জুমবাংলা ডেস্ক : পুরান ঢাকার কেরানীগঞ্জের একটি কারখানায় কাজ করতেন তিনি। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে মালিক বন্ধ করে দিলেন সেই কারখানা। হাতে কিছু টাকা ধরিয়ে মালিক বললেন, এবার বাড়ি যাও। পরিস্থিতি ভালো হলে ফোন করে জানাবো। তখন প্রয়োজন হলে আসতে বলবো।
কিন্তু কাজ হারিয়ে কোথায় যাবেন হঠাৎ বেকার হয়ে পড়া বৃদ্ধ মজিবুর রহমান (৬০)। চারদিকে সর্ষে ফুল দেখতে লাগলেন। কারণ, বাড়িতে তো স্ত্রী সন্তান কেউ নেই। একমাত্র মেয়ে শ্বশুর বাড়িতে। সেখানেও আশ্রয় অনিশ্চিত। তারপরও শেষ ভরসা গ্রামের বাড়িতে তো ভিটে আছে। সেখানেই না হয় থাকবেন।
এমন অনিশ্চয়তার মধ্যে শনিবার (১৮ এপ্রিল) ভোরে রওয়ানা দিয়ে চোরাগোপ্তা পথে চাঁদপুরে মতলব উত্তরের গ্রামের বাড়িতে ফেরেন মজিবুর রহমান। উপজেলার সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের গোপালকান্দি গ্রামের বাড়িতে পা রাখা মাত্র তাকে বাধা দিলেন বাড়ির লোকজন। কারণ, তারা ধারণা করছেন মজিবুর করোনায় আক্রান্ত।
এরপর তিনি ভাবলেন, পাশের গ্রাম মুক্তিরকান্দিতে মেয়ের শ্বশুর বাড়ি। সেখানেই যাই। ওই বাড়িতে মেয়ে পারুল আক্তার বাবাকে দেখে আনন্দে কেঁদে উঠলেন। উঠান থেকে ঘরে ডেকে নেবেন। এমন সময় বাড়ির অন্যরাও বাধা দিলেন। শেষমেশ পাশের ঈদগাহ মাঠে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিলেন মজিবুর রহমান। ততোক্ষণে শরীর ক্লান্ত শ্রান্ত।
এদিকে, গোটা গ্রাম ও আশপাশে ছড়িয়ে পড়েছে ঢাকা থেকে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী এলাকায় ঢুকেছে। বিষয়টি জানানো হলো উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে। তিনি টিম পাঠিয়ে ঈদগাহ থেকে উদ্ধার করলেন, বৃদ্ধ মজিবুর রহমানকে। প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখা গেলো বৃদ্ধের শরীরে কিছুটা জ্বরের উপসর্গ রয়েছে।
এই ব্যাপারে মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নুসরাত জাহান মিথেন জেলা সিভিল সার্জনের সঙ্গে যোগাযোগ করে চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে পাঠানোর ব্যবস্থা করলেন মজিবুর রহমানকে।
এ বিষয় ডা. মিথেন বলেন, যেহেতু আশপাশে করোনা আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। তাছাড়া ঢাকা থেকে এসেছেন। তাই যেকোনো সংক্রমণ এড়াতে এমন ব্যবস্থা নিয়েছি। চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ও করোনা বিষয়ক ফোকালপার্সন ডা. সুজাউদ্দৌলা রুবেল বলেন, ভর্তি হওয়া মজিবুর রহমান নামে এই ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল।
অন্যদিকে জেলা সিভিল সার্জন ডা. সাখাওয়াত উল্লাহ জানান, লকডাউন ঘোষণার পর জেলার বাইরে থেকে আসা লোকজনদের নিয়ে আমরাও বড় দুশ্চিন্তায় রয়েছি। তবে যে যাই বলুক, করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে মতলব উত্তরের সাদুল্লাপুর ও মুক্তিরকান্দি গ্রামবাসীর এমন অমানবিক আচরণে অনেককেই হতবাক করেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।