জুমবাংলা ডেস্ক: বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য বিভিন্ন এলাকা বা ক্লাস্টার ভিত্তিক লকডাউনের একটি পরিকল্পনা করছে সরকার। এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য রবিবার উপস্থাপন করা হবে। খবর বিবিসি বাংলার।
বিভিন্ন এলাকায় সংক্রমণের হার বিবেচনায় নিয়ে পাড়া, মহল্লা বা ছোট ছোট এলাকাভিত্তিক এসব লকডাউন কার্যকর করা হতে পারে বলে সরকারের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
সংক্রমণের ম্যাপিং
বাংলাদেশের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের উপদেষ্টা ও জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ”আইইডিসিআরের কাছে সারাদেশের পজিটিভ রোগীদের সংখ্যা আছে। সেখানে সংক্রমণের হার অনুযায়ী বিভিন্ন এলাকা চিহ্নিত করা হচ্ছে। সংক্রমণের মাত্রা অনুযায়ী ম্যাপিং করা হচ্ছে।”
এভাবে বিভিন্ন এলাকাকে লাল, হলুদ ও সবুজ এলাকা বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে। লাল হচ্ছে যেখানে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। হলুদ এলাকা হচ্ছে যেখানে মাঝারি ধরণের ঝুঁকি রয়েছে, হয়তো কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তির সংখ্যা অনেক বেশি। যেখানে সংক্রমণ বিক্ষিপ্ত বা বিচ্ছিন্ন, সেটা সবুজ এলাকা হতে পারে বলে তিনি জানান।
তিনি বলছেন, এভাবে রোগীদের যদি এলাকাভিত্তিক চিহ্নিত করে পৃথক করা যায়, তাহলে সংক্রমণ ছড়ানো যেমন বন্ধ হবে, তেমনি রোগীর সংখ্যাও নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
প্রাকৃতিকভাবে এই মহামারি চলে যাবে, তেমন কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। ফলে এভাবেই মহামারিকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং এখন সেরকম একটি পরিকল্পনার কথা ভাবা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
”ঢাকায় টোলারবাগে, বাসাবোয় যখন সংক্রমণ পাওয়া গিয়েছিল, তখন কিন্তু এলাকাভিত্তিক বেষ্টনী তৈরি করে লকডাউন বেষ্টনী তৈরি করা হয়েছিল। শিবচরেও কয়েকটি বাড়ি বা মহল্লা ভিত্তিক সেটা করা হয়েছিল। ”
”সেটাই এখানে করা হবে। যেহেতু রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে, কাজেই সেই তুলনায় (এলাকা) একটু বড় হবে। কিন্তু গোটা থানা বা গোটা জেলা এখানে বেষ্টনীর মধ্যে আসবে না। এখনো পুরোপুরি চূড়ান্ত হয়নি, তবে যতদূর জানি, হয়তো কোন একটা ওয়ার্ডের কোন একটা ব্লক, যা আলাদাভাবে চিহ্নিত করা যায়, সেখানে চারদিকে একটা বেষ্টনী করা হবে। সেখানে চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে,” বলছেন মি. হোসেন।
প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর বাস্তবায়ন
এলাকাভিত্তিক লকডাউন প্রসঙ্গে বাংলাদেশের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, ”প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বেশ কিছুদিন এটা নিয়ে আমরা কাজ করেছি। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ নিয়ে একটি পরিকল্পনা তৈরি করে রবিবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হবে। কীভাবে কী করা হবে, সেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তিনি দেবেন, তার নির্দেশনায় আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা নেবো।”
তিনি জানান, এখানে ম্যাপিং করা হচ্ছে, কীভাবে কোন এলাকা লকডাউন করা হবে, তার প্রক্রিয়া কী হবে, সেসব নিয়ে বেশ কিছু সুপারিশ তৈরি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন ও নির্দেশনা পাওয়া গেলে সেটা বাস্তবায়ন করা হবে।
