সৌদি আরবে শনাক্ত হওয়া করোনা রোগী এবং করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে বাংলাদেশিদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক বলে মনে করছেন সৌদি প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
তবে সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাস মনে করছে অন্য দেশের অভিবাসীদের তুলনায় সেখানে বাংলাদেশিদের আক্রান্ত হওয়ার হার কিছুটা বেশি হলেও তা অস্বাভাবিক বা আশঙ্কাজনক নয়।
বৃহস্পতিবার (৪ জুন) পর্যন্ত সৌদি আরবে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৯১ হাজার ১৮২ জন। তবে সৌদি আরবের সরকারি হিসেব অনুযায়ী ২৫ মে পর্যন্ত সেখানে করোনায় আক্রান্ত বাংলাদেশির সংখ্যা ১০ হাজার ৯০৫ জন বলে জানান সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ। আর করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৮৭ জন বাংলাদেশি।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা বিবিসিকে জানিয়েছে, তাদের হিসেবে নিশ্চিতভাবে করোনা আক্রান্ত এই ৮৭ জনের পাশাপাশি গত তিন মাসে কোভিড-১৯ এর উপসর্গ নিয়ে সৌদি আরবে মারা গেছে মোট ২২৪ জন বাংলাদেশি।
জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় বলছে এখন পর্যন্ত সৌদি আরবে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৫৭৯। অর্থাৎ সৌদি আরবে মোট করোনা ভাইরাসে মৃতদের ১৫ ভাগই বাংলাদেশি নাগরিক।
রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ বলেন, সৌদি আরবে প্রায় ২২ লাখ বাংলাদেশি রয়েছেন। সেই অনুপাতে যদি চিন্তা করেন তাহলে যেই পরিমাণ বাংলাদেশি কোভিড-১৯ আক্রান্ত হচ্ছেন, সেই হার খুব একটা আশঙ্কাজনক নয়। এখানকার বাংলাদেশিদের অধিকাংশের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা বা সচেতনতার ঘাটতি রয়েছে। বেশি সংখ্যক বাংলাদেশির আক্রান্ত হওয়ার একটি কারণ সেটি হতে পারে।”
করোনা ভাইরাস নিয়ে সচেতনতার অভাব অথবা স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতার কারণেই সৌদি আরবের বাংলাদেশিদের মধ্যে সংক্রমণের হার বেশি বলে মনে করেন সেখানে বসবাসরত বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি নাগরিকও।
সৌদি আরবে থাকা বাংলাদেশি নাগরিকদের অধিকাংশই কম দক্ষতা সম্পন্ন শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। তাদের অধিকাংশই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করেন। বদ্ধ জায়গায় একসাথে গাদাগাদি করে থাকতে হয় তাদের। এরকম পরিস্থিতিতে শারীরিক দূরত্ব মানা বা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা প্রায় অসম্ভব বলে মন্তব্য করেন অভিবাসী শ্রমিকদের অনেকে।
সাগর চৌধুরী নামের এক ব্যক্তি বিবিসি বাংলাকে জানান তাদের শ্রমিক ক্যাম্পে গাদাগাদি করে থাকতে হয়। কোথাও এক রুমে ৮-১০ জন, কোথাও কোথাও তার চেয়েও বেশি গাদাগাদি করে থাকতে হয়।
চিকিৎসা নেয়ার ক্ষেত্রেও এদের অনেকেই বিভিন্ন ধরণের সমস্যার মুখে পড়ছেন বলে জানান তিনি। অনেকেই করেোনা ভাইরাস পরীক্ষা করাতে পারছেন না। অনেক ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত গাড়ি না থাকায় শ্বাসকষ্টের রোগী হাসপাতালে যেতে পারছেন না এবং চিকিৎসা না পেয়ে মারা যাচ্ছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই সৌদি আরবে বেশ কঠোরভাবে লকডাউন কার্যকর হওয়ার পর অনেক বাংলাদেশি নাগরিকের কাজ করার সুযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে সেখানে বহু বাংলাদেশি অনিশ্চিত জীবন কাটাচ্ছেন।
করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে গত দুই মাসের বেশি সময় ধরে আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় এই সময় সৌদি আরবে মারা যাওয়া বাংলাদেশিদের মরদেহ বাংলাদেশে আনা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ।
তিনি বলেন, মৃতদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে ধর্মীয় রীতিনীতি অনুসরণ করে আমরা তাদের লাশ এখানেই দাফন করছি।
সূত্রঃ বিবিসি বাংলা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।