নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ঘরে থাকার পাশাপাশি বেশি বেশি দোয়া করার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন, সৌদি আরবের মক্কা এবং মদিনাতেও কারফিউ দিয়ে দেয়া হয়েছে। ঘরে বসে দোয়া করলে আল্লাহ সে দোয়া কবুল করবেন। কাজেই, ঘরে বসে যত বেশি দোয়া পড়া যায়। আর এখনতো কাজ নেই বেশি। কাজেই, বেশি বেশি করে দোয়া করতে হবে। যাতে আল্লাহ আমাদের এ বিপদ থেকে রক্ষা করেন।’
আজ সকালে ভিডিও কনফারেন্সে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক তাঁর জেলায় নির্দেশনা অনুযায়ী জুমার নামাজ দশজন এবং ওয়াক্তর নামাজে পাঁচজনের বেশি উপস্থিতি না রাখার বিষয়টি জানালে প্রধানমন্ত্রী মুসল্লিদের প্রতি এই অনুরোধ জানান।
মুখ্য সচিব ড.আহমদ কায়কাউস ভিডিও কনফারেন্সটি সঞ্চালনা করেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া, প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এবং প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ ভিডিও কনফারেন্সে উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘করোনা ভাইরাস সম্পর্কে দেশবাসীকে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, এটি সংক্রামক। কখন সংক্রামিত হবে তা বোঝা খুব কষ্টকর। এটাই হচ্ছে এ ভাইরাস নিয়ে সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অদৃশ্য শক্তির মত করোনাভাইরাস আমাদের ভেতরে হানা দিয়েছে । এ ভাইরাসে শুধু একটি দেশ নয়, পৃথিবীর প্রতিটি দেশের মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, আক্রান্ত হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘১ লাখ ৩ হাজারের মতো মানুষ ইতিমধ্যে মারা গেছেন এবং লাখ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। বিভিন্ন উন্নত দেশ এটা মোকাবিলা করতে হিমশিম খাচ্ছে। সেসব দেশে হাজার হাজার লোক মারা যাচ্ছে।’
করোনাভাইরাসের কারণে যারা মারা গেছেন তাদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সারাদেশে এ ভাইরাস মোকাবিলায় বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছি। এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু খুব কম থাকলেও এটা মানুষকে ভোগায় বেশি।’
তিনি বলেন, এ ভাইরাস থেকে বাঁচার জন্য সব কর্মসূচি বন্ধ করে দিয়েছি। সবাই ঘরে থাকুন। বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। জানি, মানুষের কষ্ট হবে কিন্তু আমরা করণীয় করে যাচ্ছি। এজন্য আমরা ২৩টি নির্দেশনা তৈরি করেছি।
তিনি এ সময় সর্দি-কাশি হলে সকলকে প্রচুর গরম পানি খাওয়ার এবং ঘরে থাকারও পরামর্শ দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘হাসপাতালগুলোতে আইসোলেশন খোলা হয়েছে। করোনা রোগীর জন্য হাসপাতালে আলাদা ওয়ার্ড করে দিয়েছি। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছি।
তার সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সংবাদমাধ্যম অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে সচেতনতামূলক জিনিস প্রচার করছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগামী ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবস, সবসময় আমরা এটি উদযাপন করি। এবার তো আমরা সেভাবে জনসমাগম করতে পারব না। যেটুকু সীমিত আকারে ঘরে বসে করা যায়, সেটুকু করবেন, জনসমাগম যেন না হয়।
তিনি বলেন, ইনশাল্লাহ, এ অবস্থা চলে গেলে আমরা ভালোভাবে করতে পারব। কারণ, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার প্রথম শপথ নিয়েছিল এই মেহেরপুরে-এ কথা আমাদের সবসময় স্মরণ রাখতে হবে।’
তিনি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে এ সময় সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপের এবং বাংলাদেশে যেন কেউ ঢুকতে না পারে তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন এবং কেউ ঢুকে পড়লে তাকে সেখানেই কোয়ারেন্টিনে রাখার ব্যবস্থা গ্রহণেও নির্দেশ প্রদান করেন।
করোনাভাইরাসের প্রকোপে বিশ্বব্যাপী মারাত্মক খাদ্য সংকট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যদি নিজেরা উৎপাদন ঠিক রাখি তাহলে এই সঙ্কট মোকাবিলা করতে পারব। এজন্য আমাদের উৎপাদন বাড়াতে হবে, যাতে আমার দেশের মানুষ কষ্ট না পায়। পাশাপাশি আমরা অনেক দেশকে সহযোগিতা করতে পারি, রফতানি করতে পারি সেই বিষয়টা মাথায় রেখেই আপনারা উৎপাদন বাড়াবেন ‘
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কারও এতোটুকু জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। আপনারা বাড়ির পাশে এবং ছাদে টবের মধ্যেও গাছ লাগান। যেটাই উৎপাদন করবেন সেটাই কাজে লাগবে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