তিনি বলছেন, ”এলাকাভিত্তিক চলাচলে যদি আমরা কৌশল নিতে পারি, তখন সেখানে চলাচল কম হবে, ফলে সংক্রমণও কম হবে। এখন ঢাকার কথা যদি ধরেন, সব এলাকায় তো একরকম সংক্রমণ নেই। সুতরাং সব তো একরকম করা যাবে না। কোথাও বেশি আছে, কোথাও কম। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার পরিকল্পনা করছি।”
বাংলাদেশের সরকার এমন সময়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যখন টানা কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশে প্রতিদিন দুই হাজারের বেশি কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হচ্ছে।
জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিসিনের করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত দেশের তালিকায় ২০ নম্বরে রয়েছে বাংলাদেশ। শনিবার পর্যন্ত দেশটিতে ৬৩,০২৬ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে আর মৃত্যু হয়েছে ৮৪৬ জনের।
দুইমাসের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে সাধারণ ছুটি থাকার পর গত ৩০শে মের পর থেকে আর ছুটি বাড়ানো হয়নি। অফিস, গণপরিবহন ও দোকানপাট খুলতে শুরু করেছে। কিন্তু সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে আবার কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার সুপারিশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
এরই মাঝে এলাকাভিত্তিক লকডাউনের এই প্রস্তাব সামনে এসেছে।
কীভাবে কাজ করবে এই এলাকাভিত্তিক লকডাউন
আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ও জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেন বলছেন, ”যেসব এলাকার বাসিন্দারা কোভিড-১৯ শনাক্ত হবেন, তারা বাসায় বা প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে থাকবেন অথবা হাসপাতালে যাবেন। যাদের কোয়ারেন্টিনে থাকার কথা, তারা সেভাবে থাকবেন। আর অন্য বাসিন্দারা যে ঘর থেকে একদম বের হতে পারবেন না, তা নয়। কিন্তু তাদের চলাফেরা নিয়ন্ত্রিত থাকবে। তবে বাইরে থেকে কেউ সেখানে প্রবেশ করতে পারবেন না। কেউ প্রবেশ করার চেষ্টা করলে তাদের সতর্ক করা হবে।”
তিনি জানান, সরকার, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এবং স্বেচ্ছাসেবকরা মিলে এই ব্যবস্থাটি নিশ্চিত করবেন।
”প্রথম পর্যায়ে অল্প কিছু এলাকায় এটি করা হবে। সেখানে সাফল্য বা সীমাবদ্ধতা দেখে পর্যায়ক্রমে সারা দেশে করার পরিকল্পনা আছে।”
কিন্তু কোন একটি এলাকা লকডাউনের মধ্যে এলে, সেই এলাকা দিয়ে অন্যরা কীভাবে যাতায়াত করবেন? সেসব এলাকায় যাদের অফিস বা কর্মক্ষেত্র রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রেই বা কী হবে?
মুশতাক হোসেন বলছেন, ”বড় বড় রাস্তা, যা অন্যান্য বাসিন্দারা ব্যবহার করবেন, সেটি বন্ধ করা হবে না। হয়তো চারদিকে রাস্তা আছে, তার মাঝখানের অংশটুকু বেষ্টনীর ভেতরে থাকবে। রাস্তার অপর পাশ হয়তো আরেকটি বেষ্টনীর ভেতর থাকবে।”
তিনি জানাচ্ছেন, যারা নিশ্চিত রোগী শনাক্ত হয়েছে এবং তাদের সংস্পর্শে যারা এসেছেন, তাদের চলাফেরার ক্ষেত্রই বিশেষভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। অন্যান্য বাসিন্দাদের প্রয়োজন অনুযায়ী বাইরে বের হওয়া বা প্রবেশ করার অনুমতি দেয়া হবে। জরুরি সংস্থার কর্মীরা বিনা বাধায় যেতে পারবেন।
তবে কীভাবে এসব নিয়ন্ত্রণ করা হবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি বলে তিনি জানিয়েছেন।
এলাকাভিত্তিক লকডাউন প্রসঙ্গে বাংলাদেশের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, এলাকাভিত্তিক লকডাউনের বাস্তবায়ন ও তার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সেই অনুযায়ী কাজ শুরু করা হবে।
এর মাঝে গত শুক্রবার থেকে কক্সবাজার পৌরসভাকে রেড জোনের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সেখানে ২০শে জুন পর্যন্ত এলাকাটি লকডাউন থাকবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।