দেশের নারী ফুটবলে কোচ-খেলোয়াড় দ্বন্দ্বের সংকট কাটছেই না। কোচ পিটার বাটলারের অধীনে অনুশীলন না করার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন ১৮ ফুটবলার। বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়ালের অনুরোধ সত্ত্বেও তাদের সিদ্ধান্তের কোনো পরিবর্তন হয়নি।
বাফুফে সভাপতি তাবিথ প্রায় এক মাস পর গত বুধবার দেশে ফিরেছেন। এর পর থেকেই নারী ফুটবলের সংকট উত্তরণে কাজ শুরু করেন তিনি। তাবিথ নারী ফুটবলারদের সঙ্গে সংকট সমাধানে আলোচনা করেন। খেলোয়াড়দের অভাব-অভিযোগ সব শুনে খেলোয়াড়দের সম্মান-মর্যাদা নিশ্চিতের পরেও, পিটারের অধীনেই আজ থেকে অনুশীলন করার নির্দেশনাও দিয়েছিলেন ফেডারেশনের নতুন সভাপতি। বাফুফে কর্মকর্তাদের মারফতে এমনটাই জানা গেছে।
শুক্রবার বাংলাদেশ নারী দলের অনুশীলন ছিল না। বাফুফে কর্তাদের অনুমান ছিল– সভাপতির আশ্বাস ও নির্দেশনায় শুক্রবার সারাদিন চিন্তা ভাবনা করে ১৮ জন ফুটবলারের মধ্যে অন্তত কয়েকজন গতকালের অনুশীলনে যাবেন। সাবিনাদের একাত্মতা তাদের অনুমানকে ভুল প্রমাণ করেছে। সভাপতির অনুরোধও ফুটবলারদের অবস্থান টলাতে পারেনি। পিটার বাটলারকে বয়কট করা ১৮ জনের একজনও অনুশীলনে যাননি। সিনিয়র দলে থাকা অবশিষ্ট ১২ জন এবং অনূর্ধ্ব-২০ দলের ফুটবলারদের নিয়ে আজও অনুশীলন করেছেন ব্রিটিশ কোচ পিটার বাটলার।
আজ অনুশীলনের উপস্থিতির ওপর ফেডারেশন একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার চেষ্টা করছিল। ১৮ জনই অনড় থাকায় এখন বাফুফের জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়াও অনেকটা কঠিন। আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা ৪-৫ জন শাস্তি পেলে বাকিরাও পিটারের অধীনে অনুশীলন করবেন না, তারাও ক্যাম্প ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছেন আগেই। এই ১৮ জনের মধ্যে ১৬ জন অক্টোবর সাফ চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য। বাফুফে পিটারের পক্ষে থাকলে এবং ১৮ ফুটবলার বর্জন করলে নারী ফুটবল দল বড় সংকটের মধ্যে পড়বে। ডিজি বাফুফেতে এসে শৃঙ্খলার নির্দেশনা দিলেও বিকেএসপির তিন শিক্ষার্থী সাবিনাদের সঙ্গেই আছেন এবং জাপানিজ বংশোদ্ভূত সুমাইয়ার অভিভাবকের মাধ্যমে সাবিনাদের সঙ্গ ত্যাগ করতে বললেও করেননি।
১৮ জন নারী ফুটবলার বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল বরাবর ২৯ জানুয়ারি একটি চিঠি দিয়েছিলেন কোচকে অভিযুক্ত করে। ৩০ জানুয়ারি তারা গণমাধ্যমে বিষয়টি উত্থাপন করেন। এর ঘণ্টা খানেক পরই বাফুফে সাত সদস্যের বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে। গত বৃহস্পতিবার সভাপতি বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করেছিল সেই কমিটি। যেখানে খেলোয়াড়দের শৃঙ্খলা ভঙ্গই বড় অংশ হিসেবে আছে। কোচও খেলোয়াড়দের সমান শৃঙ্খলা ভেঙেছেন। বয়স-অভিজ্ঞতা ও পেশাদারিত্ব বিবেচনায় সেটা আরও গুরুতর হলেও বাফুফের কাছে যেন লঘু। খেলোয়াড়-কোচ কোনো পক্ষের ওপরই নিয়ন্ত্রণ নেই নারী উইংয়ের। নারী উইংয়ের ব্যর্থতায় মূলত এই সংকট ঘনীভূত হয়। সেই নারী উইং নিয়ে প্রতিবেদনে নেই শাস্তিমূলক কোনো সুপারিশও।
খেলোয়াড়-কোচ দ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ নেপালের কাঠমান্ডুতে সাফ টুর্নামেন্ট চলাকালে। কোচ ‘সিনিয়র খেলোয়াড়দের পছন্দ করেন না’ বলে মনিকা চাকমা পাকিস্তান ম্যাচ ড্রয়ের পর মন্তব্য করেছিলেন। এরপর অভিজ্ঞ ও পেশাদার কোচ হয়েও বাটলার ‘ইংল্যান্ডে হলে এই খেলোয়াড়দের বহিষ্কার করতেন’ বলে ছোঁড়েন পাল্টা মন্তব্য। দলকে ইন্ধন দেওয়ার জন্য সাবেক কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের দিকেও ইঙ্গিত দেন এই কোচ। এত সংকটের মধ্যেও সিনিয়র ফুটবলাররা মাঠে নিজেদের সেরাটা দিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। মেয়েদের অভিযোগ সমাধানের আগেই বাফুফে সেই পিটারকে দুই বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়ায় তৈরি হয় এই সংকট।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।