নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: গাজীপুরের শ্রীপুরে কাঁঠালের বিচিকে কেন্দ্র করে বদলে যাচ্ছে মানুষের জীবন। এক সময় ফেলে দেওয়া এই বিচিই এখন গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে ভূমিকা রাখছে। তৈরি হয়েছে কর্মসংস্থান, বাড়ছে আয়।
শ্রীপুরের কয়েকজন উদ্যোক্তার হাত ধরে এই পরিবর্তনের সূচনা। কাঁচামাল ও মৌসুমি ফল ব্যবসায়ী আইনুল হকের নেতৃত্বে গাজী মাহমুদসহ আটজনের একটি দল এখন পুরোদমে কাঁঠালের বিচি সংগ্রহ, প্রক্রিয়াজাত ও বাজারজাত করছেন।
প্রতিদিন আশপাশের গ্রাম থেকে সংগ্রহ করা হয় কাঁঠালের বিচি। এরপর শুরু হয় বাছাই, ধোয়া ও শুকানোর কাজ। মানসম্মত বিচিগুলো প্রক্রিয়াজাত করে ঢাকার কারওয়ান বাজার, শ্যামবাজারসহ দেশের বিভিন্ন পাইকারি বাজারে সরবরাহ করা হয়।
আইনুল হক বলেন, ‘‘আমরা গ্রাম থেকে বিচি সংগ্রহের জন্য কয়েকজন কর্মী রেখেছি। সপ্তাহে তিন দিন চলে প্রক্রিয়াজাতকরণ। প্রতি বার চার থেকে পাঁচ টন বিচি প্রস্তুত করা হয়।’’
প্রতি কেজি বিচি বিক্রি হচ্ছে ১৭ থেকে ১৮ টাকা দরে। মৌসুমের সময় প্রতিদিন গড়ে এক থেকে দেড় টন বিচি সংগ্রহ করা হয়। মৌসুমের বাইরে সরবরাহ কম হলেও বন্ধ হয় না তাদের উদ্যোগ।
শুধু উদ্যোক্তারা নয়, গ্রামীণ অনেক নারী-পুরুষও এই কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িয়ে উপকৃত হচ্ছেন। আগে ফেলে দেওয়া বিচিই এখন অর্থের উৎস। স্থানীয় এক নারী বলেন, ‘‘আগে এগুলো ফেলে দিতাম। এখন বেচে প্রতিদিন কিছু টাকা আয় হয়।’’
শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমাইয়া সুলতানা বন্যা মনে করেন, এই উদ্যোগ শুধু কর্মসংস্থানই বাড়াচ্ছে না, অপচয়ও রোধ করছে। কৃষি বিভাগ থেকে এ ধরনের কার্যক্রমের প্রসারে পরিকল্পনা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কাঁঠালের বিচিতে রয়েছে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামসহ নানা পুষ্টিগুণ। বিচির ভর্তা, ভাজি কিংবা তরকারি—সব ক্ষেত্রেই এর চাহিদা রয়েছে।
দেশের গণ্ডি পেরিয়ে কাঁঠালের বিচির খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝেও। পুষ্টিকর এই খাদ্য উপাদান রপ্তানি করেও বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সঠিক পরিকল্পনা ও প্রযুক্তিগত সহায়তা পেলে এ খাত হতে পারে একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক ক্ষেত্র।
কাঁঠালের বিচির এই নবযাত্রা শ্রীপুরের অর্থনীতিতে এনেছে নতুন আলোর রেখা। সাধারণ মানুষের হাতে এসেছে উপার্জনের নতুন পথ। আর প্রমাণ হয়েছে, সঠিক উদ্যোগ আর পরিকল্পনা থাকলে গ্রামীণ সম্ভাবনাও হয়ে উঠতে পারে জাতীয় সম্পদ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।