নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: গাজীপুর-৪ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য তাজউদ্দীন আহমদের কন্যা সিমিন হোসেন রিমি। এবারও তিনি পেয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন সিমিনের ফুপাতো ভাই শিল্পপতি ও কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের উপদেষ্টা আলম আহমেদ। তবে, দলের মনোনয়ন না পেয়ে করছেন স্বতন্ত্র নির্বাচন। মানে মামাতো বোনের বিপক্ষে লড়বেন তিনি।
উভয়ে এলাকায় বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে গণসংযোগ ও প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। আলোচনা ও জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা তাজউদ্দীন আহমদের ছেলে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমদ সোহেল তাজ এবার প্রার্থী হবেন না বলে আগেই জানিয়েছেন।
তাজ পরিবারে মনোনয়ন নিয়ে প্রতিযোগিতা ১৯৯১ সাল থেকে। সে বছর আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদের সহধর্মিণী সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন। তাঁকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বিএনপির প্রয়াত নেতা ব্রিগে. জেনারেল আ স ম হান্নান শাহ। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জোহরা তাজউদ্দীনের পরিবর্তে মনোনয়ন লাভ করেন তাজউদ্দীন আহমদের ছোট ভাই প্রয়াত আফসার উদ্দীন আহমেদ খান। তিনি আ স ম হান্নান শাহকে হারিয়ে জয়লাভ করে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
২০০১ সালের নির্বাচনে আফসার উদ্দীন খানের সঙ্গে দলীয় মনোনয়ন লাভের জন্য রাজনীতির মাঠে একেবারেই নতুন মুখ আসেন তাজউদ্দীন আহমদের ছেলে তানজিম আহমদ সোহেল তাজ। মনোনয়ন লাভের লড়াইয়ে চাচাকে হারিয়ে দেন সোহেল তাজ। সেই নির্বাচনে সোহেল তাজ আ স ম হান্নান শাহকেও হারিয়ে এমপি নির্বাচিত হন। পরে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন। সাড়ে তিন বছরের মাথায় সোহেল তাজ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য পদ ত্যাগ করেন। পরে ২০১২ সালে এখানে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। উপনির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে সোহেল তাজের বড় বোন সিমিন হোসেন রিমিকে বেছে নেয় আওয়ামী লীগ। উপনির্বাচনে সিমিন হোসেন রিমি চাচা আফসার উদ্দীন আহমেদ খানকে হারিয়ে জয়লাভ করেন। পরে ২০১৪ সালের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে সিমিন হোসেন রিমি বিজয়ী হন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি প্রয়াত নেতা আ স ম হান্নান শাহর ছোট ছেলে শাহ রিয়াজুল হান্নানকে হারিয়ে সিমিন হোসেন রিমি আবার বিজয়ী হন।
আসন্ন নির্বাচনে মামাতো-ফুপাতো ভাইবোন এখন এলাকায় ব্যাপকভাবে আলোচিত। তাঁরা উভয়ে নিজেদের এলাকার ও মানুষের উন্নয়নের জন্য যোগ্য এবং উপযুক্ত বলে মনে করেন।
আলম আহমেদ বলেন, ‘আমি প্রায় এক যুগ ধরে কাপাসিয়ার প্রতিটি এলাকায়, গ্রামের আনাচে-কানাচে প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগে অংশ গ্রহণ করেছি। সব জাতীয় দিবসে এবং আওয়ামী লীগের সব দলীয় কর্মসূচি, জাতীয় শোক দিবস, জাতির পিতা ও বঙ্গমাতার জন্মবার্ষিকী, শেখ রাসেল, শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী, বঙ্গবন্ধু ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসসহ সব দিবস কৃষক লীগের পক্ষে পালন করেছি। বিভিন্ন দিবসে আমি কাপাসিয়ায় হাজারো মানুষের অংশগ্রহণে গণভোজ, আলোচনা ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে থাকি। কাপাসিয়ার মানুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে আমাকে যোগ্য বলে মনে করে।’
সিমিন হোসেন বলেন, ‘আমি কাপাসিয়ার মানুষের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করেছি। বাংলাদেশে একমাত্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হিসেবে কাপাসিয়া স্বাস্থ্যসেবায় ব্যাপক সফলতা অর্জন করে। গত সাত বছর যাবৎ মাতৃমৃত্যু শূন্য রয়েছে। আমি কাপাসিয়ায় ডায়াবেটিক হাসপাতাল স্থাপন করেছি। কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, নার্সিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। অত্যন্ত পল্লি এলাকায় পাকা সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। করোনাকালে আমি মানুষের পাশে থেকেছি। করোনার কারণে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স লকডাউন হয়ে গেলে বেসরকারি হাসপাতালে নারী ও শিশুদের বিনা মূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। এমনকি শতাধিক নারীর সিজারের অপারেশন বিনা খরচে করার ব্যবস্থা করেছি। কাপাসিয়ার শতভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে। মানুষের সামাজিক নিরাপত্তা, শিক্ষার প্রসারে বই পড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হচ্ছে। আমি বিশ্বাস করি, দলীয় নেতা-কর্মী এবং কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ আমার এসব কর্ম অবশ্যই মূল্যায়ন করবেন। আমি বিশ্বাস করি, মানুষের ভালোবাসা আমার বিজয়ের চাবিকাঠি।’
গাজীপুর-৪ কাপাসিয়া আসনে আটজন মনোনয়ন সংগ্রহ ও জমা দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সিমিন হোসেন রিমি। আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত ও কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের উপদেষ্টা আলম আহমেদ। জাকের পার্টির জুয়েল কবির, স্বতন্ত্র প্রার্থী সামসুল হক, জাতীয় পার্টির সামসুদ্দিন খান, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির মাসুদ চৌধুরী, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ফ্রন্টের সারোয়ার ই কায়নাত এবং বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টির আব্দুর রউফ খান।
এই আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ১০ হাজার ৭৪৭ জন। পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫৪ হাজার ৮৭১ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৫৫ হাজার ৮৭৬ জন। মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১২২টি, বুথ ৬০৪টি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।