জুমবাংলা ডেস্ক : মানুষ কতো কিছুই তো শখের বশে করে থাকে। আবার সেই শখ অনেক সময় মানুষের অভ্যাসেও পরিণত হয়ে যায়। ঠিক তেমনটাই ঘটেছে নাটোরের আব্দুল গাফফারের সঙ্গে। দীর্ঘ ২০ বছর যাবৎ তিনি কাঁচা বেগুন খেয়ে আসছেন। প্রথমে শখের বশে খেলেও বর্তমানে এটি তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
নাটোরে বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের তাল বেগুনের আড়তে আব্দুল গাফফারের কাঁচা বেগুন খাওয়ার দৃশ্য ধরা পড়ে গণমাধ্যমের ক্যামেরায়।
তাল বেগুনের আড়তে বেগুন বাছাই ও বস্তাজাতকরণে কাজ করতে করতে একের পর এক কাঁচা বেগুন কামড়ে খাচ্ছেন আব্দুল গাফফার। তার খাওয়ার ধরন দেখলে যে কেউ মনে করতে পারে তিনি হয়তো পেয়ারা খাচ্ছেন। কিন্তু না একটু ভালো করে খেয়াল করলেই বোঝা যায় তিনি কাঁচা বেগুন খাচ্ছেন।
তবে প্রথমে দেখে অবাক হলেও পরে জানা গেল তিনি নিয়মিতই কাঁচা বেগুন খেয়ে থাকেন। দীর্ঘদিন ধরে কাঁচা বেগুন খেলে এই অস্বাভাবিক অভ্যাস তার বড় স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে মনে করেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
জানা গেছে, পেশায় স্যালো ইঞ্জিনচালিত ভটভটি চালক গাফফার ১৪ বছর ধরে কাজ করছেন কাঁচা সবজি (বেগুন) ব্যপারী হাসান আলীর সঙ্গে। হাসান আলী রাজশাহী অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় সরাসরি খেত থেকে বিভিন্ন জাতের বেগুনসহ অন্যান্য সবজি কিনে সেগুলো ঢাকায় পাঠান। এসব কাজে তার বেশ কয়েকজন শ্রমিক ও মালামাল যাতায়াতে গাড়ির প্রয়োজন হয়। আর গাফফার তার গাড়িতে ওই শ্রমিক ও মালামাল বহন করেন। সেই সঙ্গে বাড়তি আয়ের জন্য নিজেও তাদের সঙ্গে কাজ করেন। কিন্তু কাজের বিরতিতে কিংবা হালকা ক্ষুধায় সবাই যখন নাস্তা করতে পাশের দোকানে যান তখন তিনি কাঁচা বেগুন খেয়ে তার ক্ষুধা নিবারণ করেন।
বেগুন ব্যবসায়ী হাসান আলী বলেন, গাফফার অত্যন্ত সহজ সরল একজন মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে আমার সঙ্গে কাজ করছে। সে অনেক দিন থেকেই এই কাঁচা বেগুন খান। কিন্তু বর্তমানে তার কাঁচা বেগুন খাওয়ার পরিমাণ আরও বেড়ে গেছে। কাজ করতে করতে গাফফার অনায়াসে ৩-৪ কেজি কাঁচা বেগুন খেয়ে ফেলে। প্রথমে বিরক্ত হলেও এখন আর কিছু বলি না। জিজ্ঞেস করলে বলে আমার ভালো লাগে।
আড়তে বেগুন বেঁচতে আসা নবীর হোসেন বলেন, আমাদের এই এলাকায় তিন বছর ধরে বেগুন কিনতে আসে হাসান ব্যপারী। তার সঙ্গে গাড়ি নিয়ে আসেন গাফফার ভাই। তিনি শ্রমিকদের সঙ্গে কাজও করেন। প্রথমে একদিন দেখি গাফফার ভাই কাঁচা বেগুন খাচ্ছে। আমি তো মনে করছি হয়তো এমনিতেই কারও সঙ্গে বাজি ধরে খাচ্ছে। পরে প্রতিদিন দেখি সে এভাবে কাঁচা বেগুন খায়। এটা দেখে এখন আমরা অভ্যস্ত।
আব্দুল গাফফার বলেন, ২০ বছর যাবৎ কাঁচা বেগুন খাই। প্রথমে শখে খেতাম এখন কাজ করতে করতে হালকা ক্ষুধা লাগলেই খাই। বাড়িতে হাট-বাজার করে দেই, সকালে কাজে আসার সময় একটু খেয়ে আসি। আর এখানে এলে কাঁচা বেগুন খাই। আমার খুব ভালো লাগে।
কাঁচা বেগুন খেয়ে কখনো কোনো সমস্যা হয়নি? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কাঁচা বেগুন খেয়ে আমি কখনো অসুস্থ হয়নি। এটা আমার শরীরের সঙ্গে মানিয়ে গেছে।
তাল বেগুনে প্রতিনিয়ত কৃষকরা কীটনাশক প্রয়োগ করে থাকেন। জানা যায়, সপ্তাহে চার থেকে পাঁচ দিন পর্যন্ত চাষিরা বেগুনখেতে বিভিন্ন কীটনাশক ব্যবহার করেন।
এই বেগুন কাঁচা খেলে গাফফার বড় ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে পারেন কিনা? এমনটা জানতে চাইলে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মুহাম্মদ কালাম উদ্দিন ভূঁইয়া জানান, ৩ কেজি কাঁচা বেগুন খাওয়া কোনোভাবেই স্বাভাবিক ব্যপার নয়। কাঁচা বেগুন হজম করার জন্য যে এ্যানজাইম প্রয়োজন সেটা আমাদের শরীরে নেই। আবার কীটনাশকের একটা প্রভাব পড়তে পারে শরীরে। সেজন্য এই অভ্যাস পরিহার করা উচিত। তাছাড়া তার দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। আব্দুল গাফফারের লিভার-কিডনি পরীক্ষা করিয়ে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।