কানাডার ভিসার প্রলোভন দেখিয়ে যশোরের চার তরুণ-যুবকের কাছ থেকে ৫৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের অভিযোগ, টাকা নেওয়ার পর ওই ব্যক্তি স্ত্রীকে নিয়ে যশোর থেকে পালিয়ে নাটোরে গিয়ে নতুন করে অফিস খুলেছেন। এখন তিনি টাকাও ফেরত দিচ্ছেন না, ভিসাও দিচ্ছেন না। এ ঘটনায় যশোর ও নাটোর থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম মিজানুর রহমান। তিনি যশোর সদর উপজেলার চোরমারা দীঘিরপাড় এলাকার বাসিন্দা। অন্যদিকে অভিযোগকারী ব্যক্তিরা হলেন বাঘারপাড়া উপজেলার হাবুল্লা গ্রামের নাজমুল হকের ছেলে নাঈমুল হক (২৩), চৌগাছা উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের সাদিক আলীর ছেলে মোহাম্মদ রাসেল কবির (৩৪), সদর উপজেলার বাবলুর রহমান (৩২) এবং মনিরামপুর উপজেলার মেহেদী হাসান (২২)।
যশোর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের টেলি কমিউনিকেশন বিভাগ থেকে ডিপ্লোমা পাস করেছেন নাঈমুল। উন্নত জীবনের আশায় কানাডায় পাড়ি জমাতে চেয়েছিলেন। তাঁর দাবি, ভিসা–প্রক্রিয়ার জন্য মায়ের জমি বিক্রি ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা থেকে নেওয়া ঋণের মোট ১৫ লাখ টাকা তুলে দেন মিজানুরের হাতে। মিজানুর সেই টাকা নিয়ে যশোরের কার্যালয় গুটিয়ে নাটোরে গিয়ে নতুন কার্যালয় খুলেছেন। এখন পাসপোর্ট-ভিসাও দিচ্ছেন না, টাকাও ফেরত দিচ্ছেন না। এ ঘটনায় গত শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) যশোরের কোতোয়ালি থানায় একটি লিখিত একটি অভিযোগ দিয়েছেন তাঁর ভগ্নিপতি শেখ হাসানুর রহমান।
মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা যশোরের কোতোয়ালি থানায় উপপরিদর্শক (এসআই) তাহমুদুল ইসলাম বলেন, রোববার রাতে মামলাটির কাগজ হাতে পেয়েছেন। শিগগিরই এ বিষয়ে তদন্ত শুরু হবে।
অভিযোগকারীদের আরেকজন বাবলুর রহমানও মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। ১৮ সেপ্টেম্বর নাটোর সদর থানায় লিখিত অভিযোগটি দাখিল করেন তিনি। ওই অভিযোগে বলা হয়েছে, ‘বৈধ পথে শ্রমিক ভিসায় কানাডায় পাঠাতে আমাদের চারজনের কাছ থেকে মোট ৫৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে যশোর থেকে পালিয়ে নাটোর সদর উপজেলার বড় হরিশপুর এলাকায় ইউরো ভিসা হেল্প সেন্টার বিডি নামের একটি নতুন অফিস খুলেছেন মিজানুর রহমান। ওই টাকা ফেরত চাইলে আমাদের প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন। ওই টাকা উদ্ধারসহ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করছি।’
এ অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা নাটোর থানার এসআই জামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমি তদন্ত করে দেখেছি, মিজানুর রহমান দেশের বিভিন্ন জেলায় গিয়ে বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর নামে অফিস খোলেন। পরে ২০ থেকে ৫০ লাখ টাকা করে হাতিয়ে লাপাত্তা হয়ে যান। কিছুদিন পর আরেক জেলায় গিয়ে নতুন অফিস খোলেন। যশোরেও তিনি একই কাজ করেছেন। নাটোরের একটি বাড়িতে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে তিনি অফিস করেছেন। ওই বাড়ির মালিকের সঙ্গে কথা বলে আমরা জানতে পেরেছি, দিনের বেলায় অফিসটি বন্ধ থাকে। রাতে দুই থেকে তিন ঘণ্টার মতো অফিসটি খোলা থাকে।’
জামাল উদ্দিন আরও বলেন, মিজানুর বর্তমানে গা ঢাকা দিয়েছেন। তাঁর স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি (বৃষ্টি) জানান, কানাডায় পাঠানোর জন্য ৪ জনের কাছ থেকে যে টাকা নেওয়া হয়েছে, এর মধ্যে ২০ লাখ টাকার চেক দেওয়া হয়েছে।
নাটোর থানা-পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শুধু এই চারজন নন, এর আগেও শ্রমিক ভিসায় পর্তুগালসহ বিভিন্ন দেশে পাঠানোর কথা বলে আরও ৪০ জনের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন মিজানুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী বৃষ্টি বেগম।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে মিজানুর রহমানের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করা হয়। পরে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে। তবে এক স্বজন জানিয়েছেন, মিজানুর রহমানের পরিবারের কেউ এখন আর যশোরে থাকেন না। এ কারণে পরিবারের কারও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।