জুমবাংলা ডেস্ক : অন্যান্য সব পাখির মতো কাঠঠোকরাদেরও রয়েছে কিছু বিশেষত্ব। সেই বিশেষত্ত্বগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো তাদের কাঠ ঠোকরানোর স্বভাব। কিন্তু কখনো ভেবে দেখেছেন কি, কাঠঠোকরা পাখিরা কেন কাঠ ঠোকরায়?
কাঠঠোকরা মোটেই খামোখা কাঠ ঠোকরায় না। অনেকেই মনে করেন, ক্রমশ লম্বা হতে থাকা ঠোঁট ছোট রাখতেই হয়তোবা তারা নিজেদের ঠোঁটকে সর্বশক্তি দিয়ে কাঠের সঙ্গে আঘাত করতে থাকে। কিন্তু এ ধারণাটি ভুল। কাঠঠোকরাদের কাঠ ঠোকরানোর পেছনে আরও গভীর কিছু কারণ রয়েছে। এই পাখিদের স্বাভাবিক জীবন-যাপনের জন্য কাঠ ঠোকরানোটা যে বেশ দরকার! কাঠঠোকরাদের কাঠ ঠোকরানোর মোট ৬টি কারণ চিহ্নিত হয়েছে –
১। কাঠ ঠুকরিয়ে খাবার খোঁজে কাঠঠোকরা
পৃথিবীর অন্য সব প্রাণির মতো কাঠঠোকরাদেরও খাবার খোঁজার নিজস্ব পন্থা রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, পালকবিহীন ঈগলরা অনেক উঁচুতে উড়লেও খাবার ধরে পানিতে এসে। পানির পৃষ্ঠে এসে ধারালো নখরযুক্ত পা ডুবিয়ে দেয় পানির ভেতরে, তারপর মাছ শিকার করে উড়ে যায়। যাই হোক, মাছরাঙাদের কৌশলটা ভিন্ন। যখন তারা কাঠের মধ্যে পিঁপড়া কিংবা অন্য কোনো পোকামাকড়ের লার্ভা দেখতে পায়, সেগুলো ধরার জন্য তারা কাঠ ঠোকরানো শুরু করে। একবার কাঠের গায়ে ছিদ্র তৈরি করতে পারলেই হলো; যত গভীরেই থাকুক না কেন, তাদের লম্বা ঠোঁটের কবল থেকে নিস্তার পায় না কোনো পোকা।
২। একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে কাঠ ঠোকরায় তারা
পাখি মাত্রই আমরা ধরে নেই তাদের মিষ্টি মধুর কণ্ঠস্বর থাকবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত কাঠঠোকরাদের কণ্ঠ নেই। এ পাখির গান কখনো আপনি শুনবেন না। তাই বাধ্য হয়েই একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে তাদের কাঠ ঠোকরাতে হয়। কাঠ ঠুকরিয়ে তারা একে অপরকে শত্রুর উপস্থিতি সম্পর্কে সাবধান করে দেয়।
৩। বাসা তৈরি করতেও কাঠ ঠোকরাতে হয় তাদের
অধিকাংশ পাখি নিজেদের বাসা তৈরির জন্য খড়কুটা ও ঘাস, লতা-পাতা সংগ্রহ করে। কিন্তু কাঠঠোকরা এর ব্যতিক্রম। বাসা তৈরির জন্য তারা নিজেদের বিশেষ কাঠ ঠোকরানোর ক্ষমতার ওপরই নির্ভর করে থাকে। কাঠের গায়ে বিভিন্ন আকারের গর্ত তৈরি করে কাঠঠোকরারা তাদের বাসার কাঠামো প্রস্তুত করে। মজার তথ্য হলো, যদি কোনো কাঠঠোকরা গাছের ওপর অনেক বেশি ছোট ছোট গর্ত তৈরি করে, তবে ধরে নিতে হবে কাঠঠোকরার দল ওই এলাকায় খাবারের সন্ধানে নেমেছে। আর যদি একটি গাছে একটি বড় গর্ত খুঁড়ে থাকে, তবে বুঝতে হবে তারা বাসা বানাতে চাইছে।
৪। কাঠঠোকরারা কাঠ ঠোকরায় কারণ তারা কাঠ ঠোকরাতে পারে!
কাঠঠোকরাদের মতো কাঠ ঠোকরানোর ক্ষমতা খুব বেশি পাখির নেই। অন্যান্য পাখিদের তুলনায় কাঠঠোকরাদের ঠোঁট ও ঘাড় অনেক শক্ত, যার কারণে তারা কোনো রকম আঘাত ছাড়াই ক্রমাগত কাঠ ঠুকরে যেতে পারে। একটি কাঠঠোকরা দিনে গড়ে প্রায় ১০ হাজার বার কাঠে ঠোকর দিতে পারে। তাদের ঠোঁটে আছে বিশেষ ধরণের কম্প শোষনকারী গ্রন্থি, যা কোনো প্রকার আলোড়ন ছাড়াই তাদের অনবরত কাঠ ঠুকরে যেতে সাহায্য করে।
৫। কাঠ ঠুকরিয়ে নিজেদের অঞ্চলের নিশানা রাখে কাঠঠোকরারা!
প্রত্যেকটি প্রাণী; এমনকি মানুষের মধ্যেও নিজের এলাকা চিহ্নিত করে রাখার প্রবণতা রয়েছে। আমরা বাড়ির চারদিক ঘিরে দেয়াল বা বেড়া তৈরি করে বাড়ির নিশানা ঠিক রাখি। কুকুররা এলাকার চারপাশে মূত্রত্যাগ করে অন্য কুকুরদের জানিয়ে দেয়, এই এলাকা আমার! তেমনি কাঠঠোকরারাও কাঠ ঠুকরে নিজেদের এলাকার জানান দেয়। তারা উচ্চশব্দে কাঠ ঠুকরে আশেপাশের পাখিদের জানিয়ে দেয়, যে সেই ওই এলাকার কর্তৃত্বে আছে।
৬। কাঠ ঠুকরিয়ে গাছের ক্ষতি করে কাঠঠোকরারা!
হ্যাঁ, কাঠঠোকরারা নিজের অজান্তেই কাঠ ঠুকরে গাছের বা কাঠের ক্ষতি সাধন করে। যদিও তারা এটা করে নিজেদের বেঁচে থাকার তাগিদে, তবুও তাদের এ কাজ দ্বারা যথেষ্ট পরিমাণ ক্ষতি সাধিত হয়। কানাডিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন (সিবিসি) এর খবর অনুযায়ী, বিখ্যাত প্রিন্স জর্জ হোটেলের কাঠের অবকাঠামোগুলোকে কাঠঠোকরারা ঠুকরিয়ে হাজার হাজার ডলারের ক্ষতি সাধন করেছে। একই অবস্থা হয়েছে কোর্টইয়ার্ড ম্যারিয়ট হোটেলেরও।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।