রেজাউল মাসুদ: ভয়ংকর এক দিনের সামনে দাড়িয়ে আমরা ।আমাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবন সম্পূর্ণ থমকে গিয়েছে । প্রতিনিয়ত আতঙ্ক তাড়া করে বেড়াচ্ছে আমাদেরকে। গোটা পৃথিবীতে মৃত্যুর সংখ্যা হাজার হাজার।বাংলাদেশের মত ঘনবসতিপূর্ণ দেশে দারিদ্রের সংগে মানুষ কে যেখানে লড়তে হয় প্রতিদিন প্রতিমুহুর্তে সেখানে এই রোগ ছড়িয়ে পড়লে দাবানলের আঁকার যে নিবে তা আমাদের কারুর অজানা নয়, তবুও সামাজিক দুরত্ব কিংবা লকডাউন না মেনে বাজারে পথে ঘাটে অলিগলিতে যেন মানুষে শুধু গিজগিজ করছে , জানিনা কোন পথে আমরা, প্রতি মুহুরতে মনে হচ্ছে দরজার যেন সাক্ষাত আজরাঈল দাড়িয়ে রয়েছে। বিশ্বজুড়ে মহামারী রূপ নেওয়া করোনা ভাইরাস এখন বাংলাদেশেও মূর্তিমান আতঙ্কের।
এই সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করতে শুরু থেকেই আইনশৃংখলা বাহিনীর প্রধানতম সংস্হা বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি সদস্য ক্লান্তিহীন নির্ঘুম সময় পার করছেন। যেকোনো সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ করতে হস্তক্ষেপ করছেন তারা। চলমান করোনা পরিস্থিতিতে নিরাপদ থাকতে সবাই যেখানে বাসায় অবস্থান করছেন, সেখানে কাজ করে যাচ্ছেন বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি সদস্য ,শুরু থেকেই স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে তাদের চাহিদামত সার্বক্ষণিক সবধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ। বিদেশফেরত রোগীগের ইমিগ্রেশন থেকে শুরু করে রোগী সনাক্তকরণ,, গুজবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ নানা বিষয়ে পুলিশ নিষ্ঠার সাথে কাজ করছে, পাশাপাশি, পুলিশকে শিডিউল কাজ মামলা, তদন্ত, প্রোটোকল ও স্বাভাবিক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার নিয়মিত কার্যক্রমও পরিচালনা করতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ পুলিশ করোনাভাইরাস প্রতিরোধের লক্ষে জনসাধারণের মাঝে ব্যাপক সচেতনতা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যকর্মীদের সহায়তা বিশেষ করে চিকিৎসকদের বাসা থেকে নিজ কর্মস্থলে পৌঁছে দিতে । জেলা প্রশাসন এবং জেলায় আগত সেনাবাহিনীর সদস্যদের সার্বক্ষণিক সহায়তা প্রদান,প্রচার-প্রচারণায় লিফলেট বিতরণ, মাইকিং কার্যক্রম, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নির্দেশিত ব্যক্তি হোম কোয়ারেনটাইন মানছেন কিনা তা নিশ্চিত করন, অবৈধ মজুদ, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও সরবরাহ ঠিক রাখতে সংশ্লিষ্ট যানচলাচলসহ বাজার স্থিতিশিল রাখতে নিরলস কাজ করছে বাংলাদেশ পুলিশ।পুলিশের সাথে মাঠে তৎপর রয়েছে জনপ্রশাসন, আর্ম ফোর্সেস সদস্যগণ, স্বাস্থ্যখাতের সংশ্লিষ্ট সকলেই, বিশেষ করে চিকিৎসক ও নার্স এবং গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন ধরনের সেবা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে কর্মরত পেশাজীবীরা।
করোনা প্রতিরোধে টানা ১০ দিন এরপর আরও সাতদিন বন্ধের কারণে খাবার সংকটে পড়া নিম্নআয় গরীব ও রাস্তায় থাকা ভাসমান মানুষের মধ্যে খাবার বিতরণ করছে বাংলাদেশ পুলিশ। বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটসমূহ তাদের স্ব স্ব কর্ম অধিক্ষেত্রে নিজ নিজ উদ্দোগে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে বাসায় অবস্থানরত সম্মানিত নাগরিকবৃন্দ ও সেবাগ্রহীতাকে খাবার পৌছে দিচ্ছে পুলিশ। গরীব ও রাস্তায় থাকা ভাসমান মানুষের মধ্যে রান্না করা খাবার ও শুকনো খাবার বিতরণ করেছে।ঢাকা মহানগরের প্রতিটি থানায় ৫০ জন করে দিনে আড়াই হাজার অসহায় মানুষের মধ্যে খাবার বিতরণ চলছে। ঢাকার বাইরে পুলিশের অন্যান্য বিভাগ ও প্রতিটি ইউনিট নিজেদের উদ্যোগে দিনে ও রাতেও খাবার বিতরণ করছে।
কিছুদি আগে ঢাকায় করোনার আগাম প্রস্তুতি হিসেবে ৫০ জনের একটি স্পেশাল টিম গঠন করার সিদ্ধান্ত নেয় পুলিশ। যদি কোভিড-১৯ মহামারি আকার ধারণ করে এই টিম আক্রান্তদের হাসপাতালে আনা/নেয়া, মরদেহ সৎকারের মত অত্যন্ত ঝাঁকিপূর্ণ কাজ করবে।ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ৪৫০ জন পুলিশ কর্মকর্তাকে স্বেচ্ছায় এই টিমে যোগদানের জন্য আহ্বান করা হয়েছিল। যোগদানকারীদের পরিবারের মায়া ত্যাগ করে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছিল। জানা গেছে, সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে ৪৫০ জনের সবাই একসঙ্গে বলে ওঠে ‘স্যার আমি প্রস্তুত’।
আজ কোভিড-১৯ আক্রান্ত সন্দেহে আইসোলেশনে থাকা শরীয়তপুরের নড়িয়ায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। তার জানাজাসহ সকল শেষকৃত্য সম্পন্ন করেছে একদল পুলিশই।
দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম প্রহরে রাজারবাগে তাজা বুকের রক্ত ঢেলে প্রথম প্রতিরোধ ছিল বাংলাদেশ পুলিশ-এর অকুতোভয় সদস্যদেরই। তেমনি দেশের সকল দুর্যোগময় পরিস্থিতিতেও জনগণকে রক্ষায় অকাতরে প্রাণ দিয়েছে এই পুলিশই।
দিনরাত অবিরাম ছুটে চলা পুলিশের প্রতিটি সদস্য ভালো থাকুক।
ভাল থাকুক বাংলাদেশ
ভাল থাকুক পৃথিবী ।।
লেখক: বাংলাদেশ পুলিশের এসপি। কর্মরত আছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।