানে যেতে পারেননি। তার মা সারা রাত বাবার মরদেহের সঙ্গে ছিলেন।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে শ্মশান কমিটির সভাপতি আনন্দ দেবনাথ বলেন, ওই পরিবারের সবাই করোনায় আক্রান্ত। এমনকি মৃতের স্ত্রীও করোনায় আক্রান্ত। এজন্য আমার কেউ সেখানে যেতে পারিনি। তবে সকালে তার ছেলে আমার কাছ থেকে শ্মশানের চাবি নিয়ে গেছে। আমি আর কিছু জানি না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।