মুনজের আহমদ চৌধুরী : জীবিকার খোঁজে সৌদি আরব পাড়ি জমানো দুই লাখের বেশি বাংলাদেশি প্রবাসীরা নানামুখী সংকটে কঠিন সময় পার করছেন। বিশেষ করে সম্প্রতি দেশ থেকে আসা প্রবাসীরা বিপাকে পড়েছেন। অনেকের ইকামার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই বসবাস ও লুকিয়ে কাজ করছেন। কেউ বা ইকামার মেয়াদ বাড়াতে গিয়ে পড়ছেন স্বদেশী দালালের খপ্পরে।
সৌদি আরবের মক্কায় কয়েকজন বাংলাদেশি প্রবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশিদের বেশিরভাগ সারা মাস কাজ করে নিজের থাকা ও খাওয়ার খরচটুকু বাড়ে সব টাকা দেশে পাঠান। কয়েক লাখ টাকা খরচ করে সর্বনিম্ন তিন থেকে ছয় মাসের ইকামা নিয়ে সৌদি আরব এসে পড়ছেন সম্প্রতি আসা প্রবাসীরা। বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশির ইকামার মেয়াদ না থাকায় বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই বসবাস ও লুকিয়ে কাজ করছেন তারা। এর মধ্যে সৌদি আরবের পুলিশ প্রতিনিয়ত রীতিমত চেকপোস্ট বসিয়ে ইকামা চেক করছে। ধরা পড়লেই জেল ও দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। অনেকে ইকামার মেয়াদ বাড়াতে গিয়ে স্বদেশী দালালের খপ্পরেও পড়ছেন। মধ্যস্বত্বভোগীরা নিয়ে যাচ্ছে তাদের কষ্টার্জিত আয়ের বড় অংশ।
কক্সবাজারের মক্কা প্রবাসী আলী হোসাইন বলেন, নতুন যারা আসতেছে তাদের ৮০ ভাগ বিপাকে পড়ছে। আগের মতো কাজ নেই, বেতনও কম। অর্ধেকের মতো মানুষ কাজ পাচ্ছে না। নির্মাণ শ্রমিকদের কাজ করতে হয় ১২ ঘণ্টার মতো।
তিনি আরও বলেন, দালালের মাধ্যমে যারা আসছে তারা বিপদে পড়ছে বেশি। ইকামার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে মেয়াদ বাড়ানোর সময় টাকা দিতে হয়। অনেক সময় দালালরা মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেয়। কাজ একটা দেওয়ার কথা বলে দেশ থেকে নিয়ে আসে কিন্তু সৌদি আরব আসার পর অন্য কাজ দেয়। চার-পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে আসার পর আর দালালের খোঁজ পাওয়া যায় না বেশিরভাগ সময়।
কক্সবাজারের আরেক বাসিন্দা জামাল হোসেন বলেন, আমি বাংলাদেশির প্রতি বলতে চাই, দালালের মাধ্যমে বিদেশে আসবেন না। এখানে অনেক লোক না খেয়ে আছে। আমি যেখানে থাকি সেখানেই এক ব্যক্তি আছেন। অনেক দিন ধরে কাজ পাচ্ছেন না। যারাই আসতে চান তারা দেখে শুনে আসেন।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তাজুল ইসলাম বলেন, নতুনদের নিয়ে আসার পর কফিলের কোনও খোঁজ থাকে না। যারা আসে তাদের কোনও মূল্য দেয় না দালাল ও কফিল। কাজের কোনও নিশ্চয়তা নেই। ৩-৪ মাস বসে থাকতে হয়। এদের দেখাশোনার কেউ নেই। আমাদের দূতাবাসও কোনও খোঁজ-খবর নেয় না।
তিনি আরও বলেন, দেশ থেকে টাকা উপার্জনের জন্য প্রতিদিন সৌদি আরব লোক পাঠানো হচ্ছে। অথচ এখানে দুই-তিন হাজার টাকার জন্য কারও জীবন ধ্বংস করে দিতে পরোয়া করে না দালালরা। লোক পাঠানোর আগে ভালো করে খবর নেন। এটি দেশের জন্য উপকারে আসবে, এখানকার প্রবাসীদেরও উপকার হবে।
তাজুল ইসলাম জানান, তিনি চার মাস এক জায়গায় করেছেন। কোনও টাকা-পয়সা পান নাই। তার ডায়বেটিস রয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য গেলে তারে আটকে দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। শেষে পরিচিতদের কাছ থেকে ধার-দেনা করে কিছু টাকা জোগাড় করে দিয়ে আসতে হয়েছে।
রেজওয়ান আহমেদ নামের মক্কা প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ী জানান, আমরা দেখতে পাচ্ছি সৌদি আরবে নতুন যারা আসতেছে তাদের ইকামার মেয়াদ তিন থেকে ছয় মাস থাকছে। কিন্তু ছয় মাসের মধ্যে তারা কোথাও স্থায়ী হতে পারছে না। ফলে তারা না পারছে দেশে টাকা পাঠাতে, না পারছে নিজে এখানে দিনযাপন করতে। এটা এড়াতে হলে কোম্পানির কাজ শিখে, ভালো ভিসা দেখে আসেন।
সিলেটভিত্তিক লতিফ ট্রাভেলসের মালিক জহিরুল কবির চৌধুরী শিরু বলেন, যারা দেশ থেকে আসছেন তাদের আসার আগে অবশ্যই জেনে নেওয়া উচিত যে কোম্পানির কাজে আসছেন সেখানে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান আছে কিনা। বেতন, থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা কেমন হতে তা জেনে নিতে হবে। এগুলো একেবারে নিশ্চিত হয়ে আসা উচিত। এসব না জেনে যারা আসতেছে তারা কাজ পাচ্ছে না। আমি মনে করি, কোনও নির্দিষ্ট কাজের দক্ষতা না থাকলে সৌদি আরব না আসাই ভালো।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।