নিজস্ব প্রতিবেদন, গাজীপুর: প্রকৃতির অনন্য উপহার কাঁঠালের মৌসুমে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার জৈনা বাজারে প্রতিদিনই বসছে দেশের সবচেয়ে বড় কাঁঠালের পাইকারি হাট। কাকডাকা ভোর থেকে শুরু হয় এ হাটের ব্যস্ততা, আর তা চলে দুপুর পর্যন্ত। শ্রীপুরের লাল মাটিতে জন্ম নেওয়া মিষ্টি, সুগন্ধি কাঁঠালের চাহিদা এখন শুধু দেশেই নয়, পৌঁছে গেছে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বাজারেও।
প্রতিদিন সকাল হতেই উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে শত শত কৃষক অটোরিকশা, পিকআপ, ভ্যান ও ট্রাকে করে কাঁঠাল নিয়ে হাজির হন জৈনা বাজারে। মহাসড়কের পাশে সারি সারি গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য। এই হাটে পাইকার, আড়তদার, শ্রমিক মিলিয়ে প্রতিদিন কাজ করেন কয়েক শ মানুষ। এতে যেমন জমজমাট হয়ে ওঠে হাট, তেমনি মুখর হয়ে ওঠে স্থানীয় অর্থনীতি।
জৈনা বাজারের আড়তদার আব্দুল বারী জানান, ‘এই হাটে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই শ মানুষের কর্মসংস্থান হয়। চার মাস ধরে চলে কাঁঠাল ওঠানামার কাজ। শুধু স্থানীয় কৃষক না, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকেও কাঁঠাল আসে এই হাটে।’
প্রবীণ আড়তদার ইসলাম উদ্দিন মেম্বার বলেন, ‘আমি ১৯৮৫ সাল থেকে এই হাটে আড়তদারি করছি। কাঁঠালের সিজনে এখানে এমন কোনো দিন যায় না যেদিন পাইকার আসে না। কুষ্টিয়া, রাজশাহী, যশোর এমনকি কক্সবাজার থেকেও লোক আসে।’
কক্সবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী আশরাফ বলেন, ‘৪০ বছর ধরে এখান থেকেই কাঁঠাল কিনছি। দাম তুলনায় কম, কাঁঠালের মান ভালো, তবে খাজনা একটু বেশি। প্রতিটি কাঁঠালের পেছনে লেবার ও খাজনা বাবদ গুনতে হয় প্রায় ৭ টাকা।’
শ্রীপুর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা সুমাইয়া সুলতানা বলেন, ‘শ্রীপুরের কাঁঠালের কদর এখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। আমরা বাগানমালিকদের আধুনিক প্রশিক্ষণ দিয়ে কাঁঠালের মানোন্নয়ন ও সংরক্ষণে সহায়তা করছি। ফলে কাঁঠালের বহুমুখী ব্যবহার ও রপ্তানি বাড়ছে।’
জানা গেছে, শ্রীপুর উপজেলায় প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে প্রতিবছর প্রায় ৬২ হাজার মেট্রিক টন কাঁঠাল উৎপাদিত হয়। এর বেশিরভাগ অংশই বিপণন হয় জৈনা বাজারের মাধ্যমে।
এই হাট শুধু কাঁঠাল বিক্রির নয়, এটি এখন শ্রীপুরবাসীর জন্য গর্বের প্রতীক। দেশের সর্ববৃহৎ কাঁঠালের পাইকারি হাট হয়ে উঠেছে একটি কৃষিভিত্তিক অর্থনৈতিক কেন্দ্র। স্থানীয়দের মতে, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই হাট আন্তর্জাতিক মানের একটি কৃষিপণ্য রপ্তানিকেন্দ্রে রূপ নিতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।